দেশে ১১ বছর ধরে মিথ্যাচারের রাজনীতি চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। তিনি বলেন, ইতিহাসকে বিকৃত করে মিথ্যা বলার একটা সংস্কৃতি দেশে গড়ে উঠে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ক্ষমতাসীনরা বার বার মিথ্যা কথাগুলোকে সত্য বলে প্রমাণিত করার চেষ্টা করছেন সেই গোয়েবেলসের মতো, প্রপোগান্ডার মেশিন এমনভাবে চালিয়েছে মনে হয় তারা যা বলছেন তা সত্য কথা। আসলে সেগুলো সত্য কথা নয়। গতকাল শনিবার বিকালে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনার শুরুর প্রারম্ভে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার প্রকাশনায় ‘ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর : সিপাহী-জনতার বিপ্লব ও বাংলাদেশের নবজন্ম’ ই-বুকের উদ্বোধন করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ক্ষমতাসীনরা বলে যে, শহীদ জিয়া মার্শাল জারি করেছে, এই মার্শাল জারি করেছেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, বলে যে, তিনি (জিয়াউর রহমান) সরকার অপসারণ করে ক্ষমতায় এসছেন- তিনি মোটেও কোনো সরকারকে অপসারণ করে ক্ষমতায় আসেননি, তিনি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, তিনি মোটেও সংসদ ভাঙেননি, খালেদ মোশাররফ সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। এসব কথাগুলো বাংলাদেশের মানুষকে, আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। যত মিথ্যাচার করা হোক না কেনো- শহীদ জিয়া শুধু স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে নয়, ৭ নভেম্বরের পরে তার জাতির গঠনের যে ভূমিকা-এই দুইটি কারণে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে সমৃদ্ধির যে কথা বলা হচ্ছে-এটা শুধু মানুষকে বোকা বানানো ছাড়া আর কিছু নয়। বাংলাদেশের অর্থনীতি আজকে সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায়। শুধু তাই নয়, দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে গেছে এবং সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের স্বাধীনতা আজকে বিপন্ন, বাংলাদেশের মানুষের অধিকারকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে, অধিকার নেই বললেই চলে। আজকে ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে। তাদের (ক্ষমতাসীন) লক্ষ্য শহীদ জিয়াকে। তারা ভেবেছিলো যে, জিয়াউর রহমানকে হত্যা করবার পরে এই জাতীয়তাবাদের যে আদর্শ, বাংলাদেশের স্বাধীন-সার্বভ্মৌত্বে যে পরিচিতি সেই পরিচিতি ধবংস করে দিয়ে তারা তাদের মতো করে আবার সেই ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত যে শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং তারা চেষ্টা করছে। বিএনপির এখন মূল দায়িত্ব ৭ নভেম্বরের যে চেতনা, স্বাধীনতা-সার্বভৌত্বকে সুসংহত করবার যে চেতনা, গণতন্ত্রকে ফিরে পবার যে চেতনা, সেই চেতনাকে সমুন্নত রাখবার জন্য সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে এবং তার নেতৃত্ব অবশ্যই বিএনপিকে দিতে হবে। ৭ নভেম্বর উপলক্ষে বিভিন্ন জেলায় দলের অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে পুলিশি বাঁধা প্রদান ও নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, তারা ৭ নভেম্বরকে ভয় পায়, তারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে ভয় পায়, বিএনপিকে ভয় পায়। তাই যখনই বিএনপি সংগঠিত হয়, জনগণের পাশে এসে দাঁড়ায় তখন সেটাকে নস্যাৎ করার জন্যে বিভিন্নভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন করে ভয় সৃষ্টি করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করতে চায়। দেশের জনগণ কখনোই পরাধীনতাকে মেনে নেয়নি, কখনো মেনে নেবে না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জনগণ এদেশের মালিক, সেই মালিকানা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং সেটিা দিতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে,আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সুসংহত করতে হবে, আমাদের একটা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি থাকতে হবে, আমাদের অর্থনীতিকে মজবুত করতে হবে। সেটা করতে হলে আজকে যারা অতীতেও গণতন্ত্র হত্যাকারী, অর্থনীতি ধবংসকারী তাদের দিয়ে এটা সম্ভব হবে না। সেজন্য শহীদ জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ৭ নভেম্বরের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য সেই দায়িত্ব নিতে হবে।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও দলের প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মইন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন