শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাঙ্গামাটিতে হাজার হাজার আনসার বেতন ভাতা ও রেশন বঞ্চিত

প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৫ পিএম, ২৩ আগস্ট, ২০১৬

সৈয়দ মাহবুব আহামদ, রাঙ্গামাটি থেকে : রাঙ্গামাটিতে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত আনসার বাহিনীর বিরাট একটি অংশ বিনা বেতনেই অনেকটা স্বেচ্ছাশ্রমের ওপর ভিত্তি করেই পালন করে যাচ্ছে অর্পিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। নিজেদের পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আনসার ব্যাটালিয়নে যোগ দিলেও তারা প্রত্যাশিত বেতন ভাতা ও রেশন থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলায় প্রায় ৪৩ হাজারেরও অধিক আনসার-ভিডিপির সদস্য কর্মরত থাকলেও এতে প্রায় ৩৭ হাজারের মতো সদস্য কোনো প্রকার বেতন ভাতা পান না। তারা ‘নো ওয়ার্ক-নো পে’ এই ভিত্তিতে আনসারের সদস্যভুক্ত তালিকায় রয়েছেন।
রাঙ্গামাটি জেলায় ৫টি ধাপে আনসার বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত আছেন। তন্মধ্যে হিল বিডিপি স্তরে রয়েছে ৩ হাজার সদস্য। তারা মাসিক ৬ হাজার ৫০ টাকা বেতন ভাতা পান। হিল আনসার স্তরে ১২০ জন সদস্য রয়েছে। তারা প্রতি মাসে রেশনের পাশাপাশি বেতন হিসেবে পান ৯ হাজার টাকা। ৩য় স্তরে অঙ্গীভূত আনসার বাহিনীর সদস্য রয়েছে ২৫০ জন। তারা প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকা ও রেশন পেয়ে থাকেন। ৪র্থ স্তরে নিয়মিত ব্যাটালিয়ন আনসারে ২ হাজার ৫৫৪ জন সদস্য নিয়োজিত আছেন। তারাও প্রায় ৯ হাজার টাকার মতো বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। অবশিষ্ট প্রায় ৩৭ হাজারের মতো সদস্য সাধারণ আনসার বাহিনীতে নিয়োজিত থাকলেও তাদের সরকারিভাবে কোনো বেতন ভাতা ও রেশন প্রদান করা হয় না। সরকারিভাবে কোনো সংস্থাকে সহযোগিতা করার ডাক পড়লে তখন তারা কাজে নিয়োজিত হন এবং যে কয়দিন যে কাজে নিয়োজিত থাকেন সেই ক’দিনের একটি নির্দিষ্ট হারে সম্মানি ভাতা পেয়ে থাকেন। যাকে বলা হয় ‘নো ওয়ার্ক নো পে’। আনসার বাহিনীর বেতন ভাতাহীন বিশাল এই অংশের সদস্যদের কাগজে-পত্রে সাধারণ আনসার বাহিনীর ডায়রিতে নাম লেখা থাকলেও তারা কোনো বেতন ভাতা না পাওয়ায় চরম কষ্টে দিনাতিপাত করার পাশাপাশি দায়িত্ব পালনে হতাশা প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে রাঙ্গামাটি ডিস্ট্রিক্ট আনসার অ্যাডজুট্যান্ট অফিসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে আলাপ করলে তিনি উপরোক্ত তথ্যগুলো দিয়ে জানান, এসব সদস্য তাদের নিজ নিজ এলাকায় নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করে। দেশমাতৃকার স্বার্থে তাদের ডাকা হলে তারা স্বেচ্ছাসেবী সাধারণ (আনসার) হিসেবে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও কর্মকা-ে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তখন তাদের ওই দিনের জন্য একটি নামমাত্র ভাতা প্রদান করা হয়।
২৫০ অঙ্গীভূত আনসারদের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, এদের চাকরির মেয়াদকাল তিন বছর। এরপর নতুন ব্যাচ সংগ্রহ করা হয়। তাতে ৯ হাজার টাকার মতো তারা বেতন ভাতা পেয়ে থাকেন। ৫ম স্তরের রেগুলার ব্যাটালিয়ন আনসার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন ২ হাজার ৫০০ সদস্য। এদের চাকরির মেয়াদ ৬ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী সময়ে এদেরকে স্থায়ীকরণ করা হয়। এদের বেতনও ৯ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে এবং রেশন পেয়ে থাকেন।
রাঙ্গামাটিতে অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে আনসার বাহিনীর গুরুত্ব ও কর্মকা- ব্যাপক। তারা সেনাবাহিনী-পুলিশ ও বিডিআরকে প্রয়োজনমতো বিভিন্ন কর্মকা-ে সহযোগিতা করেন। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় রাঙ্গামাটিতে এই বাহিনীর তাৎপর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি গ্রামে ও ইউনিয়নে আনসার বাহিনীর বিরাট একটি অংশ শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকে। এরা জীবন বাজি রেখে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা স্থাপনে প্রয়োজনমতো সাড়া দিয়ে যে ভূমিকা পালন করেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু আনসার বাহিনীর ৪৩ হাজার সদস্যের মধ্যে প্রায় ৩৭ হাজার সাধারণ সদস্য সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর ডাকে সাড়া দিয়ে নিয়মিত কাজ করে গেলেও তারা শ্রমানুযায়ী কোনো প্রকার বেতন ভাতা না পাওয়ায় পারিবারিক জীবনযাপনে অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে দিনানিপাত করছেন। রাঙ্গামাটির ভৌগোলিক অবস্থান ও অস্থিতিশীলতার কারণে আনসার বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে সরকারের ডাকে বিভিন্ন সময়ে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় যে ধরনের অবদান রাখে তা উল্লেখযোগ্যও বটে। তাদের এই পরিশ্রমকে মূল্যায়ন করে রেগুলার আনসার সদস্যদের মতো নির্দিষ্ট অংকের বেতন ভাতা ও রেশন দিয়ে জীবিকা রক্ষায় সরকারি আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন