শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

আহলে কোরআন : স্বরূপ ও তার জবাব

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

তাদের দাবি, যেহেতু এই হাদিসে কোরআন ছাড়া অন্য কিছু লেখা নিষেধ করা হয়েছে, তাই পরবর্তী যুগেও হাদিস লেখা নিষেধ। তারা যে হাদিসটিকে তাদের মতের পক্ষের পায়, সেটি উল্লেখ করেই ক্ষান্ত হয়। তাদের কাছে এই হাদিসটি যদি সত্য বলে গণ্য হয়, তবে উপরোল্লিখিত হাদিসগুলোও সত্য। মতের পক্ষে কিছু পাওয়া গেলে গ্রহণ করতে হবে, আর বিপক্ষে সঠিক কথা হলেও তা গ্রহণ করা যাবে না, এটা তো সুবিধাবাদীদের নীতি। কিন্তু সঠিক নীতি হলো, সবগুলো হাদিসের প্রতি আমল করতে চাইলে উভয় ধরনের হাদিসের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে। কোন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে হাদিসগুলো বলা হয়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। এখানে তিন ধরনের সমাধান উল্লেখ করা যেতে পারে-

প্রথমত : প্রাধান্য দেওয়া। অনুমতি সংক্রান্ত হাদিসগুলোকে নিষেধাজ্ঞার হাদিসের ওপর প্রাধান্য দিতে হবে। কেননা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) উল্লেখ করেছেন-‘ইমাম বুখারি (রহ.) ও ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এই হাদিসের একজন বর্ণনাকারী ‘হাম্মাম’-এর কাছ থেকে মারফু সূত্রে বর্ণনা করে ভুল করেছেন। হাদিসটি মাওকুফ হিসেবেই সঠিক।’ অর্থাৎ এটি হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর কথা, রাসুল (সা.)-এর কথা নয়। তখন আর কোনো সমস্যা থাকে না। হাদিস লেখার অনুমতির ক্ষেত্রে যে মারফু হাদিসসমূহ আছে, তা-ই প্রাধান্য পাবে।
দ্বিতীয়ত : রহিত। অর্থাৎ হাদিস লেখার অনুমতি সংক্রান্ত হাদিস দ্বারা নিষিদ্ধতার হাদিস রহিত হয়ে গেছে। কেননা অনুমতি সংক্রান্ত হাদিসগুলো পরের; অর্থাৎ বিদায় হজের সময়কার। যা রাসুল (সা.)-এর তিরোধানের অল্প কিছুদিন পূর্বে ছিলো।
তৃতীয়ত : সামঞ্জস্য বিধান। ইমাম বায়হাকি (রহ.) বলেন-‘সম্ভবত ভুলে যাওয়া যে সকল সাহাবির ব্যাপারে আশঙ্কা করা হয়েছিলো, তাদেরকে লিখতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আর যাদের স্মরণশক্তি দৃঢ়, তাদেরকে লিখতে নিষেধ করা হয়েছে অথবা যারা কোরআন থেকে হাদিসকে পার্থক্য করতে পারবে না বা যাদের কাছে কোরআন ও হাদিস সংমিশ্রণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিলো, তাদেরকে লিখতে নিষেধ করা হয়েছে। আর যাদের ক্ষেত্রে ঐ সম্ভাবনা নেই, তাদেরকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
ইমাম জারকাশি (রহ.) সামঞ্জস্য বিধানের আরও কয়েকটি মত উল্লেখ করেছেন: (১) নিষেধাজ্ঞার হাদিস কেবল রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কেননা রহিতকরণ তখনও হচ্ছিলো। তখন হাদিস লিখলে রহিতকারী হাদিস ও রহিতকৃত হাদিস সংমিশ্রিত হয়ে যাবে, তাই নিষেধ করা হয়েছিলো। যেমন- বিদায় হজের খুতবায় আবু শাহকে হাদিস লিখে দিতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। (২) নিষেধের কারণ ছিলো, যাতে লেখক শুধু হাদিসের লিখিত বস্তুর ওপর ভরসা করে। ফলে মুখস্থ করার প্রবণতা হ্রাস পাবে। (৩) যাতে কোরআনের সমতুল্য আরেকটি কিতাব না রাখা হয়, তাই নিষেধ করা হয়েছিলো।
এই মতবিরোধ কেবল প্রথম যুগের জন্য প্রযোজ্য ছিলো। পরবর্তীতে উম্মতে মুসলিমার সকলেই হাদিস লিপিবদ্ধ করার বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেন। তাই গ্রন্থাকারে ইমাম মালেক (রহ.) সর্বপ্রথম হাদিসের গ্রন্থ লিখেছেন। যা ‘মুয়াত্তা’ নামে মুসলিম সমাজে পরিচিত। আজ পর্যন্ত সেই কিতাব মুসলমানদের কাছে নির্ভরযোগ্য ও সমাদৃত হাদিস গ্রন্থ। তিনি ৯৩ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন। অর্থাৎ ইমাম বুখারি (রহ.)-এর জন্মের প্রায় একশো বছর পূর্বে। আর ইমাম মালেক (রহ.) হজরত রাবিয়া (রহ.)-এর কাছ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। যিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৩৬ হিজরি সনে। হজরত রাবিয়া (রহ.) অসংখ্য সাহাবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের থেকে হাদিস গ্রহণ করেছিলেন। ইমাম মালেক (রহ.) ইবনে শিহাব জুহরি (রহ.) থেকেও হাদিস সংগ্রহ করেছেন। যিনি রাসুল (সা.)-এর দশের অধিক সাহাবির সাক্ষাত লাভ করেছেন এবং তাদের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন। ইমাম মালেক (রহ.) হজরত নাফে (রহ.)-এর কাছ থেকেও ৮০টি হাদিস সংগ্রহ করেছেন।
তিনি বড় তাবেঈদের অন্যতম ছিলেন। তিনি সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.)-এর ৩০ বছর খেদমত করেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন। হজরত নাফে (রহ.) আরও হাদিস গ্রহণ করেছেন হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.), হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.), হজরত উম্মে সালামা (রা.), হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-সহ প্রমুখ সাহাবি থেকে। হজরত নাফে (রহ.) ১৫৯ হিজরিতে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। অর্থাৎ ইমাম বুখারি (রহ.)-এর জন্মেরও ২৫ বছর পূর্বে।
আর ১০১ হিজরিতে পঞ্চম খলিফা নামে পরিচিত হজরত উমর ইবনে আবদুল আজিজ যখন খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন (অর্থাৎ ইমাম বুখারি রহ.-এর জন্মের ৯৩ বছর পূর্বে), তখন তিনি রাসুল (সা.)-এর হাদিস সংগ্রহের জন্য অধ্যাদেশ জারি করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন