শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

২৭ সপ্তাহে জন্ম নেয়া টুকটুকি সুস্থ আছে

প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : বরিশালের একটি বেসরকারী হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মেধা ও মননে মাত্র ২৭ সপ্তাহে মায়ের গর্ভে থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়া দুই পাউন্ড বা ৮শ’ গ্রাম ওজনের একটি শিশু প্রায় সুস্থ জীবন নিয়ে বেঁচে আছে। শিশুটির বড় ভাই তার নাম রেখেছে টুকটুকি। বরিশালে একটি এনজিও কর্মী শ্যামল কুমার বিশ্বাসের স্ত্রী বিউটি করের মাত্রাতিরিক্ত উচ্চ রক্তচাপের কারণেই বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহ আলম তালুকদার অপ্রাপ্ত বয়সে মহানগরীর আরিফ মেমোরিয়াল হাসপাতালে সিজার করে টুকটুকিকে দুনিয়ার আলো দেখান। কিন্তু জন্মের পরে দেখা যায় তার ওজন মাত্র ৮শ’ গ্রাম। যা যে কোন নবজাতকের জীবনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ অবস্থায় নবজাতকের কোন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না। ফলে তার নানা ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হবার প্রবণতাও থাকে বেশি। ফলে নবজাতকের জীবন হয়ে ওঠে সংকটাপন্ন্ ।
পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ডাঃ তালুকদার শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আশীষ কুমার হালদারকে খবর দিয়ে রাখেন। শিশু বিশেষজ্ঞ শিশুটিকে ইনকিউবেটরে নিবিড় পরিচর্যায় চিকিৎসা শুরু করেন। গত দেড় মাসের সাফল্যজনক চিকিৎসায় টুকটুকি এখন ভাল আছে।
বিষয়টি নিয়ে ডাঃ শাহ আলম তালুকদার সাংবাদিকদের জানান, মাতৃগর্ভে একটি শিশু পূর্ণতা পেতে ন্যূনতম ৩৫ সপ্তাহ সময় লাগে। কিন্তু প্রসূতি বিউটি করের স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত উচ্চ রক্ত চাপসহ নানা উপসর্গের কারণে তার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। সেক্ষত্রে গর্ভস্থ শিশুর জীবন নিয়ে চিন্তা অনেকটাই দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকে। আমরা অনেক চিন্তা-ভবনা করেই প্রসূতির জীবন রক্ষায় মাত্র ২৭ সপ্তাহের মাথায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার গর্ভস্থ শিশুটিকে ভূমিষ্ঠ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
সে লক্ষ্যে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে গত ২ জুলাই বিকেলে নগরীর আরিফ মেমোরিয়াল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিউটি করের ২৭ সপ্তাহের শিশুকে পেট থেকে বের করা হয়। এক্ষেত্রে সব প্রাক-প্রস্তুতি সম্পন্ন করাই ছিল। প্রসূতি সুস্থ থাকলেও শিশুটিকে নিয়ে প্রথমে যথেষ্ট সংকট সৃষ্টি হয়। তবে হাসপাতালটির যোগ্য ব্যবস্থাপনা এবং চিকিৎসকদের মেধা ও মননের ফলে শিশু টুকটুকি সব বিপদ থেকে হেফাজতেই ছিল। গত দেড় মাস ইনকিউবেটরে রাখাসহ নিবিড় পরিচর্যায় শিশুটি ইতোমধ্যে প্রায় বিপদমুক্ত। ইতোমধ্যে ইনকিউবেটর থেকে মায়ের কোলে ফিরেছে টুকটুকি। মায়ের দুধও পান করছে সে। অন্য সব নবজাতকের মতো বিপদ মাথায় নিয়ে দুনিয়াতে আসা নবজাতক টুকটুকিও এখন স্বাভাবিক আচরণ করছে ।
আরিফ মেমোরিয়াল হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বরিশালের ইতিহাসে এ ধরনের শিশুর জন্ম ও পরবর্তী পরিচর্যার মাধ্যমে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার ঘটনা এই প্রথম। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহ আলমের মতে, দেশে এ ধরনের শিশু মৃত্যুর হার প্রায় শতভাগের কাছাকাছি। ‘জীবন বাঁচাবার মালিক আল্লাহ’ বলে তিনি বলেন, আমরা আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান ও আন্তরিকতা নিয়েই কাজ করেছি। এক্ষত্রে চিকিৎসা বিজ্ঞানের রীতি অনুযায়ী প্রথমে প্রসূতির জীবন রক্ষাকেই লক্ষ্য ধরে আমরা শিশুটিকে ভূমিষ্ঠ করাই। পরে শিশুটির জীবন বাঁচাতেও সব রকম চেষ্টা করেছি। মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীন তার রহমত দিয়েই টুকটুকিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। সবশেষ খবর অনুযায়ী মা ও শিশু টুকটুকি ভাল আছে। বিউটি কর ও তার স্বামী খুব খুশি তাদের দ্বিতীয় সন্তানকে নিয়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন