শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বছরের শুরুতেই নানামুখি চাপ রাজশাহীর মানুষ

রেজাউল করিম রাজু : | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

চাল তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার পর বছরের শুরুতেই এবার এলপিজি ও অটোরিকশার ভাড়া বাড়তি চাপে ফেলেছে রাজশাহীর মানুষকে। করোনাকালীন অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে এসবের মূল্যবৃদ্ধি মরার উপর খাড়ার ঘায়ের শামিল। 

ধানের ভর মওসুমে হঠাৎ চালের বাজার চড়া হওয়া, ভোজ্য তেল বিশেষ করে সয়াবিন তেলের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়া। শাকসবজির ভর মওসুমে উৎপাদক তার উৎপাদিত পণ্যের নায্য দাম না পেলেও ভোক্তাদের কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। অন্য বছরগুলোয় শীতের এ সময় চাল থেকে শাকসবজির দাম কম থাকে। কিন্তু এবারের চিত্র উল্টো। বাজারে বড় আকারের ফুলকপি কুড়ি-পঁচিশ টাকা হলেও উৎপাদক পাচ্ছে চার পাঁচ টাকা। নতুন আলু বাজারে এসেছে। তবে দাম কেজিপ্রতি চল্লিশের নিচে নেই। দাম পাবার আশায় আগাম লাগানো মুড়ি পেঁয়াজ বাজারে চল্লিশ-পঞ্চাশ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও ভারতীয় পেঁয়াজ আসার পর দাম নেমেছে। আমদানী বাড়লে দাম আরো পড়বে এমন শঙ্কা আবাদকারীদের। তাদের লাভের স্বপ্ন ফিকে হচ্ছে। মুলা এখন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। দাম না পাওয়ায় বাগমারা হাটে কৃষক তা ফেলে গেছে। কারণ ফিরিয়ে নেবার ভাড়াটাও হবে লোকশান। রাজশাহী অঞ্চল ধান শাকসবজি উৎপাদনে উদ্বৃত্ত হলেও সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় আবাদকারীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় না। লাভের গুড় পিঁপড়েয় খায়। আর কৃষকের ঋণের বোঝা হয় ভারী। উৎপাদকদের কষ্ট লাঘবে প্রণোদনা নামক শব্দটি বেশ প্রচলিত। কিন্তু প্রান্তিক চাষির কাছে তা অধরা। অবশ্য প্রান্তিক চাষিরা এখন ওসব নিয়ে আর ভাবে না।
মানুষ যখন চাল তেল জোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছে তখন বছরের শুরুতেই হঠাৎ করে বাড়ানো হলো এলপিজি সিলিন্ডারের দাম। তাও আবার বিশ পঞ্চাশ নয় একেবারে সিলিন্ডার প্রতি এক দেড়শো টাকা। কোন নিয়ন্ত্রণ নেই যে যেভাবে পারছে ক্রেতার গলা কাটছে। এমনিতে রাজশাহীতে মাটির নীচে গ্যাসলাইন থাকলেও সবার ভাগ্যে তা জোটেনি। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে হাজার দশেক গ্রাহক সংযোগের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছে প্রায় বছর দশক ধরে। বেড়েছে জ্বালানি খড়ির দাম।
স্থানীয় রেজাউল মহিম তপন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরের শুরুতেই নববর্ষের উপহার হিসাবে গত ১ জানুয়ারি হতে বাড়ল নগরীতে চলাচলের অন্যতম বাহন অটোরিকশার ভাড়া। এর পরদিন গত ২ জানুয়ারি হতে বাড়ল সিলিন্ডার গ্যাসের দাম। একলাফে দেড়-দুশো টাকা মেনে নেয়া যায় না। ক’দিন আগেও এক সিলিন্ডার গ্যাস মিলেছে সাড়ে সাতশো টাকায়। এখন দাম দিতে হচ্ছে সাড়ে নয়শো থেকে এগারোশ’। আবার কোম্পানী ভেদে দামের তারতম্য রয়েছে। দাম বৃদ্ধি নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে বাকবিতন্ডা হচ্ছে। বিক্রেতার কথা কোম্পানি দাম বাড়িয়েছে। আমরা তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। কোম্পানি বাড়িয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা জানিয়ে বেশি দামের কথা বলেছে। গত শনিবার থেকে বেশি দামে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা সিলিন্ডার বিক্রেতারা বলছে, হঠাৎ দাম বাড়ায় ক্ষোভ ক্রেতাদের।
এ অবস্থার মধ্যে বছরের প্রথম দিন থেকে বাড়ানো হয়েছে চলাচলের অন্যতম মাধ্যম অটোরিকশা ভাড়া। এ নিয়ে চালক ও যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা আর অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে। চালক ও যাত্রীদের মধ্যে হাতাহাতি মারামারির ঘটনাও ঘটছে। অটোরিকশার সামনে নতুন ভাড়ার তালিকা সেঁটে দিয়ে নতুন ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এখানে অটোরিকশা চলাচলের লাইসেন্স দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। সেই কর্পোরেশনও জানে না ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টা।
অটোরিকশা মালিক শ্রমিক সমবায় সমিতির নামে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। তারা বলছে, ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টা আগে স্মারকলিপির মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন, এমপি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করা হয়। লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ বলছে, স্মারকলিপি দেয়া হলেও তাদের ভাড়া বাড়ানোর বিষয় কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। যদি তারা বেশি ভাড়া নিয়ে অটোরিকশায় তা অবৈধ। অটোচালকরা বলছেন, সব কিছুর দাম বেড়েছে, আমাদের ভাড়াও বেড়েছে। এতে দোষের কী। সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধিতে চিড়ে-চ্যাপ্টা নিম্নআয়ের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন সব দোষ যেন আমাদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন