স্টাফ রিপোর্টার : এখনো প্রাক-নিবন্ধিত ৪০ হাজার হজযাত্রী রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি সউদী সরকারের কাছ থেকে অপেক্ষমাণ হজযাত্রীদের নতুন কোটা পাওয়ার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দরুন সউদী আরবে এবার প্রায় ৭ লাখ হজযাত্রীর কোটা খালি রয়েছে। ইতোমধ্যে পাকিস্তান ও ভারতকে ৫০ হাজার অতিরিক্ত হজযাত্রীর কোটা বরাদ্দ দিয়েছে সউদী সরকার।
অপেক্ষমাণ হজযাত্রীদের হজে পাঠাতে অতিরিক্ত ২০ হাজার হজযাত্রীর কোটা বরাদ্দ আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মেলন কক্ষে হাব সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এ দাবি উত্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাব সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন মিন্টু।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ, রেজাউল করিম উজ্জল, গোলাম ফারুক, মাওলানা ক্বারী গোলাম মোস্তফা, মাওলানা জাকারিয়া, মো: শাহ আলী, আলহাজ মুজিবুল হক শুক্কুর, শহীদুল্লাহ খান, মাওলানা বুলবুলি ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান হাব নেতারা ৭০০ টাকার ট্রলিব্যাগ ১৯০০ টাকা করে নিয়ে প্রায় ১৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই টাকা এজেন্সির মালিকদের ফেরত দিতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কোটা বাণিজ্য এবং টিকিট সিন্ডিকেটের কারণে বর্তমানে ২০টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। কতিপয় হাব নেতার রোহিঙ্গা ও যুদ্ধাপরাধী পাচার করার জন্য এবং ১০০ কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য করার লক্ষ্যে রিপ্লেস করার দাবিতে ধর্ম সচিব এবং পরিচালক হজকে অপসারণের দাবিতে হাব ২৪ ঘণ্টা আলটিমেটাম দিয়েছে। এতে কতিপয় দাবি পেশ করা হয়। দাবিসমূহ হচ্ছেÑ ২০ হাজার কোটা বরাদ্দের মাধ্যমে অবিলম্বে হাজীদের হজে যাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, থার্ড ক্যারিয়ার উন্মুক্ত করে সকল হাজী পাঠানোর ব্যবস্থা করা, ৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি বাতিল করা, হজযাত্রীদের ট্রলিব্যাগ বাণিজ্যের ১৩ কোটি টাকা এজেন্সির মালিকদের ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা, ১৭০০ হাজী অবৈধ বণ্টনের তদন্তের মাধ্যমে ঘুষ কেলেঙ্কারি তদন্ত ও বিচার করা, আজ ২২ আগস্টের মধ্যে ২০ হাজার কোটার ব্যবস্থা করতে সরকার ব্যর্থ হলে হাব সমন্বয় পরিষদের সব সদস্য অপেক্ষমাণ হজযাত্রীদের নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবে হজের ইহরামের কাপড় পরে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।
হজ ওমরাহ এজেন্সিজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
এদিকে, গতকাল সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে হজ ওমরাহ এজেন্সিজ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ হাব নেতৃবৃন্দকে মানব পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ, হজ সিন্ডিকেট উল্লেখ করে হাবের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে হাবে একজন প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, গত বছর ওমরার নামে সউদীতে মানব পাচারকারী এজেন্সিগুলোকে শাস্তি দেয়ার কারণে বর্তমান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সৎ, যোগ্য, ন্যায়পরায়ণ ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুল জলিল ও পরিচালক হজ ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তাদের অপসারণের আলটিমেটাম ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হজ ফ্লাইট বাতিলের মূল হোতারাই হচ্ছে হজ সিন্ডিকেটের নায়ক। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহ্বায়ক হাবের সাবেক সভাপতি আলহাজ জামাল উদ্দিন আহম্মদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদস্য সচিব আলহাজ আবদুল্লাহ আল নাসের। আরো উপস্থিত ছিলেন হাব সদস্য আলহাজ নুরুল হক ও বশির আহমেদ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হাব সভাপতি ও হাব মহাসচিবের নেতৃত্বে হজ টিকিট সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। শেষ পর্যায়ে হজ ফ্লাইটের টিকিটপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত নিয়ে সাধারণ এজেন্টদের নিকট টিকিট দেবে এতে করে প্রায় ২৫ হাজার হজযাত্রীর নিকট থেকে হাতিয়ে নেবে ৭৫ কোটি টাকা।
পবিত্র ওমরাহ পালন নিয়ে গত বছর নজিরবিহীন কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। গত ডিসেম্বরে ওমরার নামে মানব পাচারের অভিযোগে ৯৫টি এজেন্সিকে শাস্তি দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৭৭ হাজার হজ ভিসা হয়ে গেছে। প্রায় ৪৫ হাজার ৯৯৩ জন হজযাত্রী সউদী আরবে পৌঁছেছেন। বাকি এখনো প্রায় ২৩ হাজার হজ ভিসা এজেন্সির নিকট আছে। পরপর বিমান ও সউদী হজ ফ্লাইট বাতিল হওয়ার জন্য ওমরার নামে মানব পাচারকারীরা পরিচালক হজ ও ধর্ম সচিবকে দায়ী করছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।
হাবের সভাপতি ও মহাসচিব গত নির্বাচনে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ট্রলিব্যাগ এজেন্সিদের দেয়ার কথা বললেও ট্রলিব্যাগ এজেন্সিকে না দিয়ে নি¤œমানের ট্রলিব্যাগ এজেন্সিদের সরবরাহ করেছে যার প্রতিটির মূল্য ১ হাজার টাকার বেশি হবে না। ট্রলিব্যাগপ্রতি ১ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে এই চক্র ৯৬,২৫২ জন হজযাত্রীর ট্রলিব্যাগে দুর্নীতি করে কামিয়ে নিয়েছে প্রায় ৯ কোটি ৬২ লাখ ৫২ হাজার টাকা। এরপর গাইডপ্রতি ৫০ টাকা মানের আইডি কার্ড দেয়ার ধুয়া তুলে গাইডপ্রতি ৩ হাজার টাকা করে প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ টাকার দুর্নীতি করে কামাই করেছে। ২০১৫ সালে এই চক্রই ৫ হাজার কোটার হজযাত্রীর কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি করে ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ভুয়া হিসাব দিয়ে ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের মোয়াল্লেম ফির টাকার সাথে ৫ হাজার হাজীর ধর্ম মন্ত্রণালয় হতে ঋণকৃত ৩৬ কোটি টাকা অ্যাডজাস্ট করার জন্য পত্র দাখিল করে যা ফৌজদারি দ-বিধি ও দুর্নীতি আইনে অপরাধ করেছে তারা। আমরা এই ৫ হাজার হাজীর ফাইলটি ধর্ম মন্ত্রণালয় হতে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর জন্য ধর্ম সচিবের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন