বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অপরাধীরা বেপরোয়া

বাড়ছে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি ডাকাতি ঠেকাতে পুলিশ-জনতার যৌথ পাহারা

খলিলুর রহমান | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশজুড়ে বাড়ছে শীত। আর শীতের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চুরি-ছিনতাই-ডাকাতিও। এছাড়াও কোনো কোনো এলাকায় শীত আসলে এ ধরনের অপরাধ বৃদ্ধি পায়। অনেক এলাকায় এসব অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশ-জনতা মিলে যৌথ পাহারা ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে পুলিশের ভাষ্য মতে চুরি-ছিনতাই আগের চেয়ে অনেক কমেছে। অভিযোগ কিংবা খবর পাওয়ার সাথে সাথেই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চুরি : গত ২০ নভেম্বর সকালে রাজধানীর শাহআলী ধানক্ষেতের মোড়ে ৩৬/এ নম্বর বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই বাসা থেকে দামি দুইটি মোবাইল ফোনসহ মূল্যমান জিনিসপত্র নিয়ে যায় চোর চক্রের সদস্যরা। পরবর্তীতে ওই বাসার বাসিন্দা মো. তানজিলুর রহমান তুষার মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। এখনো পর্যন্ত পুলিশ ওই ঘটনায় সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

এদিকে, এ ঘটনার পর সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, পাঞ্জাবি, টুপি ও পায়জামা পড়ে এক ব্যক্তি ওই বাসায় উঠে। ঘটনার পরপরই ওই ব্যক্তি আবার বের হয়ে যাচ্ছেন। ওই ব্যক্তিই বাসা থেকে মোবাইল ও দামি জিনিসপত্র চুরি করেছে বলে ধারণা করছেন বাসার বাসিন্দারা। তবে এখনো পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরপুর মডেল থানার এসআই আশিকুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিষয়টি জানা যাবে।

এছাড়াও গত ২৭ নভেম্বর রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সিলেট নগরীর আম্বরখানার হাউজিং এস্টেটে নিজ বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সময় পরিবারের কেউ বাসায় ছিলেন না। একই সময়ে পাশের আরেকটি বাসায়ও চুরি সংঘটিত হয়। মাত্র এক ঘণ্টার ভেতরেই ওই বাসা থেকে চোর দল নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।

স্থানীয় কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানান, ওই দিন রাত ৯টার দিকে হাউজিং এস্টেট ২৮/২ নং বাসার নিচ তলার বাসিন্দা আশিকুর রহমান চৌধুরী পরিবারসহ এক আত্মীয়ের জানাজা পরবর্তী খোঁজখবর নিতে তাদের বাসায় যান। এরপর রাত ১০ টার দিকে বাসায় ফিরে দেখেন দরজার তালা ভাঙা। ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন বাসার সবকিছু তছনছ করে রাখা। চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হলে খোঁজ করে দেখেন প্রায় ২৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে গেছে চোরেরা। এছাড়াও পাশের বাসায় শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বাসার তালাও ভাঙা। তবে বাসাটি খালি থাকায় কিছুই নিয়ে যেতে পারেনি। তবে জিনিসপত্র সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে চোরেরা। এর আগে গত ১৯ নভেম্বর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, বিলকিস বেগম নামের এক নারী গত ১৬ নভেম্বর ছদ্মনাম নাজমা ব্যবহার করে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। গত ১৯ নভেম্বর বিকালের দিকে ওই বাসার গৃহকর্তা ও তার মিসেস বাসার বাইরে গেলে বিলকিস বেগম আলমারি ভেঙে নগদ ১০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ২০ নভেম্বর রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ নভেম্বর ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার হাজংপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে বিলকিস বেগমকে গ্রেফতরা করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত বিলকিস বেগম প্রকৃতপক্ষে পেশাদার গৃহকর্মী নয়। তিনি ছদ্মনাম ব্যবহার করে কৌশলে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিতেন। এরপর সময় সুযোগ বুঝে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সামগ্রী চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যেতেন। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

ডাকাতি : গত ২৭ নভেম্বর ভোর রাতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী সৌদিয়া পরিবহনের একটি বাসে যাত্রী বেশে একদল ডাকাত হানা দেয়। বাস যাত্রীরা জানায়, ঘটনার দিন চট্টগ্রামের সিনেমা প্যালেসে রাত সাড়ে ১২টায় সৌদিয়া পরিবহনের বাসটি কক্সবাজারের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। রাত পৌনে একটার দিকে বাসটিতে শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে লুঙ্গিপড়া সাত জন লোক উঠেন। বাসটি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী এলাকায় পৌঁছালে ডাকাত দল অস্ত্রের মুখে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয় ডাকাত দলের সদস্যরা।

এসময় ডাকাত দলের সদস্যরা দুই জনকে গুলি করে এবং এক জনকে কুপিয়ে আহত করে। যাত্রীদের কাছ থেকে মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও এলাকায় পৌঁছালে বাস থেকে নেমে যায়। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় দন্ডবিধির ৩৯৫ ও ৩৯৭ ধারায় একটি মামলা করা হয়। পরে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরা এর ছায়া তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে এ ঘটনার সাথে জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তবে র‌্যাব জানায়, ডাকাতির ঘটনায় সাত জন জড়িত। পলাতক একজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ছিনতাই : গত সোমবার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মগবাজার রেললাইন ধরে বাসায় ফেরার পথে মিথুন চৌধুরী নামের এক সংবাদকর্মীর চোখে মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে পকেটের টাকা নিয়ে গেছে ছিনতাইকারী। ছিনতাইয়ের শিকার মিথুন আরটিভিতে কর্মরত আছেন। তিনি মগবাজার এলাকাতে থাকেন। মিথুন বলেন, সোমবার রাতে রেললাইন ধরে রাতে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ পেছন থেকে এসে কেউ আমার চোখে শুকনো মরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দেয়। মুহূর্তের মধ্যে আমার পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। প্যান্টের অন্য পকেটে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও আমার বাধার মুখে ব্যর্থ হয়। তিনি আরো জানান, এ ঘটনার পর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তিনি বাসায় বিশ্রামে রয়েছেন। সুস্থ হয়ে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।

একই দিন রাতে মোহাম্মদপুর থানার জাফরাবাদ এলাকায় দৈনিক ভোরের কাগজের সিনিয়র প্রতিবেদক দেব দুলাল মিত্রের গলায় ছুরি ধরে মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক। দেব দুলাল মিত্র জানান, সোমবার রাতে ধানমন্ডির শংকর বাসস্ট্যান্ড থেকে হেঁটে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। পশ্চিম ধানমন্ডি জামে মসজিদ পার হওয়ার পর বিপরীত দিক থেকে রিকশায় আসা দুই ছিনতাইকারী তার পথরোধ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক যুবক তার গলায় ছুরি ধরে, আর অন্যজন পকেট থেকে মানিব্যাগ ও দুটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে রিকশাসহ ছিনতাইকারীরা সটকে পড়ে।
এদিকে, শীত মৌসুমে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায় ডাকাতি বেড়ে যায় তাই এ বছর একটি বিকল্প উপায় হিসেবে ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ-জনতা মিলে যৌথ পাহারা ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলার সাত উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে মোড়ে প্রতিরাতে স্থানীয় জনতা এবং পুলিশ মিলে পাহারা দিচ্ছেন। এ উদ্যোগকে নিরাপদ মনে করছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়রা জানান, তারা নিয়ম করে পুলিশের সাথে পাহারা দেন। তবে পুলিশ ছাড়াও তারা পাহারা দেন। সমস্যা হলে মোবাইল ফোনে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করেন। জনগণের স্বার্থে তাদেরকে সাথে নিয়ে পুলিশের এই সহযোগিতাপূর্ণ অংশগ্রহণকে পূর্ণ সমর্থন করছেন স্থানীয় জনগণ। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, পুলিশ জনগণের অনুপাত অনেক কম। এই প্রেক্ষাপটে মৌলভীবাজারে অপরাধ দমনে পুলিশ জনতার যৌথ প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, করোনাকালে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষসহ অনেকের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং আয় রোজগারের উপায় বাধাগ্রস্থ হয়েছে। আয় রোজগারের স্বাভাবিক পথ বন্ধ হওয়ায় কেউ কেউ বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে। চুরি, ছিনতাই ও প্রতারণার মতো অপরাধে জড়াচ্ছে। তাই কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ পুলিশ এ বিষয়ে সজাগ রয়েছে। আমরা সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন