নূরুল ইসলাম : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৮ লেনের সড়ক দখল হয়ে যাচ্ছে। উদ্বোধনের সাত দিনের মাথায় পাল্টে গেছে মহাসড়কের দৃশ্য। কয়েকটি স্থানে একদিকের চার লেনের মধ্যে দুই লেন দখল করে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এছাড়া যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল ও সাইনবোর্ড এলাকায় মহাসড়কের দু’পাশেই আগের মতোই অবৈধ দোকানপাট তোলা হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট ৮ লেনের এই মহাসড়কটি উদ্বোধনের আগে উভয় পাশের সব ধরনের দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছিল। সে কারণে উদ্বোধনের দিন ৮ লেনের মহাসড়কের চেহারাই ছিল অন্যরকম।
যাত্রাবাড়ী থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ৮ লেন মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ২ কিলোমিটার। এটি একদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে যুক্ত হয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাথে। এ কারণে মহাসড়কটি রাজধানীর সাথে দেশের ১৮টি জেলার যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সড়কটি। আট লেনের মহাসড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রবেশ-বহির্গমনের প্রধান করিডোর। সেতু মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর লিংক রোড চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ধরে আসা যানবাহনগুলো এই আট লেন ব্যবহার করে খুব সহজে ও অল্প সময়ে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে। ২০১১ সালে চার লেন থেকে আট লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর ৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দুরত্বের আট লেনের এই মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৮ লেনের সড়কটির সুফল পেতে রাস্তার দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা, পার্কিং ও দোকানপাট মুক্ত রাখা জরুরি। পাশাপাশি বিভিন্ন মোড়ে ওভারব্রিজ বা ওভারপাস নির্মাণ করতে হবে। গত ১৩ আগস্ট উদ্বোধনের দিনে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেছিলেন, উদ্বোধনের আগেও মহাসড়কের দু’পাশ থেকে বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে, যেগুলোর সিংহভাগই ছিল সরকারদলীয়দের। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে লেনগুলো কোনোভাবেই যেন আবার দখল না হয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আবু নাসেরের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ইতোমধ্যে বেশ কিছু স্থানে একদিকের চার লেনের মধ্যে দুই লেন দখল করে গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়েছে। আবার কোনো কোনো স্থানে এক লেনে গাড়ির স্থায়ী পার্কিং বানানো হয়েছে, যা উদ্বোধনের আগেও ছিল।
সরেজমিনে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড এলাকায় মহাসড়কের দু’পাশেই আগের মতোই অবৈধ দোকানপাট তোলা হয়েছে। শনিরআখড়ায় মহাসড়কের দুই দিকেই আবার আগের মতোই দোকানপাট বসানো হয়েছে। এর সাথে ট্যাক্সক্যাব, সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পো স্ট্যান্ড তো আছেই। মহাসড়কের ওপর নির্মিত এক দোকানের মালিক বলেন, গত ১২ আগস্ট পুলিশ আমাদেরকে দোকান সরিয়ে নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। হঠাৎ এমন নির্দেশ পেয়ে আমরা ‘নেতা’র সাথে যোগাযোগ করি। নেতা আমাদের জানান, মাত্র দু’দিনের জন্য দোকান সরাতে হবে। শনিবার মহাসড়কের ৮ লেন উদ্বোধন হবে। সে কারণেই আপাতত দোকান সরাতে হবে। উদ্বোধন হয়ে গেলে আবার দোকান বসানো যাবে। শনির আখড়া ব্রিজের ওপরের আরেক দোকানদার বলেন, এক দিনের জন্য দোকান সরানো মানে বহুত ঝামেলা। বন্ধ রাখতে বললে বন্ধ রাখা যেত। কিন্তু টিভি ক্যামেরা থাকবে রাস্তায়। সেজন্য পুরো দোকানই সরাতে হয়েছিল। উদ্বোধনের এক দিন পরেই আবার দোকান বসিয়েছি। এজন্য বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে জানিয়ে আরেক দোকানদার বলেন, টাকা ছাড়া কি আর রাস্তার উপর ব্যবসা করা যায়?
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রায়েরবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কোনো কোনো স্থানে মহাসড়কের লেনের ওপরেই দোকান বসানো হয়েছে। রায়েরবাগ বাসস্ট্যান্ডের কাছে এমনিতেই রাস্তা অনেকটাই সরু। তার ওপর অবৈধ দোকানপাট বসানোর কারণে যানচলাচলে বিঘœ ঘটছে। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন জানান, রায়েরবাগে অবৈধ দোকানপাট যাতে না বসতে পারে সেজন্য পুলিশ তৎপর রয়েছে। যেগুলো দোকান বসেছে সেগুলো অস্থায়ী। মাঝে মধ্যেই পুলিশ দোকানগুলো তুলে দেয়।
এদিকে, ৮ লেনের উদ্বোধনের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ভোগান্তি অনেকটাই কমেছে বলে জানান বেশ কয়েকজন বাসের চালক। নোয়াখালী রুটের বাস চালক ইমরান বলেন, নোয়াখালী থেকে ঢাকায় আসার পথে এখন কাঁচপুর আসা মানে ঢাকায় চলে আসা। মাত্র কয়েক মিনিটেই কাঁচপুর থেকে ফ্লাইওভারের মুখ পর্যন্ত (কুতুবখালী) আসা যায়। ওখান থেকে আবার সরু রাস্তা দিয়ে আসতে হয়। ওই চালক বলেন, ফ্লাইওভার করার সময় অনেক বেশি জায়গা নিয়ে ফেলেছে। এখন ফ্লাইওভারের পাশ দিয়ে একটা গাড়ি চলে কোনোমতে। তার মতে, ফ্লাইওভারের জন্য এতটা রাস্তা দখল করার প্রয়োজন ছিল না। এখন সরু রাস্তা দিয়ে ফ্লাইওভারের মুখ থেকে যাত্রাবাড়ী আসতে অনেক বেশি সময় লাগে।
কুমিল্লা রুটের চালক বেলাল বলেন, ৮ লেনের বেশ কয়েকটি স্থানে ওভারব্রিজ দরকার। মানুষজন দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হয়। এটা খুবই বিপজ্জনক। শনির আখড়ার মতো ব্যস্ত এলাকায় কোনো ওভারব্রিজ নেই। দনিয়া কলেজের সামনে দিয়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তা পার হয়। কর্তৃপক্ষের উচিত কলেজের সামনে একটা ওভারব্রিজ নির্মাণ করা। তিনি বলেন, রাস্তার ওপর থেকে দোকানপাট তুলে দিলে কখনোই এই রাস্তায় যানজট হবে না। পুলিশ চাইলে পুরো ৮ লেনই ফ্রি রাখতে পারে। যেমনটা ছিল উদ্বোধনের দিনে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে একটি বাসকে যাত্রাবাড়ী থেকে সরু রাস্তা দিয়ে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তারপর ৮ লেনের মহাসড়কে উঠতে হয়। যাত্রাবাড়ী থেকে কুতুবখালী এই রাস্তাটি একেবারে চলাচলের অযোগ্য। এই রাস্তার পাশেই আবার আসন্ন কোরবানির হাট বসানোর প্রস্তুতি চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন