মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চুুরির মোবাইল যায় ভারতে

ছিনতাইকারীদের কুরিয়ার নেটওয়ার্ক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

রাজধানী থেকে চুরি ও ছিনতাই করা ল্যাপটপ-মোবাইল বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠায় একটি চক্র। ডিভাইসগুলো বন্ধ করে দেশের প্রত্যন্ত জেলা শহরে নিজেদের সিন্ডিকেটের কাছে বিক্রির জন্য পাঠায় চক্রটি। এমনকি সফটওয়্যারের মাধ্যমে মাত্র কয়েক মিনিটে বদলে ফেলে আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর। এছাড়া নানা কৌশলে ভারতেও বিক্রির জন্য পাঠানো হয় দামি মোবাইল। এই চক্রের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং জিজ্ঞাসাবাদে এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। একটি দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোবাইল ও ল্যাপটপ চোর সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং তাদের বিজ্ঞাসাবাদে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে কামরুল ইসলাম হাওলাদার (৪৩) ও সুমন হাসান শাওন (৩৪) অন্যতম।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ১৩৪টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে। ডিএমপির সদর দফতরের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারিতে ১৯টি, ফেব্রুয়ারিতে ১৫টি, মার্চে ১৩টি, এপ্রিলে ৫টি, মে মাসে ৮টি, জুনে ১৩টি, জুলাইয়ে ২২টি, আগস্টে ১৩টি এবং সেপ্টেম্বরে ২৬টি ছিনতাই বা দস্যুতার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে ছিনতাই করা ডিভাইস বিক্রি ও বহন করা ছিনতাইকারীদের জন্য ঝুঁকি। কারণ এখানে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চোরাই ডিভাইস উদ্ধারের জন্য প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত করে। তাই ছিনতাইকারীরা ডিভাইসটি বন্ধ করে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দেয় ঢাকার বাইরে। সেখানে কমদামে বিক্রি করে। এসব ডিভাইস বিক্রি করার জন্য তাদের নির্দিষ্ট ক্রেতা রয়েছে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, মিরপুর, এলিফ্যান্ট রোড, গুলশান, উত্তরা ও মিরপুরে চক্রের ভ্রাম্যমাণ সদস্য রয়েছে। ছিনতাইকারীরা কোনও ডিভাইস চুরি বা ছিনতাই করতে পারলেই এসব ভ্রাম্যমাণ ক্রেতাদের জানিয়ে দেয়। তারা অল্প টাকায় ডিভাইসগুলো কিনে নেয়। ভ্রাম্যমাণ ক্রেতারা আবার চুরির মাল ক্রয়ের এজেন্টদের কাছে বিক্রি করে। যে চক্রের সঙ্গে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোর বিভিন্ন দোকানের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এই চক্রটি মোবাইল ও ল্যাপটপ কিনে কুরিয়ার করে ওইসব দোকানে পাঠায়। গ্রেফতার এড়াতে দোকানেই ডিভাইসের আইএমইআই নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য পরিবর্তন করা হয়।

ডিএমপির তিজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশীদ জানান, প্রতিটি ঘটনা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হয়। ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের সঙ্গে সঙ্গে ছিনতাই হওয়া ডিভাইসও উদ্ধার হয়। একটি ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে চোরাই ও ছিনতাই মাল বিক্রির একটি বিশাল সিন্ডিকেটকে গ্রেফতার করেছি। এই সিন্ডিকেট ঢাকার চোরাই ল্যাপটপ অন্য জেলায় কুরিয়ারে পাঠিয়ে বিক্রি করতো। তাদের গ্রেফতার করেছি। একটি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আরও একটি মামলা তদন্ত চলছে।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত মোবাইল চোর সিন্ডিকেটকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, নিয়মিত চোরাই ও ছিনতাই করা মোবাইলসহ ইলেকক্ট্রিক বিভিন্ন ডিভাইস বিক্রি করতো শাওন, রাজীব ও শরীফ। পুরো চক্রটিকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রাজীব ও শাওনের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ডেমরার শরীফ হোসেন মোল্লার কাছ থেকে দুইটি আইফোনসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের ২০টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন উদ্ধার করে পুলিশ। অ্যান্ড্রয়েড দামি ফোন দেশে বিক্রি করা এখন চ্যালেঞ্জিং, তাই দেশের বাইরে পাঠানো হয়। ভারতে দামি আইফোন পাঠানো হয়। সেখানে বিক্রি করে বা ফোন পরিবর্তন করে দেশে এনে বিক্রি করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে কামরুল জানায়, ল্যাপটপ চুরির পর সুমন হাসান শাওন (৩২) নামে অপর এক ব্যক্তির কাছে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে সে। এরপর পুলিশ সুমন হাসান শাওনকেও গ্রেফতার করে। শাওন জানায় ল্যাপটপটি সে মোখলেছুর রহমান নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছে। পুলিশ মোখলেছকেও গ্রেফতার করে। এরপর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। মোখলেছুর রহমান পেশায় একজন ব্যাংকার কিন্তু সে এই চোরাই ও ছিনতাই হওয়া ডিভাইস ক্রয়ের এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। বিভিন্ন এলাকার চোর ও ছিনতাইকারী তার কাছে এসব ডিভাইস বিক্রি করে। সে ডিভাইস ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠায়। ওই সূত্র আরো জানায়, মোখলেছ ছিনতাই করা পণ্য ক্রয় করে ব্যবসা করার কথা স্বীকার করেছে। সে দেশের বিভিন্ন জেলায় মোবাইল ও ল্যাপটপ পাঠাতো, তার প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ারের মাধ্যমে চোরাই ল্যাপটপ, মোবাইল ও প্রজেক্টর পাঠানোর এসএ পরিবহনের রশিদ উদ্ধার হয়। সে ঝিনাইদহ, যশোর, রাজশাহী ও পাবনায় এসব ডিভাইস পাঠাতো। তার কাছ থেকে পাবনার ল্যাপটপ গ্যালারি নামক দোকানের তথ্য নিয়ে পুলিশ পাবনায় অভিযানে যায়। মোখলেছের ঢাকার বাসা থেকে চোরাই ও ছিনতাই করা ছয়টি ল্যাপটপ, একটি প্রজেক্টর, একটি ক্যানন ডিজিটাল প্রিন্টার, সাতটি মোবাইল ফোন, তিনটি আইপ্যাড, হার্ডডিস্ক ২০টি, ল্যাপটপ ব্যাটারি চারটি, ল্যাপটপ টুলবক্স একটি এবং অসংখ্য কুরিয়ারের রশিদ উদ্ধার করা হয়।

মোখলেছুর পুলিশকে জানায়, সে বিভিন্ন সময়ে কুরিয়ারেরর মাধ্যমে পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দুই শতাধিক চোরাই ও ছিনতাই হওয়া ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন বিক্রির জন্য পাঠিয়েছে। এসব ডিভাইস বিক্রির পর মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা লেনদেন করে তারা। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এসি মফিজুর রহমান পলাশ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার চিহিৃত চোরদের তালিকা করে অভিযান অব্যাহত আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন