ইনকিলাব ডেস্ক : ইতালির মধ্যাঞ্চলে ৬ দশমিক ২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাতে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। স্থানীয় সময় বুধবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে আঘাতহানা শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পে প্রাণহানি ঘটেছে অন্তত ৭৩ জনের। নিখোঁজ রয়েছে অনেকে। একই সঙ্গে বহু ভবন বিধ্বস্ত হয়েছে।
ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির পেসকারা দেল টরন্টো গ্রাম। এ গ্রামটি একেবারেই মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছে উদ্ধারকর্মীরা। হতাহতের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানায়, স্থানীয় সময় বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ২।
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল রোমের পূর্ব দিকে ১৭০ কিলোমিটার পূর্বে ১০ কিলোমিটার গভীরে।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল এক প্রতিবেদনে বলছে, ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আম্ব্রিয়া, আমাট্রাইস, অ্যাকিউমলি ও পেসকারা দেল টরন্টোতে। এসব এলাকায় ভবন ও সেতু ধসে পড়ায়
জরুরি যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে; শুধু পায়ে হেঁটে ধ্বংসস্তূপের কাছে যাচ্ছে উদ্ধারকারী দলের কর্মীরা।
অ্যাকিউমলির মেয়র স্টেফানো পেট্রুসসি বলেন, আমার শহরে কিছু নেই। শহরের বিধ্বস্ত ভবনের ভেতর থেকে লোকজনকে উদ্ধার করা হচ্ছে। লোকজন স্বজনদের জীবিত উদ্ধারে তল্লাশি চালাচ্ছে। সিভিল প্রোটেকশন ইউনিটের জরুরি বিভাগের প্রধান ইমাকোলাতা পোসতিলিয়ন বলেন, এখনো অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে। অনেকে নিখোঁজ। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, ইতালিতে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলের কম্পন মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২। এতে প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে বলে সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে। প্রাথমিক খবরে শক্তিশালী এ ভূমিকম্পে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ইতালির প্রধানমন্ত্রী মাত্তিও রেনজির মুখপাত্র এক ট্যুইটার মন্তব্যে জানিয়েছেন, ইতালি সরকার দেশটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ৬.২ মাত্রার ওই ভূমিকম্পটির উপকেন্দ্র ছিল রোমের উত্তর-পূর্বের রেইতি নামক একটি স্থান। এটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূমির ১০ কিলোমিটার গভীরে। ওই ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি নিম্নমাত্রার আফটার শক অনুভূত হয়েছে। শহরের অনেক অট্টালিকা মাটিতে গুঁড়িয়ে গেছে। অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শনও ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছে। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। শহরের বিদ্যুৎ সংযোগ ধসে পড়ায় জরুরি উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে।
খবরে বলা হয়, ভোররাতে প্রবল ঝাঁকুনিতে ভূমিকম্প উপকেন্দ্রের ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে রাজধানী রোমের বাসিন্দাদের ঘুম ভেঙে যায়। ইউএসজিএস জানিয়েছে, বুধবার ভোররাত ৩টা ৩৬ মিনিটে উমব্রিয়া অঞ্চলের পেরুজিয়া প্রদেশের নোরসিকা টাউনের কছে শক্তিশালী এ ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। এর এক ঘণ্টা পর একই এলাকায় ৫.৫ মাত্রার একটি পরাঘাত অনুভূত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত আমাত্রিসি টাউনের মেয়র সের্গিও পিরোজ্জি রাষ্ট্রীয় আরএআই টেলিভিশনকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিয়ে বলেন, টাউনের অর্ধেকই ধ্বংস হয়ে গেছে। আনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। ভূমিকম্পে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে এবং সম্ভব একটি সেতু ধসে পড়েছে। দেশটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পটি তীব্র ছিল। ইতালির দমকল বাহিনীর মুখপাত্র লুকা কারি জানিয়েছেন, বিভিন্ন জায়গায় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজনের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো অ্যাকুমোলি, আমাত্রিসি, পোস্তা এবং আরকুয়াটা দেল টরোনটো বলে ধারণা করা হচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন কারি। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে প্রাথমিকভাবে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। উমব্রিয়ার সিসেল্লি এলাকার লিনা মেরক্যান্টিনি বলেন, এটা অত্যন্ত শক্তিশালী ছিল। মনে হচ্ছিল বিছানাটা আমাদের নিয়ে রুমের মধ্যে হঁাঁটাহাঁটি করছে। দেয়ালগুলো ফাটল ধরে যায় আর বইগুলো সব শেলফ থেকে পড়ে যায়। ভূমিকম্পের কারণে উমব্রিয়া অঞ্চলের গুবিয়োর বাড়ি থেকে বের হয়ে আসা মাত্তেও বের্লেঙ্গা বলেন, এটি আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে (ভূমিকম্প)। ইউএসজিএস প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছয় দশমিক চার এবং ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ভূত্বকের মাত্র ছয় দশমিক দুই মাইল গভীরে বলে জানিয়েছিল। বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন, রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন