শামসুল ইসলাম : যাত্রীর অভাবে বিমান ও সাউদিয়া এরাবিয়ান এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা বাড়ছে। এতে নির্বিঘেœ হজযাত্রী পরিবহনের সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। হজ ফ্লাইটের সøট বাতিল দফায় দফায় হওয়ায় শেষের দিকে হজযাত্রী পরিবহনে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে। গত ৪ আগষ্ট থেকে আজ শনিবার পর্যন্ত বিমানের ১২টি হজ ফ্লাইট এবং সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের ৩টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। বিমানের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এতথ্য জানিয়েছেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ হজযাত্রী পরিবহন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে আগামী কাল রোববার অতিরিক্ত ১২ থেকে ১৫টি নতুন সøট বরাদ্দ চেয়ে জেদ্দাস্থ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত প্রস্তাব পাঠাবে। জরুরী ভিত্তিতে নতুন সøট-এর অনুমোদন পাওয়া গেলে হজযাত্রী পরিবহনে সংকট নিরসন হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মতামত ব্যক্ত করেছেন। এদিকে, হজ টিকিট সিন্ডিকেট চক্র শেষের দিকের হজ টিকিট চড়া দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি গত বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেছেন, হজযাত্রী পরিবহনের কোনো ভোগান্তি হবে না। গতকাল শুক্রবার থেকে কোনো ফ্লাইট যাতে খালি না যায় সে জন্য দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি হজ এজেন্সি’র মালিকদের দ্রুত হজ টিকিট সংগ্রহের অনুরোধ জানিয়েছেন।
পর্যাপ্ত হজযাত্রীর ভিসা হাতে পাওয়ার পরেও হজ এজেন্সিগুলো হজ ফ্লাইটের সিট গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকছে। ঢাকাস্থ সউদী রাষ্ট্রদূত ড. আব্দুল্লাহ এইচ এম আল-মুতাইরী হজ ভিসা ইস্যু কার্যক্রম সহজীকরণে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সর্বমোট ৭৪ হাজার হজ ভিসা ইস্যু করেছে। সম্প্রতি এক শনিবার সকালে আশকোণাস্থ হজ অফিস থেকে ১০ হাজার হজযাত্রীর পাসপোর্ট দূতাবাসে জমা হলে একই দিন রাতের মধ্যেই উল্লেখিত ১০ হাজার হজ ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। দূতাবাসের সার্ভার বিকল হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার ৪ হাজার হজযাত্রীর পাসর্পোট জমা হলে রাতে মাত্র ৭শ’ হজ ভিসা ইস্যু করা সম্ভব হয়েছে। দূতাবাসের সার্ভার চালুর জন্য আইটি প্রকৌশলীরা রাত-দিন কাজ করছে। হজ ফ্লাইট বাতিলের সুবাধে সিন্ডিকেট চক্র শেষের দিকে হজ টিকিট চড়া দামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অধিক মুনাফা লাভের আশায় অধিকাংশ হজ এজেন্সির মালিকরা মক্কা-মদিনায় দূরের বাড়ী ভাড়া করে শেষের দিকে হজ ফ্লাইট দেয়ার জন্য দিন-ক্ষণ নির্ধারণ করে বসে রয়েছে। এতে শেষের দিকে হজ ফ্লাইটের উপর মাত্রারিক্ত চাপ পড়বে। সিন্ডিকেট চক্র টিকিট সংকটের অজুহাত তুলে প্রত্যেক হজ টিকিট বাবদ অতিরিক্ত ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে বিক্রি করবে। অভাবে বিমান কর্তৃপক্ষ হজ ফ্লাইটের ৭২ ঘন্টা আগে হজযাত্রীর টিকিট ক্রয়ের অনুরোধ জানালেও হজ এজেন্সিগুলো এব্যাপারে সাড়া দিচ্ছে না। বিমানের কমার্শিয়াল অফিসার সাইফুদ্দিন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, আজ শনিবার রাত ১টা ও রাত ৩টা ৩৫ মিনিটের বিমানের দু’টা হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এতে প্রায় ৮শ’ ৪০ জন হজযাত্রীর সøট হাত ছাড়া হলো। তিনি বলেন, এ নিয়ে বিমানের ১২টি হজ ফ্লাইট বাতিল হলো। তিনি বলেন, যাত্রীর অভাবে গত দু’দিনে সাউদিয়া এয়ারলাইন্সেরও দু’টি হজ ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুদ্দিন বলেন, হজযাত্রী পরিবহন সংকট নিরসনে বিমান কর্তৃপক্ষ রোববার সউদী কর্তৃপক্ষের কাছে ১২ থেকে ১৪টি হজ ফ্লাইটের নতুন স্লট বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠাবে। এদিকে, আজ শনিবার সাউদিয়ার আরো একটি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিমান কর্তৃপক্ষ গত ১১ আগষ্ট থেকে ১৮ আগষ্ট পর্যন্ত বাতিলকৃত ১০টি হজ ফ্লাইটে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেটের প্রায় ৫৫টি হজ এজেন্সির কাছে হজযাত্রীর আসব বরাদ্দ দিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের টিকিট ক্রয় না করায় এসব ফ্লাইট বাতিল ও বেশ কিছু আসন খালি নিয়ে হজ ফ্লাইট পরিচালনা করে। বাংলাদেশ হজযাত্রী ও হাজী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি এডভোকেট আলহাজ আব্দুল্লাহ আল নাসের এক বিবৃতিতে যাত্রীর অভাবে হজ ফ্লাইট বাতিলের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে সকল হজ এজেন্সির স্বত্বাধিকারীকে সিট বুকিং দিয়ে টিকিট কনফার্ম করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যথায় শেষ পর্যায়ে হজযাত্রী পরিবহনের ভয়াবহ মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। তিনি নির্বিঘœ হজযাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে বিমানকে কমপক্ষে ১৫টি অতিরিক্ত সøট বরাদ্দে জরুরী উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান।
এদিকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক জরুরী বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালের হজে গমনেচ্ছু ভিসাপ্রাপ্ত হজযাত্রীদের তালিকা ওয়েবসাইটে (www.hajj.gov.bd) দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিসমূহকে অনতিবিলম্বে বিমানের টিকিট সংগ্রহ করে হজযাত্রীদের সউদী আরবে প্রেরণ করতে হবে। বিমানের টিকিট সংগ্রহে বিলম্বের কারণে হজযাত্রী প্রেরণে জটিলতা সৃষ্টি হলে তার দায়-দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিকে বহন করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন