ইনকিলাব ডেস্ক : কাশ্মীরে জাতিসংঘ দফতরের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হতেই হুররিয়াত নেতা মীরওয়াইজ ওমর ফারুককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত বুধবার তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। হুররিয়াতের গণমাধ্যম উপদেষ্টা শাহীদ-উল ইসলাম বলেন, মীরওয়াইজ ওমর ফারুক বুধবার বাড়ি থেকে জাতিসংঘের সামরিক পর্যবেক্ষক গ্রুপের দফতরের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় পুলিশবহনকারী একটি গাড়ি এসে তাকে তুলে নিয়ে যায়। জাতিসংঘের দফতরের উদ্দেশ্যে মার্চ করার ঘোষণা দেয়াতে নিরাপত্তাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেখানে যাওয়ার সব সড়ক বন্ধ করে দেয়ার পাশাপাশি কঠোর কারফিউ বলবত করা হয়। এদিকে গত বুধবার কাশ্মিরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে নতুন করে কারফিউ জারি করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। মূলত কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী গ্রুপগুলোকে দমনের জন্যই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মিরের বিদ্যমান পরিস্থিতি পরিদর্শনে একটি টিম পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছিল ইউনাইটেড ন্যাশনস হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি)। তবে এ ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থাটির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এরইমধ্যে অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার প্যানেল জম্মু-কাশ্মিরে কাজ শুরু করেছে। পার্লামেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। গত মঙ্গলবার হুররিয়াত কনফারেন্স নেতা সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি, মীরওয়াইজ ওমর ফারুক এবং মুহাম্মদ ইয়াসিন মালিক যৌথভাবে জাতিসংঘের দফতরের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর আগে হুররিয়াত কনফারেন্সের একাংশের চেয়ারম্যান মীরওয়াইজ ওমর ফারুক বলেন, জাতিসংঘ রাজ্যের মানুষকে দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে বাধ্য। আমরা শ্রীনগরে জাতিসংঘের দফতরে গিয়ে কাশ্মিরের মানুষের কাছে তারা কী প্রতিজ্ঞা করেছিল তা তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই। তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন না করায় কাশ্মিরের মানুষ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাও তাদের জানানো হবে। ওমর ফারুক বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে যদি আমাদের বাধা দেয়া হয় তাহলে যেখানে বাধা দেয়া হবে সেখানেই আমরা ধর্না-অবস্থানে বসে পড়ব। প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে ৭২ ঘণ্টা ধরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি চালানো হবে। কাশ্মিরের বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন। খবরে বলা হয়, কাশ্মিরের স্বাধীনতার দাবিতে লড়াইকারীরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ভারত সরকারের দাবি, কাশ্মিরে যারা লড়াই করছেন তারা আসলে জঙ্গি। বিচ্ছিন্নতাবাদী। এ কারণেই কাশ্মির প্রশ্নে সমগ্র ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিভঙ্গিতেই সেখানকার সমস্যাকে বিচ্ছিন্নতা আর জঙ্গিবাদের সমস্যা আকারে দেখা হয়ে থাকে। অপরদিকে, কাশ্মিরিদের কাছে সেখানকার লড়াই আদতে ভারত থেকে আলাদা হয়ে স্বাধিকার ও আত্মনিয়ন্ত্রণের লড়াই। অবশ্য, কাশ্মিরের স্বাধীনতার প্রশ্নে সরব খোদ ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরাও।
বিশ্বখ্যাত বুদ্ধিজীবী অরুন্ধতি রায় স্পষ্ট করে বলেন, সেখানে আসলে ভারতীয় বাহিনীর আগ্রাসন চলছে। অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে কাশ্মিরবাসীকে। কাশ্মির সমস্যার একমাত্র সমাধান স্বাধীনতা। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে কাশ্মিরের বারামুল্লা জেলার খাজাবাগ এলাকায় সেনাবাহিনীর কনভয়ে আচমকা গেরিলা হামলা চালানো হয়। এতে দুই সেনাসদস্য নিহত এবং অন্য ২ জন আহত হন। হামলার পর পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। হামলাকারীদের আটকের জন্য এরইমধ্যে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে ভারতীয় বাহিনী। আহত নিরাপত্তাকর্মীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ হুসাইন মীর বলেন, সম্ভবত ২/৩ জন হামলাকারী এ হামলা চালিয়েছে। মাসখানেক ধরেই কাশ্মিরের চলমান পরিস্থিতির কারণে আমরা সজাগ রয়েছি। তারপরও অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর এ হামলা চালিয়েছে। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিন থেকে সহিংসতা ও হতাহতের পরিমাণ বেড়েছে দিল্লিতে যখন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দিচ্ছিলেন, অবরুদ্ধ কাশ্মিরে তখন চলছিল কথিত বন্দুকযুদ্ধ। বন্দুকযুদ্ধ শেষে পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, শ্রীনগরের একটি থানার দখল নেওয়ার চেষ্টা করে সশস্ত্র মুজাহিদরা। তারা তাতে সফল না হলেও পাঁচ নিরাপত্তা কর্মীকে আহত করেন। কমান্ডিং অফিসার প্রমোদ কুমার গুরুতর আহত হন ও পরে মৃত্যুবরণ করেন। আর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হন দুই জন। এদিন শ্রীনগরে বিক্ষোভরতদের ওপর চালানো নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ইয়াসির শেখ নামের ১৬ বছরের এক কিশোর নিহত হয়। এছাড়া গত সপ্তাহের বিক্ষোভে আহত ১৮ বছরের তরুণ রিয়াজ আহমেদও এদিন হাসপাতালে প্রাণ হারান। আর দক্ষিণ কাশ্মিরের অনন্তনাগে বিক্ষোভরতদের ওপর চালানো পুলিশের গুলিতে ১০ বছরের শিশু আহত হয়। অব্যাহত সহিংসতা এবং সীমান্তে অনুপ্রবেশের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ভারতের সেনাপ্রধানের কাশ্মির সফরে যাওয়ার কথা। ৮ জুলাই ২০১৬ তারিখে কাশ্মিরের অনন্তনাগের কোকেরনাগ এলাকায় সেনা ও পুলিশের বিশেষ বাহিনীর যৌথ অভিযানে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানিসহ তিন হিজবুল যোদ্ধা নিহত হন। স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহানের নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়লে কাশ্মির জুড়ে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। বিক্ষুব্ধ কাশ্মিরিদের দাবি, বুরহানকে ভুয়া এনকাউন্টারে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে পুলওয়ামা ও শ্রীনগরের কিছু অঞ্চলে কারফিউ জারি করা হয়। পরবর্তীতে বিক্ষোভের মাত্রা বেড়ে গেলে কাশ্মিরের দশটি জেলা, এমনকি দূরবর্তী গ্রামেও কারফিউ জারি করা হয়। সেই থেকে আজও পর্যন্ত কাশ্মিরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। চলমান সংঘাতে গত ৪০ দিনে অন্তত ৬৪ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। অব্যাহত সহিসংতার প্রেক্ষিতে বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল, দোকানপাট ও অফিস-আদালত। পুরো কাশ্মির উপত্যকা যেন স্থায়ীভাবে সেনা ছাউনিতে পরিণত হয়েছে। রয়টার্স, পার্সটুডে, দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন