আল-হাসাকা শহরের পুনঃনিয়ন্ত্রণ নিতে কুর্দি বাহিনীর ব্যাপক অভিযান
ইনকিলাব ডেস্ক : প্রচন্ড সংঘর্ষ চলছে সিরিয়ান সরকারি বাহিনী ও কুর্দি বিদ্রোহীদের মধ্যে। রুশ মধ্যস্থতাকারীর প্রচেষ্টার পরও সরকারি বাহিনী এবং কুর্দি বিদ্রোহীদের মধ্যকার বিবাদ নিরসন না হওয়ায় নতুন করে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। খবরে বলা হয়, সিরিয়ায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে কুর্দিদের পিপলস প্রটেকশন ইউনিটসের (ওয়াইপিজে) যোদ্ধারা। গত সোমবার স্থানীয় সময় দিবাগত মধ্যরাত থেকে সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আল-হাসাকা শহরের পুনঃনিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে ওয়াইপিজের সদস্যরা। এ ছাড়া মানবিজ পুনরুদ্ধারের পর সিরিয়া-তুরস্ক সীমান্তের কয়েকটি অঞ্চলকে ইসলামিক স্টেটমুক্ত (আইএস) করতে শিগগিরই অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে মার্কিন সমর্থিত বিদ্রোহীগোষ্ঠী ফ্রি সিরিয়ান আর্মি। এদিকে, সিরিয়ায় তৃণমূলে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠন লোকাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি (এলসিসি) জানিয়েছে, দেশটিতে বিগত এক সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত আল-হাসাকা এলাকায় গত বৃহস্পতিবার পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিমান হামলা চালিয়েছিল সরকারি বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত কুর্দি বিদ্রোহীরা ওই হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারকে হুঁশিয়ারি দেয়। তবে সরকারি বাহিনী সেই হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে বিমান হামলা অব্যাহত রাখায় এবং দুই পক্ষের মধ্যে রুশ মধ্যস্থতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় পুরো আল-হাসাকা শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে অভিযান শুরু করেছে ওয়াইপিজে। প্রদেশটির বেশিরভাগ অংশই পাঁচ বছর ধরে কুর্দি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত সোমবারের এই অভিযান দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নাসওয়া জেলায় একটি সরকারি কম্পাউন্ড দখলের চেষ্টার মাধ্যমে শুরু হয়। তুর্কি কুর্দিদের সংগঠন কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সঙ্গে ওয়াইপিজের গভীর সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। আর তাই চলমান এই লড়াইয়ে পিকেকের কাছ থেকেও সামরিক সমর্থন পাবে বলে আশাবাদী ওয়াইপিজে। এর আগে আল-হাসাকা প্রদেশের সিরীয় সরকারের হাতে থাকা একমাত্র আরব সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল গুয়াইরানও দখল করে নিয়েছে তারা। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা গত সোমবার জানিয়েছিল, কুর্দি বিদ্রোহী এবং সরকার আল-হাসাকায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে, যদিও ওই বিবৃতির ঘণ্টা চারেক পর থেকেই দখল অভিযান শুরু করে কুর্দি বাহিনী। বার্তা সংস্থাগুলো জানায়, কুর্দি বাহিনীর সদস্যরা সরকারি স্থাপনাগুলো চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে। এর পাশাপাশি সরকারি বাহিনীকে আত্মসমর্পণ করতেও বলা হয়েছে। আত্মসমর্পণ না করলে তাদের মরতে হবে বলেও জানানো হয়েছে। গত সপ্তাহে সরকারি যুদ্ধবিমান প্রথমবারের মতো এই অঞ্চলে বিমান হামলা চালিয়েছিল। সরকারি বাহিনীর ওই বিমান হামলা এই অঞ্চলে যুদ্ধরত মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়। আর তাই মার্কিন নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোটবাহিনীও সরকারি স্থাপনা লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, দুই পক্ষের চলমান সংঘর্ষের ফলে এই অঞ্চলে বসবাসরত বেসামরিক লোকজনের জীবন হুমকির মধ্যে পড়েছে। সংস্থাগুলো আরো জানায়, কুর্দি বাহিনী সরকারের সঙ্গে আর কোনো ধরনের শান্তি চুক্তিতে যেতে প্রস্তুত নয়। বরং সরকারি বাহিনীর বিমান হামলার পর থেকেই কুর্দি বিদ্রোহীরা এই অঞ্চল থেকে সরকারি বাহিনীকে হটাতে বদ্ধপরিকর। তারই ফল হিসেবে সোমবারের ওই অভিযান শুরু হয়। বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন