ইট-পাথরের শহরে দিন দিন বিনোদন এমনকি হাঁটা চলার জায়গা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষের কাছে এখন এক চিলতে ফাঁকা জায়গার বড় অভাব। যে দু’একটি আছে তাও পরিবেশের কারণে অনেকে যেতে চান না। তাই বিনোদনের পাশাপাশি হাঁটাচলা এমনকি শিশুদের খেলাধুলার জন্য গড়ে তোলা হচ্ছে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরকে। চিরচেনা কালেক্টটরেট চত্বর এখন আমূল বদলে যাচ্ছে।
বলা যায় অনেকটা জীর্ণশীর্ণ ও জঞ্জাল অবস্থায় ছিল কুষ্টিয়া কালেক্টটরেট চত্বরের সামনের অংশ। দুটি পুকুর আর সামনের মাঠকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন একটি পার্ক। এখানে চারপাশে হাঁটার জন্য পাকা সড়ক, অভ্যন্তরীণ লিংক রোড, বাগান, শিশুদের খেলার রাইড, বসার জন্য গোলঘর আর পুকুরে নৌকা রাখা হয়েছে। সকাল ও বিকেল পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের আনাগোনা বাড়ছে কালক্টটরেট চত্বরে। হাঁটতে আসেন প্রচুর নারী-পুরুষ। বিকেলে দল বেঁধে খেলতে আসে শিশুরা।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া কালেক্টটরেট ভবনটি তৈরি হয় পাকিস্থান আমলে। ১৯৫৮ সালে ভবনটি উদ্বোধন করা হয়। এরপর সামনের অংশে একটি বাগান ও পশ্চিমে পুকুর ছিল। চারপাশে ছিল কিছু গাছ-গাছালি। তবে বাগানটি পরিকল্পিতভাবে গড়ে না তোলায় কার্যালয়ের সামনে হাঁটা-চলার তেমন কোন জায়গা ছিল না। গাড়ি পার্কিংসহ সব মিলিয়ে এলোমেলো অবস্থায় ছিল কার্যালয়ের সামনের অংশ।
গত এক বছর আগে সামনের অংশকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন। সে সময় তাকে এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতা করেন তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগের বাগান ভেঙে ফেলা হয়। এরপর একটি নকশা করা হয়। সেই নকশায় সামনের অংশে একটি মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। সামনে রয়েছে বিশাল খোলা অংশ। সাংস্কৃতিকসহ সব ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। এখানে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর অনুষ্ঠানও করা হয়েছে। এক সাথে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার মানুষ বসতে পারবে। এক পাশে রাখা হয়েছে গাড়ি পার্কিং এর জায়গা। পুকুরের পাশ দিয়ে করা হয়েছে বাগান।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ঠিক সামনে দুই পুকুরের মাঝে তৈরি করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। পুকুরের চারপাশ ব্লক দিয়ে বাঁধানো হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে পাকা সড়ক। পুকুরের দুই ধারে বসার জন্য গোলঘর নির্মাণ করা হয়েছে। চারপাশে লাগানো হবে নানা জাতের বৃক্ষ। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার সজ্জিত করা হয়েছে। রাতের বেলা এর আসল রূপ ফুটে ওঠে। আলো আধারিতে অপূর্ব এক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এর পাশাপাশি রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিফলক। আলোর উৎসের জন্য চারধারে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সব স্থাপনায় আলোকসজ্জা করায় সবার কাছে রাতের পরিবেশ মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। তাই তো রাতেও ঘুরতে আসেন অনেকে।
দর্শনার্থীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে গোলঘর। যারা আসবেন তারা এখানে বসে সময় কাটাতে পারবেন। পাশাপাশি শিশুদের বিনোদনের জন্য পুকুরে পা-চালিত নৌকা রাখা হয়েছে। আর নাগরদোলাসহ বেশ কিছু রাইড উপভোগ করতে পারবেন বেড়াতে আশা শিশুরা।
কাজের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, ‘অনেক পুরাতন কুষ্টিয়া কালেক্টটরেট চত্বরকে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা করা হয়। সেই অংশ হিসেবে এক বছর আগে কাজ শুরু করা হয়। ডিজাইন অনুযায়ী কাজ চলছে। পুরো কাজ বাস্তবায়ন হতে আরো কিছু সময় লাগবে।
তিনি বলেন, এখন কালেক্টটরেট চত্বর বদলে গেছে। বিনোদনপ্রিয় মানুষ এখানে আসছে। সকাল ও বিকেলে প্রচুর মানুষ এখানে হাঁটতে আসেন। ছোটরাও খেলতেও আসেন। সবার জন্য পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে চিরচেনা সেই দৃশ্য। এখন সব বয়সের মানুষের বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে উঠবে কালেক্টটরেট চত্বর।
জানা গেছে, পুকুরের চারপাশের খোলা ফাঁকা জায়গায় ঘাস ও গাছ লাগানো হবে। ফুলের গাছ ছাড়াও থাকবে নানা জাতের বৃক্ষ। তবে ফুল গাছ দিয়েই সজ্জিত করা হবে বাগান। গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, তারা সামনের অংশটি গাড়ি পার্কিংসহ যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত করেছেন। এছাড়া বাউন্ডারি ওয়ালসহ দৃষ্টিনন্দন একটি প্রবেশ পথ তৈরি হবে। এ জন্য সব কাজ চলমান আছে।
একজনের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এক বছর আগেও এখানে হাঁটাচলা যেত না। সেই অবস্থা এখন পুরোপুরি বদলে গেছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে কালেক্টটরেট চত্বর।’ আরেকজন তার শিশু সন্তান নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন কালেক্টটরেট চত্বরে। তিনি বলেন, ‘সুন্দরভাবে সাজানো হচ্ছে কালেক্টটরেট চত্বরকে। এখানে শিশুরা বিনোদনের সুযোগ পাবে। পরিবেশও ভাল। পুরো কাজ বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে এর চেহারা। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও ভাল বলে জানান তিনি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন