শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভবদহে পানিবদ্ধতা বেড়েছে : দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি

প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা, যশোর : যশোরের ভবদহ এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে এখনো কোনো জোরদার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গোটা পানিবদ্ধ এলাকায় স্লোগান উঠেছে ‘পানি সরাও, মানুষ বাঁচাও’। পানি বন্দিদের দুর্গতি আরো বেড়েছে। ত্রাণ সাহায্য একেবারেই অপ্রতুল।
পানিবন্দিরা ত্রাণের জন্য পথপানে চেয়ে থাকছেন। কখনও সাহায্য জুটছে, কখনও জুটছে না। হাজার হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু পানির মধ্যেই দিন কাটাচ্ছে। কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রেও পানি উঠছে। যশোর-৫ (মনিরামপুর) আসনের এমপি স্বপন ভট্টাচার্য্য গতকাল যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পানিবদ্ধ এলাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন মনিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেন লাভলু, পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ কাজী মাহমুদুল হাসান ও সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ বলেন, শ্রী-হরি ও মুক্তেশ্বরী নদীতে পলি জমে যাওয়ায় গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি বের হতে পারেনি। এতে করে উপজেলার ১৭টির মধ্যে ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ঘর-বাড়ি। ৪০টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ রাস্তার পাশে অবস্থান নিয়েছে চার হাজার পরিবার। ফসলি জমি ও মাছের ঘের ভেসে গিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বন্ধ রয়েছে ১০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাপের কামড়ে সাতজনসহ বিভিন্ন কারণে মারা গেছে ১১ জন। এ অবস্থায় উপজেলা জুড়ে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। সে কারণে এমপি স্বপন ভট্রাচার্য এই মুহূর্তে পানিবদ্ধ এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে আরো ত্রাণ সহায়তা ও পানি নিষ্কাশনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ভবদহের এলাকা বিশেষ করে যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর উপজেলার প্রায় ২শ’ গ্রাম পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, প্রভাবশালী মহল ও ঠিকাদাররা মিলেমিশে ড্রেজিং-এর নামে সরকারি কোষাগার থেকে উত্তোলিত কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। বাস্তবে ড্রেজিং হয়েছে নামকাওয়াস্তে। টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প চালুর ক্ষেত্রেও চলেছে অভয়নগর ও মনিরামপুরের প্রভাবশালীদের নানা খেলা। বর্তমানে সবাই উপলব্ধি করতে পারছেন ভবদহ নিয়ে রাজনীতি হয়েছে আত্মঘাতী। কারণ এমন বিপর্যয় নিকট অতীতে ঘটেনি। বুড়ি ভদ্রা পুনঃ খননের নামে চলেছে সরকারি অর্থের লুটপাট। এর আগে একইভাবে যশোর-খুলনার পানি নিষ্কাশন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের ২শ’২৯ কোটি টাকা ও পরবর্তীতে ওই প্রকল্প ও টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্প দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। গোটা এলাকার জনগণ দাবি তুলেছে, গত ৫ বছরে যশোর ও খুলনা অঞ্চলের পানিবদ্ধ এলাকার পানি সরানো, নদ ও খাল ড্রেজিং, রেগুলেটর স্থাপন ও পুনঃ খনন কাজে মোট কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে আর কাজ হয়েছে কতটুকু তা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিমের মাধ্যমে খুঁজে বের করে জনসমক্ষে রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। তাতে কে কোথায় কিভাবে কত টাকা লুটপাট করেছে তার আদ্যপান্ত বের হয়ে আসবে।
পানিবন্দিদের দাবি, জরুরিভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হোক। তা না হলে আরো বড় বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ভবদহ স্লুইস গেটের মোট ২১টি কপাটের মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ৫টি কপাট ইতোমধ্যে খোলার ব্যবস্থা করেছেন। তাতে কিছুটা পানি নামছে। কিন্তু কেশবপুরের আলতাপোল ব্রিজের কাছে পানি আটকে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল কেশবপুর ও মনিরামপুরে পানিবন্দিরা মানববন্ধন, সমাবেশ করেছেন পানি সরাও মানুষ বাঁচাও শ্লোগান তুলে। যশোরেও হয়েছে মানববন্ধন। যশোর জেলা বাসদ যশোর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে পানি সরানো ও পর্যাপ্ত ত্রাণ সাহায্যের দাবিতে।
এদিকে, ভবদহ ছাড়াও যশোরের পার্শ্ববর্তী সাতক্ষীরার কলারোয়ায়ায় প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢল, কপোতাক্ষ ও বেত্রাবতী নদীর উপচেপড়া পানি এবং তীরের ভেড়িবাঁধ ভেঙে কলারোয়া উপজেলা সদরসহ সাতটি ইউনিয়নের ৩০ গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে আমন বীজতলাসহ কয়েক হাজার বিঘা ফসলাদি। পানিবন্দিরা ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিচ্ছে এলাকার বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসাসহ উঁচু রাস্তার উপর অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন