স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। জামায়াত-শিবির সংশ্লিষ্টরাই বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নামে হামলা ও মানুষ খুন করছে। নিউ জেএমবি এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমই এখন জামায়াত-শিবিরের নতুন নাম। জঙ্গি মানেই জামায়াত, জঙ্গি মানেই শিবির এমনটি জানিয়েছেন র্যাব-পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
সারা দেশে বড় ধরনের নাশকতার ছক আঁটছে জামায়াত-শিবিরের নেতারা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যোগাযোগ করছে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষিত সদস্যদের সঙ্গে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের আত্মঘাতী করতে দেয়া হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। এ লক্ষ্যে দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করাসহ সরকারকে চাপে ফেলতে ভয়াবহ এ ষড়যন্ত্র করছে দলটি। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পেশ করা একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে।
জঙ্গি বিরোধী অভিযান জোরদার করার পর বিভিন্ন সময়ে আটক জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী। এরা এক সময় মানুষ খুন করার আগে রগ কেটে উল্লাস করত। আর এখন চাপাতি ও অন্যান্য ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে বর্বর হত্যাকা- চালাচ্ছে। অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের মতো জামায়াত-শিবিরকেও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের তালিকাভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। এমনটি জানিয়েছেন দেশের গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ। তারা বলছেন, সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা এবং চট্টগ্রাম, সিলেট থেকে গ্রেফতার জঙ্গিদের ব্যাপারে তথ্য যাছাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, এদের অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। এদের দমন করতে পারলেই এ দেশে জঙ্গিরা দুর্বল হয়ে যাবে।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) মো. মারুফ হাসান বলেন, জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) আড়ালে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা জঙ্গি তৎপরতায় সক্রিয়, জঙ্গি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে জামায়াত-শিবির দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ছক করছে বলেও দাবি করেছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশে কোনো আইএস’র অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশে আইএস মানে জামায়াত-শিবির। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে জামায়াত-শিবিরই বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের নাম ব্যবহার করে জঙ্গি হামলা ও জঙ্গি তৎপরতা চালাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, জঙ্গি মানে জামায়াত-শিবির, জামায়াত-শিবির মানেই জঙ্গি, মানুষ খুন এবং নাশকতা করাই তাদের কাজ। এ পর্যন্ত যেসব জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে তাদের অনেকেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী।
তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে দেশের ভামমর্যাদা বিনষ্ট করতে এবং দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতেই জামায়াত-শিবির জঙ্গি হামলায় জড়িত রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে কখনো আল কায়দা, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, নিউ জেএমবি বিভিন্ন জঙ্গি নামে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীও বিষয়টি জানে এবং তারা এ ব্যাপারে সজাগ আছে।
এদিকে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পেশ করা একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা দেশে বড় ধরনের নাশকতার ছক আঁটছে জামায়াত-শিবিরের নেতারা। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যোগাযোগ করছে একাধিক জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষিত সদস্যদের সঙ্গে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের আত্মঘাতী হওয়ারও প্রলোভনও দেখানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা। নাশকতার মাধ্যমে দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করাসহ সরকারকে চাপে ফেলতে ভয়াবহ এ ষড়যন্ত্র করছে দলটি। এর প্রমাণ হিসাবে গোয়েন্দা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, চলতি বছরের শুরুতে রাজধানীর রামপুরা থেকে কোটি টাকাসহ জামায়াতের ৫ নেতা গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিলে তারা হামলার পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন নাশকতার কথা স্বীকার করেছেন। ৩ জানুয়ারি বনশ্রী এলাকা থেকে ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকাসহ গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে গিয়াস উদ্দিন ও আমিনুর রহমান জামায়াতের রুকন। অপর তিনজন শাহজাদুর রহমান সোহেল, আবুল হাশেম এবং ওসমান গনি জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের কর্মী। সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ এসব তথ্য।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাটি বলেছে, রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছিল জামায়াত। এ জন্য শিবিরের কিছু নেতাকর্মীকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের জঙ্গি সদস্যদের যোগাযোগের দায়িত্ব দেয়া হয়। উদ্ধারকৃত টাকার মধ্যে নাশকতার জন্য একটি জঙ্গি সংগঠনের প্রশিক্ষিত ৫ আত্মঘাতীকে দেয়ার কথা ছিল ৫০ লাখ টাকা। বাকি ৫০ লাখ টাকা ওই জঙ্গি সংগঠনটির নিজস্ব তহবিলে জমা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল জামায়াত। এর বাইরে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও পর্যায়ক্রমে হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। এজন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) এবং চট্টগ্রামভিত্তিক ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সঙ্গে চুক্তিও করেছে।
এ বিষয়ে আইজিপি একেএম শহীদুল হক বলেন, জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এরই মধ্যে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) নিরাপত্তা দু’ধাপ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া ডিপ্লোম্যাটিক জোন ও মন্ত্রী পাড়ায় কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি চলছে।
গোয়েন্দা সংস্থা এসব বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়। এ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি চিরতরে বিলুপ্ত করার পাঁয়তারা চলছে বলে ধুয়া তুলে জামায়াত ছোট-বড় ২১টি জঙ্গি সংগঠনকে ইতিমধ্যেই দলে ভিড়িয়েছে। আদর্শ ও মতের বিভেদ পেছনে রেখে গোপনে গড়ে তুলছে পারস্পরিক সম্পর্ক, সহযোগিতা এবং অস্ত্র-বিস্ফোরকের আদান-প্রদানের যোগসূত্র। বড় ধরনের নাশকতায় তাদের দলবদ্ধ হয়ে হামলা চালানোরও ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করছে। গোয়েন্দারা জানান, হরকাতুল জিহাদ (হুজি) ও জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশসহ (জেএমবি) শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে জামায়াত-শিবির।
জানা গেছে, গ্রেফতারের পর যেসব কারাগারে জামায়াত-শিবিরের বেশিসংখ্যক নেতাকর্মী আটক আছে ওই কারাগারগুলোতে চক্রটি প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে। বন্দি কর্মীদের দেখভাল এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার জন্য কারাগারের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেছনে অর্থ ঢালা হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি চট্রগ্রাম মহানগরীর কাঠঘর এলাকা থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশ বলেছে, জামায়াত-শিবিরের নতুন নাম আনসারউল্লাহ বাংলাটিম। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেনÑ আতিকুল হাসান ইমন (২৬), জামশেদুল আলম হৃদয় (২১), আক্কাছ আলী নয়ন (২৩), মো. রুবেল (২৬) ও মহিউদ্দিন (১৮)। এরা সবাই জামায়াত-শিবিরের সক্রিয় কর্মী বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদের মধ্যে আক্কাছ আলী নয়ন শিবিরের ‘সাথী’ (পদবী), এমন তথ্যও আছে বলে দাবি করেন উপ কমিশনার মো. মারুফ হাসান। এছাড়া গ্রেপ্তার হওয়া একজন মাদরাসায় পড়াশোনা করেছেন, বাকি সবাই সাধারণ শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত বলেও জানান তিনি।
চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মারুফ হাসান বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম এখন জামায়াত-শিবিরের নতুন নাম। স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের ব্যানারে কাজ করছে। দেশে যে জঙ্গি গ্রুপ ছিল তাদের দিয়েই জামায়াত-শিবির সক্রিয়ভাবে কাজ করানোর চেষ্টা করছে। নিজেরা এ ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে।
চট্টগ্রামে উগ্রবাদী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের রনি শিবির নেতা। পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের তেকোটা গ্রামের বাসিন্দা রনি বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পঞ্চম সেমিস্টারের ছাত্র।
পুলিশ জানায়, আটকের পর রনি স্বীকার করেছেন তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রামের শিবিরের নেতা। পাশাপাশি আনসারুল্লাহর সঙ্গে জড়িত তিনি।
গতকাল রাজধানীর বাড্ডা থেকে গ্রেফতার ১৮ জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীও জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বৈঠকে বসেছিল বলে দাবি করছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, এরা জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত। ওরা বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বৈঠকে বসেছিল। গতকাল তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। অন্যদিকে জামায়াত বলছে, তাদের দলের নতুন আমির নির্বাচনের জন্য বৈঠকে বসেছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন