শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অ্যাভিয়েশন খাতে ছন্দপতন

‘নতুন ধরন’ করোনায় ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

পরিস্থিতি বুঝে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করা হবে : মাহবুব আলী

করোনাভাইরাসের ‘নতুন ধরন’ (স্ট্রেইন) সন্ধান মেলায় নতুন করে শঙ্কার ছায়া পড়েছে সারাবিশ্বে। আগের ভাইরাসের চেয়ে ৭০ গুণ দ্রুত হারে ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস। মূলত যুক্তরাজ্য থেকে এই ভাইরাস ছাড়ানোর কারণে সে দেশের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিল (যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন) করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বাংলাদেশ এখনো যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট চালু রাখলেও ইতোমধ্যে ৪০টি দেশ তাদের ফ্লাইট বাতিল করেছে। এ অবস্থায় গতকাল বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেছেন, পরিস্থিতি বুঝে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হবে।
করোনাভাইরাসের এই নতুন ধরনের কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সউদী আরব, ওমান ও কুয়েত ইতোমধ্যে তাদের সব ফ্লাইট বাতিলের পাশাপাশি সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বাতিল করেছে। বাংলাদেশ বিমানও এই তিনটি দেশের সঙ্গে তাদের সব ফ্লাইট বাতিল করেছে।

জানতে চাইলে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রæপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর আমাদের যেভাবে চলতে বলবে আমরা সেভাবেই চলব। তবে নতুন করোনাভাইরাস নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এখন আমাদের সবার প্রধান কাজ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (সিভিল অ্যাভিয়েশন) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, নতুন কোনো নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হচ্ছে না। নতুন নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমরা প্রশমনের ব্যবস্থা নিয়েছি। যেমন যুক্তরাজ্য থেকে যারা আসবে তাদের আলাদাভাবে স্ক্রিনিং করা হবে। এ বিষয়ে ডাক্তার ও ইমিগ্রেশনে যারা আচেন সবাইকে অবগত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে যারা আসবে তাদের একটি তালিকা বিমানগুলোকে আগেই আমাদের দিতে বলা হয়েছে। আর এটা দেখেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নতুন করোনার সংক্রমণের কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের পথে হাঁটতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। যার কারণে বিমানখাতে নতুন করে আবার ধাক্কা লেগেছে। অপরদিকে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্লাইট বাতিলের বিষয়ে গত মঙ্গলবার আলোচনায় বসে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সেখানে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে এখনই ফ্লাইট বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বরং স্বাস্থ্য সচেতনার বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে যারা যুক্তরাজ্য থেকে আসবেন তাদের জন্য নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এরই মধ্যে বিদেশ থেকে যেসব যাত্রী বাংলাদেশে আসছেন তাদের করোনা নেগেটিভ সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া করোনা সনদ ছাড়া কয়েকটি বিমান দেশে যাত্রী বহন করেছে যার ফলে সেসব বিমানকে জরিমানাও করা হয়েছে।

জানা যায়, গত ২২ ডিসেম্বর লিবিয়া থেকে ১৫৩ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় অবতরণ করে বুরাক এয়ারের একটি বিশেষ ফ্লাইট। কিন্ত সব যাত্রীর করোনা সনদ না থাকায় বিমানটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমান করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ যাত্রী এনে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজকে। একইসঙ্গে যাত্রীকেও ৩ হাজার টাকা জরিমান এবং হাসপাতালে পাঠানো হয়। ১৪ এবং ১৫ ডিসেম্বরও সউদী এয়ারলাইন্সে করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী আসে বাংলাদেশে। ফলে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয় বিমানটিকে। ১৩ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ যাত্রী আনায় এয়ারএশিয়াকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এমনকি ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানও করোনা সনদ ছাড়া যাত্রী আনায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ১০ ডিসেম্বর করোনা পজিটিভ সনদ ছাড়া যাত্রী আনায় মালদ্বীপ এয়ারলাইন্সকে ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমান করা হয়।
এদিকে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি দেয় বিমানবন্দরের পরিচালক। এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। ফলে করোনা নিয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, আমাদের যে ক্ষতি হয়েছিল সেটা আমরা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এরই মধ্যে আবার করোনাভাইরাসের নতুন আক্রমণ শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। কি হবে সামনে আর কতটুকু ক্ষতি হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আবারও আমরা ক্ষতির সম্মুখিন হতে যাচ্ছি।

করোনা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার কথা জানিয়ে প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হবে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা মহড়া অনুষ্ঠানে তিনি জানান, বেসামরিক বিমান পরিবহন, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বিতভাবে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এভাবেই বিমান চলাচল অব্যাহত থাকবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, স¤প্রতি যুক্তরাজ্য থেকে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সে দেশ থেকে আগত যাত্রীদের বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হলে তার পিসিআর ল্যাব টেস্ট করা হবে। বিদেশ ফেরত সব যাত্রীদের পিসিআর টেস্ট নেগেটিভ রিপোর্ট আনা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন