শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নৌ-শ্রমিক ধর্মঘটে লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে অচলাবস্থা

প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মংলায় আটকা পদ্মা সেতুর মালামাল
চট্টগ্রাম ব্যুরো : সরকার ঘোষিত মজুরি বাস্তবায়ন করাসহ ৪ দফা দাবিতে গতকাল (বুধবার) দ্বিতীয় দিনের মতো লাগাতার ধর্মঘট পালন করেছে নৌযান শ্রমিকরা। নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গরে সব ধরনের পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে নৌপথে শিল্পের কাঁচামালসহ সব ধরনের পণ্য পরিবহন। বেকার হয়ে পড়েছে হাজার হাজার ঘাট-শ্রমিক। বাংলাদেশ নৌ-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে সোমবার দিনগত রাত ১২টা থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়।
বাংলাদেশ নৌ-শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. বশির জানান, সরকার ঘোষিত মজুরি মালিকরা বাস্তবায়ন না করায় আমরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছি। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি মেনে নেবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। অন্যান্য দাবিগুলো হলো-কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পুনঃনির্ধারণ, নৌপথে সন্ত্রাসী-ডাকাতি-চাঁদাবাজি বন্ধ ও নদীর নাব্যতা রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নৌযান শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রাখায় বন্দরের বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। তবে অয়েল ট্যাংকার শ্রমিকদের কাজ চলছে।
নৌমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রীর কাছে প্রেরিত এক পত্রে তিনি বলেন, নৌযান শ্রমিকরা সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছে এবং সারাদেশে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল ও পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে করে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে দেশব্যাপী শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি জাহাজ জট এবং কন্টেইনার জট নতুন সঙ্কট তৈরি করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইম বৃদ্ধি এবং কন্টেইনারের ওভারস্টের কারণে ডেমারেজ চার্জ, পণ্য আমদানি-রপ্তানি ব্যয় বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ ভোক্তাদের অতিরিক্ত মাশুল গুণতে হবে বলে মনে করেন চেম্বার সভাপতি।
তিনি পত্রে উল্লেখ করেন, ইতোপূর্বে ২১ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত প্রথমে শ্রমিক ও পরে মালিকদের ধর্মঘটের কারণে নৌপণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় জাহাজ জট, কন্টেইনার জট এবং যানজটে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে সৃষ্ট অচলাবস্থা অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিগত কয়েক মাসে বন্দরের কন্টেইনার জট কিছুটা হ্রাস পেলেও নতুন করে শ্রমিক ধর্মঘট সার্বিক পরিস্থিতিকে আবারো বিশৃঙ্খলার দিকে ধাবিত করবে।
মংলায় আটকে পড়েছে পদ্মা সেতুর মালামাল
মনিরুল ইসলাম দুলু : নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকা ধর্মঘটের ফলে মংলা বন্দরের আটকা পরেছে পদ্মা সেতুর মালামাল। পদ্মা সেতুর পাইলিং পাইপ তৈরির স্টিল সিট নিয়ে আসা ১টি জাহাজ ও পাথরবাহী ৪টি বাণিজ্যিক জাহাজ রয়েছে। এর ফলে পদ্মা সেতুর পাইলিং কাজ শুরুতে বিঘœ ঘটছে। শিপিং এজেন্ট ও পরিবহন ছিকাদারগণ লাইটার সঙ্কট, বৃষ্টি ও চলমান নৌযান ধর্মঘটকে এজন্য দায়ী করছেন। তবে, নৌ-পরিবহন মালিকরা জানান, লাইটারের কোনো সঙ্কট নেই। নৌযান শ্রমিকদের ১৫ দফা দাবিতে কর্মবিরতী পালন করায় বন্দরের পশুর চ্যানেলে অবস্থানরত ৯টি পণ্যবাহী জাহাজ থেকে মালামাল খালাস-বোঝাই ও পরিবহনের কাজ বন্ধ রয়েছে এবং এ কারণে অলস হয়ে বসে আছে প্রায় ৩ শতাধিক বার্জ কার্গো। এর ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন মংলা বন্দর ব্যবহারকারী, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।
মংলা বন্দর ব্যবহারকারী শেখ আ. সালাম জানান, নৌযান শ্রমিকদের দাবির ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। এই ধর্মঘট দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে বন্দরের সুনাম নষ্ট হবে। বন্দরে অবস্থানরত বাণিজ্যিক জাহাজের ব্যয় বেড়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্য আবুল হাসান বাবুল জানান, মংলা বন্দরে প্রায় ৩ শতাধিক কার্গো, কোস্টার, বার্জ আলস হয়ে বসে আছে। এছাড়াও মংলা বন্দর এলাকায় প্রবেশের অপেক্ষায় আছে আরও প্রায় ২ শতাধিক কার্গো, কোস্টার, বার্জ।
নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবুল কাশেম মাস্টার জানান, মালিক পক্ষ তাদের দাবির ব্যাপারে এখনো এগিয়ে আসেনি। দাবি না মানা পর্যন্ত এ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি। এই আন্দোলন আরো কঠোর হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
অপরদিকে, পদ্মা সেতুর পাইলিং পাইপ তৈরির স্টিল সিট নিয়ে ১৯ আগস্ট চীন থেকে ‘এমভি এভার প্রোগ্রেজ’ নামের একটি জাহাজে মংলা বন্দরে আসে। ৬ দিন অতিবাহিত হলেও এই সামগ্রী খালাস করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও পদ্মা সেতুর জন্য আনা পাথরের ৪টি জাহাজও বন্দরে আটকা পড়ে আছে। এর ফলে পদ্মা সেতুর পাইলিং কাজ শুরুতেও বিঘœ ঘটছে। শিপিং এজেন্ট ও পরিবহন ঠিকাদারগণ লাইটার জাহাজ সঙ্কট, বৃষ্টি ও চলমান ধর্মঘটকে এজন্য দায়ী করছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন