শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জর্ডানে আশার আলো

করোনার মাঝেও শ্রমবাজারে সুখবর ১২ হাজার কর্মী যাচ্ছে বিনা খরচে : বেসরকারি প্রক্রিয়া উন্মুক্তকরণের দাবি

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

বৈশ্বিক করোনা মহামারিতেও মধ্যপ্রাচ্যের জর্ডানে বিনা খরচে জনশক্তি রফতানির দ্বার উন্মুচিত হচ্ছে। করোনা কিছুটা শিথিল হলেও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই জনশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। গত সপ্তাহে সউদী আরবের ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে প্রায় ২০ হাজার ভিসাপ্রাপ্ত কর্মী নতুন করে আটকা পড়েছে। দুর্যোগের সময়েও জর্ডানে নতুনভাবে ১২ হাজার মহিলা গার্মেন্টস কর্মী বিনা খরচে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় জনশক্তি খাতে আশার আলো দেখা দিয়েছে। প্রতি শুক্রবার মিরপুরস্থ জার্মান-বাংলাদেশ টেকনিক্যাল সেন্টারে জর্ডান গমনেচ্ছু মহিলা কর্মী ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য ভিড় জমাচ্ছে।

অতিসম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ এর সাথে তার দপ্তরে ক্লাসিক ফ্যাশনের ম্যানেজার ওয়েলফেয়ার মিস সালমা আক্তার সাক্ষাত করে শূন্য অভিবাসন ব্যয়ে ১২ হাজার মহিলা কর্মী নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ক্লাসিক ফ্যাশনের ১১টি ফ্যাক্টরীতে বর্তমানে প্রায় ২৭ হাজার মহিলা কর্মী কর্মরত। জর্ডানের শ্রম আইন অনুযায়ী এসব প্রবাসী কর্মী সকল সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। প্রবাসী মন্ত্রী জর্ডানের ক্লাসিক ফ্যাশন কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি বেশি কর্মী নিয়োগের অনুরোধ জানান। প্রবাসী মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার টিটিসিগুলোর মাধ্যমে বর্হিবিশ্বের চাহিদানুযায়ী প্রচুর দক্ষ জনশক্তি তৈরি করছে। দেশটিতে বর্তমানে লক্ষাধিক বাংলাদেশি নারী-পুরুষ কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। বোয়েসেলের মাধ্যমে মাত্র ২শ’ টাকায় অনলাইন নিবন্ধন করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে মহিলা গামেন্টস কর্মীরা জর্ডানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছে। দেশটির বৃহৎ ফ্যাক্টরি ক্লাসিক ফ্যাশন লিমিটেডের অধিনে ১১টি কারখানায় বিনা খরচে ১২ হাজার মহিলা গার্মেন্টস কর্মী যাবে।

বিএমইটি’র সূত্র জানায়, ২০০১ সাল থেকে দেশটিতে এযাবত ১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৩১ জন নারী-পুরুষ কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে বোয়েসেল ও বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে দেশটিতে ১ লাখ ৬১ হাজার ৫৯৩ জন মহিলা কর্মী চাকরি লাভ করেছে। ১৯৯১ সাল থেকে সউদী আরব চলতি বছর পর্যন্ত ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৫০ জন মহিলা কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে সউদী আরবে ৬২ হাজার ৫৭৮ জন মহিলা কর্মী চাকরি লাভ করেছে। একই বছর জর্ডানে বোয়েসেল ও বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি’র মাধ্যমে ১৯ হাজার ৭০৬ জন মহিলা কর্মী চাকরি লাভ করেছে। ২০২০ সালে দেশটিতে গিয়েছে ২ হাজার ৯৫৭ জন মহিলা কর্মী। দেশটিতে অভিবাসী কর্মী নির্যাতানের হার খুবই কম। এছাড়া দেশটি থেকে নানা হয়রানির শিকার হয়ে কর্মী ফেরত আসার সংখ্যা নেই বললেই চলে।

এদিকে, বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও জর্ডানে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মী প্রেরণের জন্য সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে উন্মুক্তকরণের জোর দাবি জানিয়েছে। জর্ডানে মহিলা গৃহকর্মী প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সি আনোয়ার ওভারসীজ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন গত এক সপ্তাহ যাবত শ্রমবাজার সন্ধানে দেশটিতে সফরে রয়েছে। জর্ডানের আম্মান থেকে গতকাল সোমবার আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে জানান, জর্ডানের শিল্পাঞ্চল আকাবা শহর, আল দুলাল শহর, সাহার অঞ্চলে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, আম্মানের ক্যান্ডি ম্যানপাওয়ার, অপশন ম্যানপাওয়ার, আল রাকি ম্যানপাওয়ার, হ্যাপী হোম ম্যানপাওয়ার, আল বারুন ম্যানপাওয়ার, অ্যারাউন্ড দ্যা ওয়ার্ল্ড ম্যানপাওয়ার এবং ই-ওয়ান ম্যানপাওয়ার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে অধির আগ্রহ প্রকাশ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জর্ডানের শ্রমবাজার দক্ষিণ আফ্রিকার ইউথুপীয়ার হাতে চলে যাচ্ছে। নেপাল, উগান্ডা, কেনিয়া ও ঘানার কর্মীরাও জর্ডানে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে প্রায় দু’মাস সময় লাগে। আর ইউথুপীয়া থেকে একজন কর্মী জর্ডানে যেতে সময় লাগে মাত্র ৪/৫ দিন। জর্ডানের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে দেশটির গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দিতে হবে।

বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.সাইফুল হাসান বাদল ইনকিলাবকে বলেন, জর্ডানে প্রচুর গার্মেন্টস কর্মীর চাহিদা রয়েছে। ২০১১ সাল থেকে দেশটির ৪৮ টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে বোয়েসেলের মাধ্যমে বিনা খরচে প্রায় ৬০ হাজার মহিলা কর্মী চাকরি লাভ করেছে। এসব কর্মীর মধ্যে এখনো প্রায় ৪৫ হাজার মহিলা কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসন্ন জানুয়ারি মাস থেকে জর্ডানের বৃহৎ গার্মেন্ট কোম্পানী ক্লাসিক ফ্যাশন বিনা খরচে বাংলাদেশ থেকে ১২ হাজার নতুন মহিলা কর্মী নিবে। ক্লাসিক ফ্যাশন কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি মহিলা গার্মেন্টস কর্মীদের বিমানের টিকিট, থাকা খাওয়া, প্রাথমিক চিকিৎসা, আবাসন এবং কর্মস্থলে যাতায়াতের সকল ব্যবস্থা করবে। প্রত্যেক মহিলা কর্মী ১২০ জেডি (বাংলাদেশি প্রায় ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা) বেসিক বেতন পাবেন। ওভার টাইম নিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ২১ হাজার টাকা আয় করতে পারবে।

বোয়েসেল জর্ডানে বিনা খরচে মহিলা গার্মেন্টস কর্মী প্রেরণে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। সকল মোবাইল কোম্পানী এবং ফেইসবুকে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে। বোয়েসেলের ব্যবস্থাপক মাসুদ আলম শরীফ ইনকিলাবকে জানান, ক্লাসিক ফ্যাশনে বিনা খরচে ইতিমধ্যেই মহিলা গার্মেন্টস কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে। কোম্পানীটিতে ১২ হাজার কর্মী যাওয়ার সুযোগ পাবে। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক শুক্রবার মিরপুরস্থ জার্মান বাংলাদেশ টেকটিক্যাল সেন্টারে ক্লাসিক ফ্যাশনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জর্ডান গমনেচ্ছু মহিলা কর্মীদের ইন্টারভিউ নেয়া হচ্ছে। নির্বাচিত কর্মীদের ক্লাসিক ফ্যাশনের খরচে জার্মান টেকনিক্যালে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। গত শুক্রবার ক্লাসিক ফ্যাশনের নির্বাচনী পরীক্ষায় ৮৯ জন কর্মী উত্তীর্ণ হয়েছে। ইউনাইটেড কোম্পানীতে ৪৯ জন এবং নিডিল ক্রাফট কোম্পানীতে ১৩৩ জন কর্মী জর্ডানে যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮৪ জন মহিলা কর্মী ক্লাসিক ফ্যাশনে যোগদানের জন্য জর্ডানে গিয়েছে। আরো ১৫০ মহিলা কর্মীর ভিসা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান বলেন, জর্ডানের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে গার্মেন্টস খাতসহ সকল খাতে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকার বেসরকারি কর্মী প্রেরণের প্রক্রিয়া যথাযথ মনিটর করবে। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় দশ লাখ মহিলা কর্মী কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে। জর্ডানের সাথে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি নবায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমানের জর্ডানে বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন ২০০ জেডি হওয়া উচিৎ বলে তিনি উল্লেখ করেন। টিপু সুলতান বলেন, মালয়েশিয়ায় দশ সিন্ডিকেট একচেটিয়া কর্মী প্রেরণ করায় দেশটির শ্রমবাজার বন্ধ হয়েছে। জর্ডানেও শুরু সরকারি প্রতিষ্ঠান বোয়েসেলই কর্মী পাঠালে তা’ সঠিক হচ্ছে না। বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েই বৈধ পন্থায় জনশক্তি রফতানি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তিনি দেশের স্বার্থে জর্ডানে প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজার চালু রাখার ওপরগুরুত্বারোপ করেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (10)
Almas Matubber ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৮ এএম says : 0
যাক আমাদের দেশের কিছু হলেও টাকা আসবে
Total Reply(0)
সাদ্দাম ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৯ এএম says : 0
এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে হবে।
Total Reply(0)
এডভোকেট মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ৮:৪৫ এএম says : 0
বাংলাদেশের সকল বৈধ রিক্রটিং এজেন্সি র জর্ডানে কর্মী প্রেরনের সমান সুযোগ করে দিতে হবে, সেই সাথে পুরুষ কর্মী পাঠানোর বিষয় নিয়ে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করা দরকার।
Total Reply(0)
নাবিল আব্দুল্লাহ ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৫০ এএম says : 0
জর্ডানের শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে দেশটির গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ দিতে হবে।
Total Reply(0)
দুলাল ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৫১ এএম says : 0
এই সুযোগ যাতে কোনভাবেই হাত ছাড়া না হয়
Total Reply(0)
রোদেলা ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৫১ এএম says : 0
খবরটি শুনে খুব ভালো লাগলো
Total Reply(0)
মনির হোসেন মনির ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:৫২ এএম says : 0
অবৈধভাবে যাতে কাউকে না পাঠানো হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
Total Reply(0)
আনোয়ার হোসেন ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ২:০৫ পিএম says : 0
খুব ভালো খবর ক্লাসিক ছাড়াও সেখানে সাহাবের জেরাশ কোম্পানি ও খুব ভালো জেরাশ কোম্পানিতেও প্রতিনিয়ত মহিলা শ্রমিক নেওয়া হয় জডান আসলে অন্য সব দেশের থেকে নিরাপত্তা খুবই ভালো যারা আছে সবাই ভাল আছে আমি মনে করি
Total Reply(0)
Md.Kayum Ali ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২০ পিএম says : 0
মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদেরকে ও পাঠানোর ব্যবস্থা করলে দেশের বেকারত্বের হার কমে যাবে।
Total Reply(0)
Md.Kayum Ali ৪ জানুয়ারি, ২০২১, ২:২১ পিএম says : 0
মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষদেরকে ও পাঠানোর ব্যবস্থা করলে দেশের বেকারত্বের হার কমে যাবে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন