বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সারাদেশে নৌযান শ্রমিক ধর্মঘট চলছে

প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:১৩ এএম, ২৪ আগস্ট, ২০১৬

শ্রমিক-মালিকরা সমঝোতায় না আসলে আইনানুগ ব্যবস্থা : নৌমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা : মজুরি বাড়ানোর দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছে দেশের নৌযান শ্রমিকরা। সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সারাদেশে এই কর্মবিরতি শুরু করে নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। গত ২০ এপ্রিল মজুরি বৃদ্ধিসহ মোট ১৫ দফা দাবিতে কর্মবিরতি ডেকেছিল তারা। মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে মালিক-শ্রমিক সমঝোতা না হওয়ায় চার মাসের মাথায় ফের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে নৌযান শ্রমিকরা। ধর্মঘটের ফলে সারাদেশের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে নৌ শ্রমিক ও মালিকরা সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নৌপরিবহন মন্ত্রী বলেন, ধর্মঘটের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। নৌপরিবহন শ্রমিকরা কোন নোটিশ দিয়ে ধর্মঘট ডাকেনি। তারা বলছেন কর্মবিরতি। ধর্মঘট হলে তো নোটিশ দেওয়ার কথা। আমাদের কাছে কোন নোটিশ নেই।
তিনি বলেন, সমস্যা শুধু মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে। মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। মজুরি নির্ধারণ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি ঢাকার বাইরে রয়েছেন। তিনি আজ বুধবার ঢাকায় ফিরে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন। শ্রম পরিদফতর মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা করবে। সেখানে সমঝোতা না হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে- বলেন শাজাহান খান।
নৌ পরিবহনমন্ত্রী বলেন, গত ২৬ এপ্রিল নৌযান শ্রমিকদের সঙ্গে সরকার ও মালিকদের বৈঠকে নৌযান শ্রমিকদের মজুরি ‘ক’ ক্যাটাগরিতে ১০ হাজার, ‘খ’ ক্যাটাগরিতে সাড়ে ৯ হাজার ও ‘গ’ ক্যাটাগরিতে ৯ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত হয়। তেলবাহী জাহাজের মালিকরা এ সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। সেখানে কোনো সমস্যা নেই।তিনি বলেন, চার মাস হয়ে গেল আমরা মজুরি দিতে পারলাম না এটা চিন্তার বিষয়।
সমস্যা কার্গো জাহাজ ও যাত্রীবাহী জাহাজের ক্ষেত্রে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কার্গো ভেসেলস ওনার্স এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ওয়াটার ওয়েজ প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার এসোসিয়েশন (বর্ধিত মজুরি না দিতে) মামলা করেছে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছিলাম আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। কিন্তু সব উপেক্ষা করে মালিকরা মামলা করেছেন।
ধর্মঘট চললেও দেশের বিভিন্ন রূটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করছে বলেও জানান নৌপরিবহন মন্ত্রী।
শ্রমিক ধর্মঘটে চট্টগ্রাম থেকে লাইটার
জাহাজ ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মজুরি বৃদ্ধিসহ ৪ দফা দাবিতে নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ধর্মঘটে চট্টগ্রাম থেকে সব ধরনের লাইটার জাহাজ ও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায়ে সোমবার রাত ১২টা থেকে লাগাতার এই কর্মসূচি পালন করছেন নৌযান শ্রমিকরা। একই দাবিতে সারাদেশে নৌশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে প্রধান বন্দরগুলো। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসা খাদ্যশস্য ও পণ্যবাহী মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাস করা হয় লাইটার জাহাজে। এসব জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দরে ভোগ্যপণ্য ও বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল খালাস কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
নৌ শ্রমিকদের ধর্মঘটের ফলে বেকার হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার ঘাট শ্রমিক। গতকাল নগরীর বাংলাবাজার ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীতে সারিবদ্ধভাবে অলস বসে আছে অসংখ্য লাইটারেজ জাহাজ। ১৯টি ঘাটে পণ্য ওঠানামা বন্ধ থাকায় বেকার শত শত ঘাট শ্রমিক। ঘাট শ্রমিকরা জানায়, নৌ শ্রমিকদের ধর্মঘটে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে তারা।
দক্ষিণাঞ্চলে নৌযোগাযোগ বিপর্যস্ত
বরিশাল ব্যুরো জানায়, নৌযান শ্রমিক-কর্মচারীদের অবিরাম ধর্মঘটে নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও অভ্যন্তরীণ রুটসমূহে নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৫০টি রুটে শতাধিক ছোট-বড় নৌযান চলাচল গতকাল সকাল থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বরিশাল সহ দক্ষিনাঞ্চলের ৬টি জেলার দেড় শতাধীক লঞ্চ ঘাট ও ৪টি নদী বন্দরে লক্ষাধীক যাত্রী আটকা পড়েছে। বরিশাল,ভোলা,পটুয়াখালী,বরগুনা,পিরোজপুর ও ঝালকাঠীর বিভিন্ন স্টেশন থেকে রাজধানী ঢাকার সংযোগ রক্ষাকারী শতাধিক দোতলা লঞ্চও এ নৌ ধর্মঘটে বন্ধ।
এমনকি বরিশাল-ঢাকা নৌপথে বেসরকারি ক্যটামেরন সার্ভিসটিও গতকাল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ এখন সব বর্ণনার বাইরে। তবে বিত্তবান কিছু যাত্রী গতকাল সরকারী-বেসরকারী ২টি উড়ানে বরিশাল-ঢাকা আকাশপথে যাতায়াত করে। পাশাপাশি বেসরকারি বাসগুলো পূর্ণ বোঝাই করে বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল রুটে চলছে। বিআরটিসি’র বাতানুকূল বাসগুলো বরিশাল থেকে ঢাকামুখী সংক্ষিপ্ত সড়ক পথে মাওয়ার অপর পারের কাওড়াকান্দীতে বিপুল সংখ্যক যাত্রী পৌঁছে দেয়। ওই রুটে আরো বেশ কিছু বেসরকারি বাসও যাত্রী পরিবহন করছে।
মংলা বন্দরে আটকা ২ শতাধিক বার্জ-কার্গো
মংলা সংবাদদাতা জানান, নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ ও নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা, নৌপথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধসহ ১৫ দফা দাবিতে মধ্যরাত থেকে মংলায় কর্মবিরতি পালন করছে নৌযান শ্রমিকরা। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকে এই ধর্মঘটের ফলে বন্দরের পশুর চ্যানেলে অবস্থানরত ৯টি পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মালামাল খালাস-বোঝাই ও পরিবহনের কাজ বন্ধ রয়েছে এবং এ কারণে অলস হয়ে বসে আছে প্রায় দুই শতাধিক বার্জ কার্গো।
অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট শুরু করা নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের মতে, দেশে প্রায় ১৯ হাজার ৫শ’ কার্গো, কোস্টার, বার্জ ও লঞ্চসহ অন্যান্য সকল নৌযানের ২ লাখ শ্রমিক দাবি আদায়ে সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে। নৌযান শ্রমিকরা মংলার পশুর, শরণখোলার বলেশ্বর ও মোড়েলগঞ্জের পানগুছি নদীতে নোঙ্গর করে রেখেছে কয়েক শত কার্গো, কোস্টার, বার্জসহ লাইটারেজ জাহাজ।শুধু মংলা বন্দরে আটকে পরেছে ২ শতাধিক নৌযান।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের আহবানে সমঝোতার অংশ হিসেবে গত রাতে বরিশাল থেকে ঢাকা অভিমুখে পাঁচটি লঞ্চ ছেড়ে যায়।


চাঁদপুর থেকে সকল রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ
চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সোমবার থেকে অয়েল ট্যাঙ্কার ব্যতীত সকল নৌ-যান শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছে। সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুরেও রাত থেকে কর্মবিরতি চলছে। যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। হঠাৎ করে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করায় যাত্রীদের লঞ্চঘাটে এসে ফিরে যেতে দেখা যায়। এ নিয়ে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মালিক ও শ্রমিকদের সমস্যার কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের।
নারায়ণগঞ্জে নৌ শ্রমিকদের মিছিল
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতির সমর্থনে মঙ্গলবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে নৌযান শ্রমিকরা। বিকেলে বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ২নং রেলগেট, চাষাঢ়া, কালিরবাজার ঘুরে ৫নং ঘাট এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ নৌ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের নেতা আইনুল হোসেন উত্তমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন সবুজ শিকদার, মিন্টু মাষ্টার, আলমগীর মাষ্টার, মোস্তাফিজুর রহমান, কবির মাষ্টার, আবু তালেব মাষ্টার, নাসির হোসেন, কবির হোসেন, নাননু মিয়া, আক্তার হোসেন, সরদার আলমগীর প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন