হল নির্মাণের দাবি
আগামীকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংহতি সমাবেশ : জগন্নাথের আবাসন সমস্যা সমাধানে সরকার সচেষ্ট -শিক্ষামন্ত্রী
মালেক মল্লিক ও নাইমুর রহমান নাবিল : আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে ২৩তম দিনের মতো আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসে ছাত্র ধর্মঘটের পাশাপাশি পল্টন মোড় ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন শিক্ষার্থীরা। বেলা দেড়টার দিকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে সড়ক অবরোধ তুলে নেন তারা। নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সংহতি সমাবেশ এবং পরদিন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণার কথা জানানো হয়। এই সময়ের মধ্যে যদি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস না পাওয়া যায়, তাহলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার কথাও বলেছেন তারা। এ আন্দোলনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি এবং আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এদিকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে বলেন, এ সমস্যার সমাধানে সরকার সর্বতোভাবে সচেষ্ট আছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত আছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেন। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে এক জরুরি সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল নির্মাণের দাবিতে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে জরুরি সভা হয়। শিক্ষামন্ত্রী নাহিদের সভাপতিত্বে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদ, মো. হেলাল উদ্দিন, অশোক কুমার বিশ্বাসসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে বিকাল ৩টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসায় জবি সাংবাদিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. মীজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে আছি। আমরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে অবিলম্বে একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাথে দেখা করতে যাব। এ সময় তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন হল ও অকাঠামোগত উন্নয়ন দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদও দেন।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বিভিন্ন ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে ভিসি ভবন ঘেরাও করে ধর্মঘট শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। ক্যাম্পাসে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে। ধর্মঘটের কারণে আজও ক্যাম্পাস কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সকাল নয়টার দিকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হন। প্রথমে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল শেষে তারা রায়সাহেব বাজার মোড় ও তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করেন। মিছিলটি কয়েক ধাপে পুলিশের বাধা অতিক্রম করলেও পল্টন মোড় থেকে সামনে যেতে পারেনি। পুলিশের বাধার মুখে পল্টনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এসময় সেখানে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে আশপাশ এলাকায় দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা দেয়ালে ও রাস্তায় বিভিন্ন লিখনীর মাধ্যমে তাদের দাবি তুলে ধরেন। আন্দোলনকারীরা কেউ গায়ের কাপড় খুলে খালি দেহে আবার কেউ কেউ পরিধান করা কাপড়ের উপর বিভিন্ন ধরনের চিকা মেরে রাস্তায় শুয়ে পড়েন। এসময় নয়াপল্টন থেকে মতিঝিল, গুলিস্তান, শান্তিনগর, শাহবাগÑসব দিক থেকে যোগযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। এদিকে আন্দোলন চলাকালে পল্টন মোড়ে সড়ক অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। এতে রাব্বি, শরীফ ও অনিমেষ আহত হয়েছে বলে জানা যায়। পরে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান।
কর্মসূচি : দুপুর ১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংহতি সমাবেশে ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সমাবেশ শেষে সন্ধ্যায় মশাল মিছিল বের করা হবে বলেও জানিয়েছে। পরদিন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তবে শনিবারের মধ্যে কোনো সুষ্পষ্ট ঘোষণা না এলে আগামী রোববার আরো কঠোর কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন