উচ্ছেদ আতঙ্কে হাজারো পরিবার
মো. আকতারুজ্জামান, চৌদ্দগ্রাম থেকে : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক্সপ্রেস ওয়ে মহাসড়ক নির্মাণের প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মিত হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াতে সময় লাগবে মাত্র আড়াই ঘণ্টা। আর এ প্রকল্পের সড়কটি উড়াল হলে বাস্তবায়নে ৬৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকা এবং আংশিক উড়াল ও মাটিতে হলে ২৬ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা খরচ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে চার বছর। এ সম্পর্কিত চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের একবিংশতম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সড়কটি বাস্তবায়নের জন্য চৌদ্দগ্রামসহ কুমিল্লা অঞ্চলে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ২০১৮ সালে প্রকল্পটির কাজ শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একনেকের ওই সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ঢাকা থেকে এক্সপ্রেস ওয়ে ব্যবহার করলে চট্টগ্রামে গিয়ে নামতে হবে। পদ্মা সেতুর মতোই এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হতে যাচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেস ওয়ের ওপরে কোনো শপিং সেন্টার থাকবে না। এখানে কোনো হকার বা অন্য কারও দাঁড়ানোর কোনো সুযোগ থাকবে না। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতেই এই ২২০ কিলোমিটার উড়াল সড়ক (এক্সপ্রেস ওয়ে) নির্মাণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের উপরে হবে আরও একটি চার লেন সড়ক। এই চার লেনটি ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। তবে এক্সপ্রেস ওয়ে হবে ২২০ কিলোমিটার। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, চার লেন উড়াল সড়ক দিয়ে বাস ও ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে।
এদিকে ২৪ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেনের মহাসড়কের পাশে আরেকটি এক্সপ্রেস ওয়ে বা নতুন সড়ক নির্মাণের বিষয়ে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। এই এক্সপ্রেস ওয়েতে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে গাড়ি। দু-আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাতায়াত করা যাবে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই মতবিনিময় সভায় এসব কথা জানানো হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হলো সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সভায় ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত অ্যালাইনম্যান্ট এবং নকশাসম্পর্কিত প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিশির কান্তি রাউত। এতে ঢাকা-চিটাগাং এক্সপ্রেসওয়ের পিপিপি ডিজাইন প্রকল্পের ‘টিম লিডার’ গেভিন স্ট্রাড, চট্টগ্রাম বন্দর, রেল ও পিডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শিশির কান্তি রাউত বলেন, পুরো সড়কটির চট্টগ্রাম-ফেনী ও কুমিল্লার দাউদকান্দি-ঢাকা অংশে কোথাও মাটির ওপর আবার কোথাও উড়াল সড়ক তৈরি করা হবে। ফেনী ও দাউদকান্দির অংশে কেবল মাটির ওপর সড়ক তৈরির পরিকল্পনা আছে। পুরো সড়কটি উড়াল হলে বাস্তবায়নে ৬৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকা এবং আংশিক উড়াল ও মাটিতে হলে ২৬ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা খরচ হবে। আর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সময় লাগবে চার বছর।
প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সভায় আরও জানানো হয়, ২০২০ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের চাপ সামলাতে চারলেনের পাশে ২১৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন সড়কটি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এই সড়ক নির্মাণ হলে কেউ রাস্তা পারাপার হতে পারবে না। কারণ, দুদিকে বেষ্টনী থাকবে। তাই এই সড়কে ৬৪টি আন্ডারপাস (পাতালপথ), প্রায় ১৪৫টি পদসেতু, সাতটি ইন্টারচেঞ্জ (মূল সড়ক থেকে পার্শ্ববর্তী সড়কে যাওয়ার জন্য র্যাম্প) ও ১০ লেনের টোলপ্লাজা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন বাজার ও বিভিন্ন সংযোগ সড়কের অংশে যানজট এড়ানোর জন্য ১৮ কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্র্রস্তাবিত এ অ্যালাইমেন্টে দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি ১০০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে। ফলে দু-আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে যাতায়াত করা যাবে। আর পুরো মহাসড়ক ‘ইন্টেজিল্যান্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমের’ মধ্যে থাকবে, যাতে পুরো মহাসড়কে নজরদারি করা যায়।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে সড়কের পশ্চিম পাশে দ্রুত গতিতে চলছে জায়গা চিহ্নিতকরণের কাজ। এতে বসতবাড়ি ও মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। যাদের জায়গা চিহ্নিতকরণ তালিকায় পড়ছে তারা উচ্ছেদ আতঙ্কে আহাজারি করছে। আর এ তালিকাতে রয়েছে হাজারো পরিবার। তারা এখন কোথায় বসতি করবে এ চিন্তায় প্রায় কান্নাকাটি করতে শোনা যাচ্ছে। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ১৯৬৪ সালে সরকারের অধিগ্রহণের বিপুল পরিমাণের জায়গা রয়েছে। আর এ জায়গায় এক্সপ্রেস ওয়ে নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক, সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শিশির কান্তি রাউত এ প্রতিবেদককে জানান, ‘২০১৮ সালে প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হবে। জমি অধিগ্রহণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখন প্রকল্পটির জন্য জমি চিহ্নিতকরণ কাজ চলছে। পরবর্তীতে নকশা এবং পুরাতন ফোরলেনের সাথে সমন্বয় করে যেটুকু জায়গার প্রয়োজন সেটুকু অধিগ্রহণ করা হবে।’ হাজারো পরিবারের উচ্ছেদ আতঙ্ক সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। এখনও জমি অধিগ্রহণ হয়নি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন