কার্ত্তিক শেষ প্রায়, বাতাসে পরিলক্ষিত হচ্ছে শীতের আমেজ। শীতকালে মহামারি আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে বলে সতর্কও করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আশঙ্কা করা হচ্ছে করোনা সংক্রমণের সম্ভাব্য দ্বিতীয় ধাক্কা নিয়েও। বাংলাদেশে পুরোপুরি শীত পড়ার আগেই করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে বিশেষ কিছু আগাম প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শীতকালীন খাদ্যাভাস, শরীর চর্চা, ঘুম এবং পরিচ্ছন্নতাসহ ৫টি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
১.খাদ্যভাস : দৈনন্দিন তালিকায় স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিক খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন এবং যথাসম্ভব প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন। শীতে আমাদের দেহ তুলনামূলকভাবে বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খেতে এবং হজম করতে পারে। শীতকালীন শস্য ও শাকসব্জি আমাদের দেহকে উষ্ণ রাখার জন্য আরও দক্ষতার সাথে কাজ করে। ভুট্টা এবং কিনোয়ার মতো শস্য জাতীয় খাবার খান। এগুলো আমাদের দেহে কেবলমাত্র ক্যালোরি এবং ফাইবারই সরবরাহ করে না, পাশাপাশি এগুলোতে জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী খনিজ থাকে, যা আমাদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
শীতের সবজি বিক্রেতাদের পসরাতে মনোহর রঙের মেলা বসে। প্রতিটি রঙ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যৌগের আলাদা আলাদা সেট, যেগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে সহায়তা করে। লাল মানে লাইকোপিন, যা আমাদের জিনগত উপাদানগুলোকে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকেলগুলি থেকে মুক্ত রাখে। সাদা এবং বাদামিতে কুউয়ারসেটিন এবং ক্যাম্পফেরলের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা করোনার বিরুদ্ধে দেহকোষগুলোকে সহায়তা করে। কমলা এবং হলুদে বিটা ক্রিপ্টোথাঙসিন থাকে, যা হার্টকে সুরক্ষা দেয়। সবুজ শাকসব্জি সালফোরাফেন, আইসোকায়ানেট এবং ইনডোল সমৃদ্ধ উৎস, যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। নীল এবং বেগুনি শক্তিশালী অ্যান্টি-এজিং যৌগ অ্যা›েথাসায়ানিন থেকে আসে।
স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ফাইবার, প্রোটিন এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট পেতে প্রতিদিন এক আউন্স শুকনো ফল এবং বাদাম খান। এগুলো আপনার শরীরকে উষ্ণ রাখবে যা করোনা রোধে সহায়ক। আমাদের দৈনন্দিন খাবারে ব্যবহৃত বিভিন্ন মশলা তাদের ওষধি গুণগুলোর জন্য পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য আমরা ঘরে তৈরি মশলা, ভেষজ চা এবং ইনফিউশন ব্যবহার করে থাকি। প্রতিদিনের শুরুতে ৪ থেকে ৫টি তুলসি পাতা খান। তুলসী অ্যান্টি-মাইক্রোবায়াল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।
কাশি এবং সর্দি-কাশির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আদা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, তাই আপনার চায়ের মধ্যে কিছুটা আদা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করুন। এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্টও। হলুদের এর শক্তিশালী কারকুমিন অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এছাড়াও, মেথি, রসুন এবং দারচিনি তাদের প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্যের জন্য ভালভাবে নথিভুক্ত করা হয়বিশেসভাবে সমাদৃত।
২. ব্যায়াম : বিশেষজ্ঞরা কেবল শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্যও ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন। নিয়মিত ব্যায়াম একটি স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। আপনাকে ভারী ওজন তুলতে হবে না। দিনে ৩০ মিনিটের জন্য দৌড়, জোরে হাঁটা এবং ফ্রিহ্যান্ড ওয়ার্কআউট আমাদের সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আরও দক্ষতার সাথে রক্ত সরবরাহ করতে সহায়তা করে, পুষ্টিগুলি প্রয়োজনীয় জায়গায় পৌঁছানো নিশ্চিত করে। ব্যায়াম শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. স্ট্রেস এবং ঘুমের সাইকেল : প্রাপ্ত বয়স্কদের অন্তত সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যকার সংযোগ সুরক্ষিত করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, সঠিক ঘুমের অভাবে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়, যা বদহজম থেকে হৃদরোগ পর্যন্ত বহুরোগের কারণ। পর্যাপ্ত বিশ্রাম আমাদের দেহকে নিরাময়, মেরামত করে। রাত ঘুমানোর সেরা সময়। তাই এই শীতে আপনার শক্তি ধরে রাখতে জমপেশ ঘুম দিন।
স্ট্রেস আপনাকে করোনা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। তাই স্ট্রেস এড়াতে বন্ধুদের সাথে কথা বলুন, বই পড়ুন, গান শুনুন, আপজনদের সাথে সময় কাটান। স্ট্রেস বেশি হলে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন।
৪. যোগব্যায়াম : যোগব্যায়াম আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসকে উন্নত করে এবং ফুসফুসের পেশী শক্তিশালী করতে সহায়তা করে বলে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। তাই নিয়মিত করোনা থেকে রক্ষা পেতে শীতে যোগব্যায়ামের ওপর বিশেষভাবে জোর দিন।
৫. সূর্যালোক ও বায়ুচলাচল : যেস্থানে পর্যাপ্ত সূর্যালোক এবং বায়ুচলাচল নেই, সে স্থানগুলো এড়িয়ে চলুন। পাশাপাশি শুকনো ও পরিচ্ছন্ন স্থানে থাকুন। সেইসাথে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন এবং ভিড় এড়িয়ে চলুন। নিরাপদে থাকুন, সুস্থ থাকুন! সূত্র : ইন্টারনেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন