শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ড্যাপে অনেক অসঙ্গতি আছে

অভিযোগ স্থপতি ইনস্টিটিউটের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) অনেক অসঙ্গতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। সংগঠনটি বলছে, নতুন ড্যাপে জননিরাপত্তা, জনমতের আকাক্সক্ষা উপেক্ষা করা হয়েছে। কোনও ধরনের ইনোভেশন আইডিয়া এই ড্যাপে নেই। যেসব কারণে ২০১০ সালের ড্যাপ বাস্তবায়ন করা যায়নি, সেসব কারণ এই ড্যাপেও লক্ষ করা যাচ্ছে। তাছাড়া ড্যাপে জলাধারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে দেওয়াসহ নানা অসঙ্গতির অভিযোগ তুলেছে সংগঠনটি।

গত মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দ্রুত নগরায়ণ, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রযুক্তিগত রূপান্তরের কারণে ভবিষ্যতের ঢাকা হওয়া উচিত মহিলা, শিশু ও ভিন্নভাবে সক্ষমদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর। সকল আয়ের মানুষকে সমান অধিকার এবং সুবিধা প্রদান। জলবায়ু পরিবর্তন এবং মহামারি মোকাবিলার জন্য একটি অভিযোজিত এবং স্থিতিস্থাপক শহর। উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত প্রজন্ম তৈরির জন্য ঢাকা একটি স্বাস্থ্যকর শহর হওয়া উচিত।
ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মাণ বিধিমালাকে প্রস্তাবিত ড্যাপে বৈরী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ, এ বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি প্লটে বাধ্যতামূলকভাবে নির্ধারিত পরিমাণ ভূমি উন্মুক্ত রাখা, প্রতিটি প্লটে আলোবাতাসসহ সবুজের সংস্থান এবং বৃষ্টির পানি রিচার্জ সুবিধা সামগ্রিকভাবে ভবনে বসবাসরত জনগণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এই বিধিমালার নেতিবাচক প্রভাবের প্রমাণ দেওয়ার জন্যই কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ড্যাপের জনঘনত্ব বিন্যাস পরিকল্পনাও যথাযথ হয়নি বলে মনে করে স্থপতি ইনস্টিটিউট। তাতে বলা হয়েছে, ড্যাপ ডকুমেন্টটি কীভাবে বিভিন্ন এলাকার ঘনত্বকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে না। এ সম্পর্কিত কারিগরি সমীক্ষা প্রকাশ করতে হবে এবং বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া উচিত। ঘনত্ব নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকক, হংকংয়ের মতো বেশিরভাগ আধুনিক শহরে এফএআর প্রয়োগ করা হয়। তবে প্রস্তাবিত ড্যাপ তার প্রভাবগুলোর বিশদ বিশ্লেষণ ছাড়াই উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ ব্যবহার করেছে।
ড্যাপের ব্লক উন্নয়ন নিয়েও আপত্তি করেছেন স্থপতিরা। তারা জানিয়েছেন, ড্যাপের প্রস্তাব অনুযায়ী, পাঁচ একর বা তার অতিরিক্ত প্লটে ব্লক ডেভেলপমেন্টের কথা বলে সীমাহীন উচ্চতায় যত খুশি সংখ্যক আবাসিক ভবন নির্মাণের অনুমোদন, জনঘনত্ব নিয়ন্ত্রণের মূল চিন্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এখানে অনেক বেশি কেসস্টাডি এবং সিমুলেশন মডেলিং করে তারপর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।
স্থপতিরা আরও জানিয়েছেন, পুরান ঢাকা থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ও জনজীবনে পরিবেশ বিধ্বংসী রাসায়নিক গুদাম, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কারখানা স্থানান্তর করে উপযুক্ত শিল্প এলাকায় নিতে হবে। শিল্প এলাকার বিষয়ে বিশদ প্রস্তাবনা সংযোজন করতে হবে।
জলাশয় রক্ষায় আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সিএস, আরএস মৌজা ম্যাপে নদী-নালা, খাল-বিল, জলাধার, জলাশয়কে ভূমি ব্যবহার হিসেবে দেখানোর কথা স্পষ্টভাবে বলা থাকলেও খসড়া পরিকল্পনায় তা অনুপস্থিত। প্রস্তাবিত খসড়ায় প্লাবনভূমিকে শ্রেণিভাগ করার সময় ২০০০ সালের ৩৬ নম্বর আইনে প্রদত্ত প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। তথাকথিত ‘মুখ্য জলস্রোত’ ও ‘সাধারণ জলস্রোত’ হিসেবে বন্যাপ্রবাহ এলাকাকে শ্রেণিবিভক্ত করার কোনও সুযোগ ২০০০ সালের ৩৬ নম্বর আইনে নেই। এতে শর্তসাপেক্ষে ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন ও স্থাপনা অনুমোদনের যে প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে—তা আইন, আদালতের আদেশ ও জনস্বার্থ পরিপন্থী। এরূপ প্রস্তাবনা গৃহীত হলে নগর বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ভূগর্ভস্থ পানি স্তরের আশঙ্কাজনক হ্রাসের ঝুঁকিতে থাকায় ঢাকা তার ৭০ ভাগ প্রাকৃতিক জলাশয় হারাবে এবং প্লাবন ভূমি সংকুচিত হয়ে ৬৬ ভাগের পরিবর্তে ১৭ ভাগে নেমে আসবে। এমন প্রস্তাবনা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি জালাল আহমেদ, সাবেক সভাপতি কাজী গোলাম নাসির, আবু সাইদ এম আহমেদ, ইকবাল হাবিব, ফরিদা নিলুফার, মেরিনা তাবাসসুম, ইশতিয়াক জহির প্রমুখ।#

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন