স্টাফ রিপোর্টার : ‘রিকশা চালায় আমাদের ছেলেরা। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমরা আছি। গুম করে দেয়, খুঁজে পাওয়া যায় না। গুম হওয়া পরিবারের বাচ্চাগুলো সেদিন এখানে দাঁড়িয়ে বলল, বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চাই। এই জন্য যুদ্ধ করেছিলাম?’ কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার এমন আবেগপ্রবণ কান্নায় হলভর্তি উপস্থিত নেতাকর্মীর চোখও ভিজে যায়। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স- অ্যাব’র আয়োজনে বন্ধ করে দেয়া ৩৫টি অনলাইন নিউজপোর্টাল খুলে দেয়ার দাবিতে আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুলের প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবার সময় এই আবেগ প্রবণ ঘটনা ঘটে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর সরকারের ‘নির্যাতন’র বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে কেঁদে মির্জা ফখরুল বলেন, সারাদেশে প্রতিনিয়ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। চলাফেরার সময় যানজটে বসে থাকলে হকাররা এসে যখন চিনে ফেলে তখন বলে স্যার আমি লক্ষ্মীপুরে বিএনপি করতাম। মামলার কারণে পালিয়ে ঢাকা এসে হকারি করছি। রিকশা চালাচ্ছে আমাদের ছেলেরা। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে আমরা আছি। গুম করে দেয়, খুঁজে পাওয়া যায় না। গুম হওয়া পরিবারের বাচ্চাগুলো সেদিন এখানে দাঁড়িয়ে বলল, বাবার সঙ্গে ঈদ করতে চাই। এই জন্য যুদ্ধ করেছিলাম?
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ৩৬টি অনলাইন নিউজপোর্টাল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। সরকারের আমলে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন চলছে। বিএনপির অনেক জেলার কার্যালয় তালাবদ্ধ। মাঝে মাঝে খুললেও সেখানে পুলিশ থাকে। কখনো ভেতরে বসে থাকে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেও সব সময় পুলিশ বসে থাকে। আবার সাদা পোশাকে পুলিশের লোকজন সেখান থেকে ছো মেরে নেতাকর্মীদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় সভাস্থলেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন তিনি।
কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কী ভয়াবহ অবস্থায় আমরা আছি। ধরে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। কোনো খবর পাওয়া যায় না। এইজন্য কী আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। নতুন নতুন আইন হচ্ছে। এই আইনে কথাও বলা যাবে না। যাবজ্জীবন কারাদ-, এক কোটি জরিমানা। আকার ইঙ্গিতে যে কোনোভাবে।
উপস্থিত নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনি যদি একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বাস করতে চান, স্বকীয়তাকে রক্ষা করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে।
সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, আমরা যখন বিভিন্ন দলের কাছে যাই তখন তারা নানা শর্তের কথা বলে। আমি বলি, যদি এই দমন পীড়নের খড়গ আপনাদের ওপর পড়ে তখন কী করবেন? কোন দল কী করলো সে সব কথা বাদ দিয়ে আসুন আমরা অন্তত একটি বিষয়ে একমত হই। এক হয়ে আওয়াজ তুলি।
মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সকল রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন তিনি। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ফরহাদ মাজহার। বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবি পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমীন গাজীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব (একাংশ) এম আবদুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন