শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজনীতির গতিধারা পরিবর্তন করে হলেও সুন্দরবন রক্ষা করা হবে

প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সুন্দরবন রক্ষার অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা
স্টাফ রিপোর্টার : সুন্দরবন রক্ষায় বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ থেকে সরে না এলে প্রয়োজনে রাজনৈতিক গতিধারা পরিবর্তন করে হলেও রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতারা। এই বিষয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান।
গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘রামপাল চুক্তি ছুড়ে ফেলো, সুন্দরবন রক্ষা করো’ এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচিতে সংগঠটির নেতারা এ সব কথা বলেন। বক্তব্য শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বাঁ পাশে একটি মুক্ত ক্যানভাসের উদ্বোধন করা হয়। সকালে শুরু হয়ে এই কর্মসূচি চলে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। অবস্থানে প্রতিবাদী গান, নাটিকা, মুক্ত ক্যানভাসে ছবি আঁকাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনের ফাঁকে ফাঁকে চলে বক্তৃতা।
কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, রামপালে এই কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। যে আন্দোলনের জাগরণ সারা দেশব্যাপী আমরা সূচনা করেছি, সেটা স্তব্ধ হবে না। সেই আগুনে রাজনীতির পরিণতি কী হবে, সেটা সরকারকে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি। রাজনীতিতে পরিবর্তন এনে হলেও আমরা সুন্দরবনকে রক্ষা করার সংগ্রাম অব্যাহত রাখব। প্রধানমন্ত্রী আপনি এটা জেনে রাখবেন।
সুন্দরবনকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার সংগ্রামে দল-মত নির্বিশেষ সকলকে আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী দিনের রাজনীতি কোন পথে যাবে আমি জানি না। দেশবাসী চূড়ান্তভাবে সেই সিদ্ধান্ত নেবে, একদিন না একদিন দেশে বামপন্থীদের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু আমরাও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, আমরা ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে যদি সুন্দরবন ধ্বংস করে দেয়া হয়, তাহলে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার কাজে আরও কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হব। তিনি আরো বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। তথ্য-প্রমাণ দিয়ে তা প্রমাণ করা হয়েছে। আমাদের এই সংগ্রাম বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে নয়; এই সংগ্রাম সুন্দরবন রক্ষার জন্য।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, একদিকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলবেন, অন্যদিকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করবেনÑ এটা বন্ধ করেন। অতীতের আন্দোলনের কথা স্মরণ করে এই প্রকল্প থেকে সরে আসেন। তা না হলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এরপর বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। সেই আন্দোলনে রাজনৈতিক অবস্থার গতি পরিবর্তনও ঘটে যেতে পারে। সে বিষয়টা মাথায় রাখবেন।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি লুটেরাদের স্বার্থকে রক্ষার জন্য এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এতে নানা উন্নয়নের চিত্র দেখানো হচ্ছে। ভাড়া করা বিশেষজ্ঞরা শোনাচ্ছেন, সুন্দরবন ধ্বংস হবে না। সরকারের উদ্দেশে খালেকুজ্জামান বলেন, যখন বুড়িগঙ্গার দুর্গন্ধ দূর করতে পারেন না, খালে পড়ে গেলে শিশু উদ্ধার করতে পারেন না, হাতিরঝিলে নাকে রুমাল চেপে যেতে হয়, তখন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর সুন্দরবন রক্ষা হবে, তা আমরা মানি না।
কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বলা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নে আমাদের উপকার হবে। আমাদের যদি উপকার হয় তবে ভারত কেন এই প্রকল্পটি আমাদের হাতে দিচ্ছে না। সুন্দরবনকে রক্ষা করার যুদ্ধ জীবন-মরণের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে যদি বাংলাদেশের মানুষ পরাজিত হয় তাহলে আরো অনেক জায়গায় তার পরাজয় ঘটবে। এই বন নিঃশেষ হয়ে গেলে বাংলাদেশের সব বন নিঃশেষ হয়ে যাবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, প্রবচন আছে, উপকারীকে বাঘে খায়। সেই উপকারীকে বাঘে খাচ্ছে। আসলে বাঘে খাচ্ছে না, খাচ্ছে একটি দানব এবং সে দানব সুন্দরবনকেও খাবে, বাঘকেও নিশ্চিহ্ন করে দেবে। এই দানব হচ্ছে পুঁজিবাদী লালসা পুঁজিবাদী শোষণ। সুন্দরবন আমাদের উপকার করে তা অনুভব করতে হয় প্রাকৃতিক যে বিপর্যয় আসে তাতে সুন্দরবন বুক পেতে দাঁড়ায়। এই বন আমরা নিজেরা তৈরি করিনি, উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। এখানে অসংখ্য জীব-বৈচিত্র্য আছে যেগুলো হারিয়ে গেলে তা আর কখনো পাওয়া যাবে না।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে মানুষ এই প্রকল্পের বিরদ্ধে প্রতিবাদ করছে। এখানে দাবি খুব স্পষ্ট, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সুন্দরবন বিনাশী সব প্রকল্প বাতিল করতে হবে। সারা দেশে বিভিন্ন মুনাফাগোষ্ঠী রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে শকুনের মতো চারদিক থেকে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। সুন্দরবন না থাকলে তাদের কোনো ক্ষতি নেই। তাদের কাছে সুন্দরবনের কোনো আর্থিক মূল্য নেই। কিন্তু ভূমির মূল্য লক্ষ-কোটি টাকা।
কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১ হাজার ৬০০ মানুষও এ প্রকল্প চায় না। এটা জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। প্রকল্পের যাঁরা জড়িত, তাঁদের নাম ১০ থেকে ১৫ বছর পরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সঙ্গে উচ্চারিত হবে।
কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। অবস্থান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, সুজন, নাগরিক ঐক্যসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন