শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

নন্দিত নারী জাতি ও ইসলাম

প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মাওলানা এইচ এম গোলাম কিবরিয়া রাকিব
॥ তিন ॥
হযরত উমর (রা.)-এর খিলাফতকালে আসমা বিনতে মাখরামা (রা) কে তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ্ ইবনে আবু রাবীয়াহ ইয়ামান থেকে আতর পাঠাতেন আর তিনি ঐ আতরের করবার করতেন (আত-তাবাকাত)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) এর স্ত্রী যয়নব (রা) ছিলেন কুটির শিল্পের মালিক। তিনি তা বিক্রি করে ঘর-সংসারের খরচাদি চালাতেন। একদিন তিনি নবী করীম (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আমি একজন কুটিরশিল্পী। আমি তৈরি করা দ্রব্য বিক্রি করি। এছাড়া আমার স্বামী এবং আমার সন্তানদের জীবিকার অন্য কোন উপায় নেই।’ রাসূলে করীম (সা.) বললেন, ‘এভাবে উপার্জন করে তুমি তোমার ঘর-সংসারের প্রয়োজন পূরণ করছো। এতে তুমি দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে’ (আত-তাবাকাত)।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর স্ত্রী যয়নব (রা.) ছিলেন কুটির শিল্পের মালিক। তিনি তা বিক্রি করে ঘর-সংসারের খরচাদি চালাতেন। একদিন তিনি নবী করীম (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আমি একজন কুটিরশিল্পী। আমি তৈরি করা দ্রব্য বিক্রি করি। এছাড়া আমার স্বামী এবং আমার সন্তানদের জীবিকার অন্য কোন উপায় নেই।’ রাসূলে করীম (সা.) বললেন, ‘এভাবে উপার্জন করে তুমি তোমার ঘর সংসারের প্রয়োজন পূরণ করছো। এতে তুমি দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী হবে’ (আত-তাবাকাত)।
এ আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উপার্জনের জন্য কাজ করা ও সেজন্যে ঘরের বাইরে যাওয়া নারীদের জন্য শরীয়াত সম্মত এবং তা শরীয়াতের বিধি-নিষেধ পালন সাপেক্ষে করতে হবে।
শাসককে উপদেশদানে ও স্বাধীন মত প্রকাশে নারী : মুসলিম বিদূষী মহিলারা সমসাময়িক শাসকদের প্রয়োজনীয় উপদেশ দিতে এবং ত্রুটি ধরিয়ে দিতেও কিছুমাত্র দ্বিধাবোধ করতেন না। তাদের সামনে যখনই দ্বীনের পক্ষে কল্যাণকর কোন কাজ করার বা কোন পদক্ষে গ্রহণের সুযোগ এসেছে তখনই তাঁরা পূর্ণ আন্তরিকততাসহ নিঃস্বার্থভাবে সে কাজ করেছেন। সাধারণ মুসলিম জনতা তো বটেই, প্রশাসকরাও তাদের সমালোচনাকে সম্মান ও সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে গ্রহণ করেছেন এবং সেই উপদেশ নসীহত শুনে তাঁরা নিজেদের সংশোধন করে নিয়েছেন।
একবার হযরত মুয়াবিয়া (রা.) হযরত আয়েশা (রা.)-এর নিকট লিখে পাঠালেন, আমাকে এমন একটি সংক্ষিপ্ত উপদেশ দিন যা আমি সামনে রেখে চলবো। হযরত আয়েশা (রা.) তাঁকে নবী (সা.)-এর একটি বাণী লিখে পাঠালেন, “যে ব্যক্তি লোকজনকে অসন্তুষ্ট করে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চায়, লোকেরা তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। কেননা আল্লাহ তা’আলা তাকে লোকদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে লোকদের সন্তুষ্ট করতে চায়, আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে সেই জনতার হাতে সঁপে দেন” (তিরমিযী)।
উমর ফারুক (রা.) এক সময়ে মোহরানার পরিমাণ যথাসম্ভব কম করতে বললেন সঙ্গে সঙ্গে একজন মহিলা তার প্রতিবাদ করে বললেন, কুরআনে তো বলা হয়েছে, “তোমরা যদি তোমাদের স্ত্রীদের একস্তূপ পরিমাণ সম্পদও দাও, তাহলে তোমরা তার কিছুই ফিরিয়ে নিতে পারবে না।” এর বিপরীত কথা বলার বা আইন জারি করার কোন অধিকারই আপনার নেই (ফাতহুল বারী)। খলীফা এ মহিলার কথায় কিছুমাত্র অপমান বোধ করলেন না। তিনি সহজভাবে নিজের ভুল স্বীকার করে বললেন, “একজন মহিলা উমরের সঙ্গে বিতর্ক করলো এবং বিজয়ী হলো।”
আবেগ প্রকাশ ও পরামর্শ প্রদানের অধিকার : হযরত হাসান বসরী (র.) বলেছেন, মহানবী (সা.) নারীদের সাথেও পরামর্শ করতেন এবং তাদের অভিমত গ্রহণ করতেন (উয়ূনুল আখবার)।
মুসলমানদের জন্য বাহ্যত অপমানজনক চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর রাসূলে করীম (সা.) সাহাবায়ে কিরাম (রা.) কে হুদাইবিয়াতে ইহরাম খুলে ফেলা ও সঙ্গে করে নিয়ে আসা পশুগুলো জবেহ করার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম মাথা নিচু করে বসে থাকলেন। রাসূলে পাক (সা.) বিমর্ষ অবস্থায় তাঁবুতে ফিরে গেলেন। তার স্ত্রী হযরত উম্মে সালামা (রা.) ঘটনা শুনে বললেন, আপনি কাউকে আর কিছু না বলে নিজের পশুটি যবেহ করুন এবং ইহরাম খুলে ফেলুন। দেখবেন, সকলেই আপনার অনুসরণ করছে। কেউ আপনার আদেশ পালনে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হবে না।  রাসূলে করীম (সা.) এই পরামর্শ সানন্দে গ্রহণ করলেন এবং যখনই তিনি করণীয় সব কাজ করলেন, সাহাবায়ে কিরামও (রা.) তাঁর অনুসরণ করে পশু যবেহ করলেন এবং ইহ্রামমুক্ত হলেন (সহীহ বুখারী)।
লেখক : শিক্ষক, খতিব ও প্রাবন্ধিক
সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের পথ

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন