শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আশা জাগাচ্ছে শিপিং

নীল অর্থনীতির বহুমুখী সুযোগ এখনও অব্যবহৃত

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৫৭ পিএম

আন্তর্জাতিক শিপিং বাণিজ্যে ক্রমেই সুসংহত হচ্ছে বাংলাদেশের অবস্থান। দিনে দিনে সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। দেশের চৌকস নাবিকগণ দেশ-বিদেশের জাহাজ পরিচালনে পারদর্শিতা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছেন। সামুদ্রিক মার্চেন্ট জাহাজযোগে পণ্যসামগ্রী পরিবহনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে পণ্য পরিবহন কন্টেইনার-নির্ভর এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শিপিং খরচ আগের তুলনায় কমে আসছে।

দেশের শিপইয়ার্ডে নির্মিত হচ্ছে উন্নততর প্রযুক্তির ও বিশ্বমানের জাহাজ, টাগবোট, বার্জ, ট্রলার, টহলবোট, ফেরিসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান। এ যাবৎ রফতানি হয়েছে জার্মানি, ভারত, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকান বিভিন্ন দেশে। তাছাড়া চট্টগ্রাম, পায়রা সমুদ্র বন্দরসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ছোট ও মাঝারি আকৃতির জাহাজ নৌযান নির্মাণ ও সরবরাহ করে ইতোমধ্যে সাফল্য প্রমাণ করেছে দেশীয় কয়েকটি ইয়ার্ড। শিপ ব্রেকিংয়ের দেশ থেকে এখন বাংলাদেশ শিপ বিল্ডিংয়ের দেশের সুনাম কুড়াচ্ছে।

করোনাকারণে সড়ক মহাসড়ক, রেলপথ ও আকাশপথে পণ্যসামগ্রী পরিবহন কমবেশি অচলাবস্থা কিংবা মন্দাদশায় আটকে আছে। তদুপরি ব্যয় বেড়ে গেছে দ্বিগুণ-তিনগুণ। আছে অনিশ্চয়তা। পরিবহনে সময়ের অপচয় ঘটছে। অন্যদিকে শিপিং পরিবহন ব্যবস্থা করোনাকারলেও পুরোপুরি উন্মুক্ত। সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী শিপিং বাণিজ্য দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে। সমগ্র শিপিং খাত দারণ আশা জাগিয়ে চলছে এগিয়ে। গত এক বছরে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর দিয়ে প্রায় ৩১ লাখ ইউনিট কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এ খাতে সার্বিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ। রফতানিমুখী গার্মেন্টসহ শিল্প-কারখানা, স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে প্রতিনিয়ত রক্ত সঞ্চলকের ভ‚মিকা পালন করছে শিপিং খাত। করোনা মহামারীতে দেশের অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা করছে। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে শিপিং খাত যথেষ্ট সাবলীল রয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং রাজস্ব অর্জনের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অবদান অব্যাহত রেখেছে। সমন্বিত প্রচেষ্টায় শিপিং খাতের অবদান আরও জোরদার ও বিস্তৃত করা সম্ভব।

শিপিং খাতের বিশেষজ্ঞগণ জানান, বঙ্গোপসাগর হচ্ছে বাংলাদেশের টোটাল শিপিং সেক্টরের প্রাণশক্তি। বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি বিস্তীর্ণ সমুদ্র অঞ্চলের উপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব অর্জন, ২শ’ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইইজেড) আয়ত্ত ও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এরফলে বøু-ইকোনমি বা নীল অর্থনীতির বহুমুখী দুয়ার খুলে গেছে। যার অন্যতম প্রধান দিক হচ্ছে শিপিং খাত। এখনই তার অর্থনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগানোর উপযুক্ত সময়। কেননা বিস্তৃত সুযোগের অনেকাংশই এখনও অব্যবহৃত পড়ে আছে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহম্মদ সিকান্দার খান বলেন, বঙ্গোপসাগরে আমাদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু জাতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে সমুদ্র সম্পদ বিশেষ করে শিপিং খাতের সুযোগ ও সম্ভাবনাসমূহ সদ্ব্যবহার করা হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে। কর্মসংস্থানের দ্বার উন্মুক্ত হবে। বিশাল সমুদ্রসীমা ও তার সম্পদকে শিপিং খাতে কাজে লাগানোর অনেক সুযোগ রয়ে গেছে। এরজন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

পোর্ট-শিপিং সার্কেলে সংশ্লিষ্টরা জানান, সাগর, মহাসাগর, উপকূলীয় নৌ রুটে তথা শিপিং ব্যবস্থায় পণ্য পরিবহন সুলভ। সড়ক, রেল ও আকাশপথ ব্যয়বহুল। জ্বালানি খরচ সাশ্রয়ের প্রধান উপায় শিপিংয়ে আমদানি ও রফতানি কার্যক্রমে নির্ভরতা ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছে। মার্চেন্ট জাহাজযোগে কম জ্বালানি ব্যয় করে অধিক পরিমাণে পণ্য আনা-নেয়া সম্ভব হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কন্টেইনার শিপিংয়ে পরিবহন ব্যবস্থা আরও ঊর্ধগামী হচ্ছে। নৌপথে পণ্য পরিবহন সুলভ ছাড়াও তুলনামূলক নিরাপদ। নৌপথে পরিবহন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে ব্যাপক।

নদীমাতৃক দেশ হলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ ব্যবহার হচ্ছে অবারিত সুযোগের তুলনায় আংশিক মাত্র। অভ্যন্তরীণ নৌ-পথ সার্থক ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনীতির গতিপথ বদলে যেতে পারে। এর পাশাপাশি নেপাল, ভূটানসহ প্রতিবেশী ভূমিবেষ্টিত (ল্যান্ড লকড) দেশসমূহ এবং চীন, ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের উৎপাদিত মানসম্পন্ন অনেক ধরনের পণ্যসামগ্রী, সেবাপণ্য রফতানির বিশাল সুযোগ তৈরি হতে পারে শিপিং খাতের যোগাযোগ পরিবহন নেটওয়ার্ক কাজে লাগানোর মাধ্যমে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
শাহাব হাওলাদার ১০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৫২ এএম says : 0
শুনে খুব ভালো লাগলো
Total Reply(0)
Gias Uddin Khan Ripon ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৩৭ এএম says : 0
শিপিং সেক্টর আমাদের দেশের হাজারো বছরকার ঐতিহ্যবাহী সেক্টর। এটা পরিকল্পনা অনুসারে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে সরকারি বেসরকারি উভয় উদ্যোগে। তাহলে লাখ লাখ মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈয়ার হবে ইনশাআল্লাহ।
Total Reply(0)
মাইশা নেওয়াজী ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৪৪ এএম says : 0
দেশের নৌপথ সংস্কার ড্রেজিং ইত্যাদি করা সময়ের দাবী। নদীমাতৃক বাংলাদেশ। অথচ সড়কপথে বেশিরভাগ মালামাল পরিবহণ করা হইতেছে এটা কোন যুক্তিতে? শিপিং খাতের সুবিধাগুলি কাজে লাগাতে হবে।
Total Reply(0)
Md. Yousuf Ali Shah ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৩:৫৪ এএম says : 0
শিপইয়ার্ড থেকে আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা সম্পন্ন জাহাজ ও নৌযান তৈরি হচ্ছে। বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। এই খাতে সরকারের আরও সুদৃষ্টি দেওয়া আবশ্যক।
Total Reply(0)
সাদ্দাম ১০ নভেম্বর, ২০২০, ৯:৪৫ এএম says : 0
নীল অর্থনীতির বহুমুখী সুযোগগুলো আমাদেরকে কাজে লাগাতে হবে।
Total Reply(0)
Jack Ali ১০ নভেম্বর, ২০২০, ১১:১৩ এএম says : 0
We need to use solar technology instead of fossil fuel so that we can protect our environment from green house effect.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন