শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাথরে বাড়িতে পাথর উত্তোলন বন্ধ

অর্থনীতির উৎস হতে পারে সাদা পাথর

সিলেট থেকে ফিরে পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

সবুজে মোড়া পাহাড়ের কোলঘেঁষা সাদা পাথরের নদী, ঝরনা, বন, চা-বাগান, নীল জলরাশির হাওর, কী নেই এখানে! সিলেটের এমন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের পর্যটক আর ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ঘুরতে আসেন। সিলেটের অসংখ্য পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম নয়নাভিরাম ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর। ধলাই নদের উৎসমুখে এর অবস্থান। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে সিলেটের মৌলভিবাজার জেলার কমলগঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সিলেটের ভোলাগঞ্জের কাছে এসে আবার সে ভারতের মেঘালয় পর্বতমালার কোলঘেঁষে বয়ে গেছে। করোনার মধ্যেও হাজার হাজার পর্যটক ঘুরতে আসছেন ভোলাগঞ্জে। এখানে ধলাই নদের অসাধারণ রূপ, সারি সারি পাথর তোলার দৃশ্য, সবুজ পাহাড়ে বন্দি সাদা পাথর আর পাহাড় থেকে পাথরছুঁয়ে গড়িয়ে পড়া স্ফটিক-স্বচ্ছ পানি যে দেখবে সে-ই মুগ্ধ। স্বচ্ছ দেখে এক আঁজলা পানি মুখে মাখলাম, পা ঝুলিয়ে দিলাম নদীর পানিতে। এভাবেই একসময় আমাদের বজরাটি গিয়ে পড়ল বিশাল এক বিলে। বিলের দুপাশ অসাধারণ সবুজ। 

শান্ত পাহাড়, সঙ্গে মিশেছে আকাশের নীল। আকাশে ছোপ ছোপ শুভ্র মেঘ। আমরা জিরো পয়েন্টে দৃষ্টি ফেলি। চারদিকে পাথর আর পাথরসব পাথর সাদা রঙা। পাথর তোলার প্রচুর নৌকা চোখে পড়ল, তবে এখানে দর্শনার্থী এখন বাড়তে শুরু করেছে। সাদা পাথরের অসাধারণ এক এলাকায় আমরা পা রাখি। সামনে সবুজ পাহাড়, পাশেই পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া প্রচুর স্রোতের স্বচ্ছ শীতল জল আর সে জল থেকে গড়িয়ে নামা সাদা পাথরকী অপরূপ দৃশ্য, তা বলে বোঝানোর নয়! আমরা পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া শীতল জলে ঝাঁপিয়ে পড়ি, আহা কী ঠান্ডা! একসঙ্গে এত এত সাদা পাথর জীবনে কখনো দেখিনি, ভাবতে ভাবতে আর সাদা পাথর দেখে দেখে, সেই সঙ্গে পাথর জলে গোসল করে সময় এগিয়ে যায়।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির আর্থিক সংকট মোকাবিলায় সব পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। জাফলংয়ের শ্রমিক পরিবারগুলোকে বাঁচাতে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) বাইরে তারা পাথর উত্তোলনের অনুমতি দাবি জানিয়েছেন। পাথর কোয়ারি খুলে না দিলে আগামী ১ ডিসেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়েছে।
সিলেটের এ পাথরের গুনগত মান উন্নত হওয়ায় দেশের নির্মাণ শিল্পের অন্যতম কাচামাল হিসেবে এ পাথর ব্যবহার হয়ে আসছে। বুয়েট, শাহজালাল ইউনির্ভাসিটি সহ দেশের সকল প্রকৌশল সংস্থার মান বিবেচনায় এ পাথরের গুণগত মান এশিয়া মাহাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ট মনোনীত হওয়ায় নির্মিত অবকাঠামোর মজবুত ও স্থায়ীত্ব সর্বজন বিবিধ। খরস্রোত প্রবাহিনীর ভাটি অঞ্চলে অবস্থিত এ অঞ্চলে প্রতিবছর উজান থেকে লাখ লাখ টন পাথর নেমে এসে কোয়ারী অঞ্চল পরিপূর্ণ হয় এবং এ পাথরই শ্রমিকেরা উত্তোলন করে দেশের নির্মাণ শিল্পে যোগান দিয়ে আসছিলেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জাফলংয়ের ১৮৮ দশমিক ৭০ হেক্টর জায়গা পাথর কোয়ারি (পাথর উত্তোলনস্থল) চিহ্নিত করে ইজারা-ব্যবস্থার মাধ্যমে ১৯৮০ সাল থেকে পাথর উত্তোলন শুরু হয়। শুরুতে সনাতন পদ্ধতিতে এ কাজ চললেও দেড় দশক ধরে শুরু হয় যন্ত্র ব্যবহার। এর মধ্যে মাটির গভীর থেকে পাথর উত্তোলনে ব্যবহার করা হয় বোমা মেশিন’সহ খননযন্ত্র।পাথর উত্তোলনে যন্ত্রনির্ভরতা জাফলংকে সংকটাপন্ন করে তোলে। এ পরিস্থিতিতে ২০১২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি জাফলং ডাউকি নদী ও নদীর উভয় পাড় থেকে ৫শ’ মিটার প্রস্থের এলাকা এবং জাফলং ডাউকি ও পিয়াইন নদীর মধ্যবর্তী খাশিয়া পুঞ্জিসহ ১৪ দশমিক ৯৩ বর্গমিটার এলাকাকে প্রতিবেশ সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়।
ইসিএ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে সারি- গোয়াইনঘাট নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত প্রবহমান জাফলং-ডাউকি নদী পরিবেশগত সংকটাপন্ন। গোয়াইনঘাট উপজেলার আলীরগাঁও ও পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের ১১টি মৌজা নিয়ে মোট ১৪ দশমিক ৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ইসিএ। ঘোষিত এলাকার মধ্যে জাফলং-ডাউকি নদী এবং এ নদীর উভয় পাড় থেকে ৫০০ মিটার এলাকাসহ বলাঘাটের বিপরীত দিকে পিয়াইন নদ পর্যন্ত বিস্তৃত পুরো খাসিয়াপুঞ্জি রয়েছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পাথর উত্তোলন কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে ইসিএ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের মাধ্যমে পরিবেশ ও প্রতিবেশ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাতে বলা হয়েছে।
বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক আব্দুল জলিল ইনকিলাবকে বলেন, নিজ দেশে উন্নতমানের পাথর রেখে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় করে ভারত থেকে পাথর আমদানী করা হচ্ছে। সাদা পাথর হতে পারে দেশের অর্থনীতির উৎস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সাদা পাথরে চাহিদা রয়েছে। যেমন বালু উত্তোলনের টেন্ডার দিয়েছে জেলা প্রশাসক। সেই ভাবে পাথর উত্তোলনের টেন্ডার ব্যবস্থা করতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন