চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলভাগের অদূরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি খুব দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে ঘনীভূত হয়েছে। সেটি গতকাল (বুধবার) দুপুর নাগাদ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। গভীর নিম্নচাপটি পরবর্তী স্তর সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে কিনা এ বিষয়টি নিয়ে আবহাওয়া দফতর সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এর সক্রিয় প্রভাবে সাগর খুবই উত্তাল হয়ে উঠেছে। সাগরের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতে। উপকূলজুড়ে গুমোট ও থমথমে আবহাওয়া বিরাজ করছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে সতর্ক সংকেত দেখানো হচ্ছে। উত্তাল ঢেউয়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজের আমদানি পণ্যসামগ্রী লাইটারিং ও খালাস কাজ ব্যাহত হচ্ছে। গত দু’দিনে সাগরে মাছ শিকারও কমে গেছে।
গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বুলেটিনে জানা গেছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলভাগের অদূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নি¤œচাপটি সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল বিকেলে একই এলাকায় (অক্ষাংশ ২১.৬ ডিগ্রি উত্তর এবং দ্রাঘিমাংশ ৮৮.৪ ডিগ্রি পূর্ব) অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে গতকাল রাতে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল বরাবর অতিক্রম করার কথা।
গভীর নি¤œচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রবন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
নি¤œচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের উপর দিয়ে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বা আরো অধিক বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নি¤œাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, গভীর নি¤œচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, নি¤œচাপের কেন্দ্রস্থল এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বর্ষার মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে এবং দেশের অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়ার হ্রাস পেতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। বর্ধিত ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন