শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এক বছরে গেল ৪৯৬৯ প্রাণ

ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনে বেপরোয়া চালক, নিসচা’র সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

সারা দেশে গত বছর সড়ক, রেল ও নৌপথে ৪ হাজার ৯২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৪ হাজার ৯৬৯ জন, আহত হয়েছে ৫ হাজার ৮৫ জন। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ও বেপরোয়া চালকের কারণেই বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর ২০২০ সালের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩ হাজার ২৩২টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে ৩ হাজার ৮০০ জন। অন্যদিকে, রেলপথে ১০৮টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১২৯ জনের। এছাড়া নৌপথে ৭০টি দুর্ঘটনায় মারা গেছে আরও ২১২ জন। নিসচা বলছে, সড়কে দুর্ঘটনায় যেসব বাহন দায়ী, তার মধ্যে প্রথমে আছে মোটরসাইকেল। এরপর আছে ট্রাক, তৃতীয় অবস্থানে বাস। দুর্ঘটনায় নিহত চালকদের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি এসেছে মোটরসাইকেলচালকদের নাম।

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ সড়ক চাই এ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এ সময় সংগঠনটির চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ১১টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশন, অনলাইন পত্রিকা ও শাখা সংগঠনগুলোর তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া অপ্রকাশিত দুর্ঘটনা ও হাসপাতালে ভর্তির পর এবং হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর মৃত্যুর তথ্যও এই পরিসংখ্যানে যোগ করা হয়েছে।

২০২০ সালে মাসওয়ারি দুর্ঘটনার হিসাব করলে দেখা যায়, জানুয়ারি মাসে ৪৪৭ দুর্ঘটনায় ৪৯৫ জন নিহত এবং ৮২৩ জন আহত, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩৬৫ দুর্ঘটনায় ৪৩৭ নিহত এবং ৭৬২ আহত, মার্চে ৩৭৯ দুর্ঘটনায় ৪৫৪ নিহত এবং ৭৬৭ আহত, এপ্রিলে ১৩২ দুর্ঘটনায় ১৩০ নিহত এবং ১২০ আহত, মে মাসে ১৯৬ দুর্ঘটনায় ২৪২ নিহত এবং ২০৬ আহত, জুনে ২৬০ দুর্ঘটনায় ৩৩০ নিহত এবং ২৩৩ আহত, জুলাইয়ে ২২০ দুর্ঘটনায় ২৮৪ নিহত এবং ১৯৭ আহত, আগস্টে ৩৪০ দুর্ঘটনায় ৪৮৩ নিহত ও ৪২৩ আহত, সেপ্টেম্বরে ২১৬ দুর্ঘটনায় ২৫০ নিহত ও ৪০৪ আহত, অক্টোবরে ২৩০ দুর্ঘটনায় ২৬২ নিহত ও ৩৮৭ আহত, নভেম্বরে ২৬২ দুর্ঘটনায় ৩১৬ নিহত এবং ৩৭২ আহত এবং ডিসেম্বরে ৩৬৩ দুর্ঘটনায় ৪৫৮ জন নিহত এবং ৩৯১ জন আহত হন। এছাড়া অপ্রকাশিত তথ্য ও হাসপাতালে ভর্তির পর এবং হাসপাতাল থেকে রিলিজের পর মৃত্যুর হিসেবে পুরো বছরে আনুমানিক ৬৮২ দুর্ঘটনায় ৮২৮ জন নিহত হন।

এসময় দুর্ঘটনা রোধে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জরুরি কার্যক্রম গ্রহণ করা, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশিত ৬ দফা নির্দেশনামা দ্রুত বাস্তবায়ন করা, টাস্কফোর্স দাখিল করা ১১১টি সুপারিশনামা যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া সড়কের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাব, টাস্কফোর্স প্রদত্ত ১১১টি সুপারিশনামা বাস্তবায়ন না হওয়া, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা, দৈনিক চুক্তিভিত্তিক গাড়ি চালনা করা, লাইসেন্স ছাড়া চালক নিয়োগ, পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ওভারটেকিং করা, বিরতি ছাড়াই দীর্ঘসময় ধরে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো বন্ধে আইনের প্রয়োগ না থাকা, সড়ক ও মহাসড়কে মোটরসাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি বাড়ানো, মহাসড়কের নির্মাণ ত্রুটি, একই রাস্তায় বৈধ ও অবৈধ এবং দ্রুত ও শ্লথ যানবাহন চলাচল, রাস্তার পাশে হাটবাজার ও দোকানপাট, এবং অশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাস্তবায়ন না হওয়া ইত্যাদিই এই বিপুল সংখ্যক দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে পরিসংখ্যানে।

ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা কমেছে। কিন্তু যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাও এক বছরের হিসাবে কম নয়। কারণ, গত বছরের দীর্ঘ একটি সময় করোনার কারণে জরুরি যানবাহন ছাড়া অন্যান্য বাহন বন্ধ ছিল। এলাকাভিত্তিক পরিসংখ্যানে গত বছর সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা জেলায়। ঢাকা ও এর আশপাশের জেলায় ২৩৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৬৭ জন। এরপর আছে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর জেলা। দুর্ঘটনা সবচেয়ে কম হয়েছে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায়।

এলাকাভিত্তিক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পার্বত্য এলাকায় চালকেরা যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে রেখে সাবধানে গাড়ি চালান। এ জন্য পার্বত্য জেলাগুলোয় দুর্ঘটনা কম। একইভাবে অন্য জেলাগুলোয় সাবধানতার সঙ্গে যানবাহন চালালে দুর্ঘটনা কমে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- নিসচার মহাসচিব সৈয়দ এহসানুল হক, যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ, ইলিয়াস কাঞ্চনের ছেলে মিরাজুল মঈন প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন