শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আজ ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস

১০ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ৬ দফা চুক্তি

প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) সংবাদদাতা : আজ ফুলবাড়ীয়া ট্র্যাজেডি দিবস জাতীয় সম্পদ রক্ষা, এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহার এবং উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রতিবাদে ২০০৬ সালের এই দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারায় তিনজন। আহত হয় প্রায় আড়াই শতাধিক প্রতিবাদী মানুষ।
দিবসটি যথাযথভাবে পালনের লক্ষ্যে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ফুলবাড়ীর বিভিন্ন অরাজনৈতিক পেশাজীবী সংগঠন ও সম্মিলিত ফুলবাড়ীবাসী পৃথক পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কালোব্যাচ ধারণ, গণজমায়েত, শোক-র‌্যালি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা, প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি প্রদান, মিলাদ মাহফিল ও প্রার্থনা।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট নিজেদের অস্তিত্ব ও স্থায়ী সম্পদ রক্ষার স্বার্থে ফুলবাড়ীসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলার মানুষ ফুলবাড়ী কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলনের যে ডাক দিয়েছিলেন, সেই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে আমিন, সালেকিন, তরিকুল প্রাণ হারায়। একই সাথে কয়েকজন চিরতরে পঙ্গু হন এবং শত শত মানুষ আহত হন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ বাবুল রায়ের শরীরের অধিকাংশই অবশ হয়ে বর্তমানে পঙ্গুত্ববরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেশের সম্পদ রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে বিছানাই এখন তার একমাত্র সঙ্গী। তারপরও বিদেশীদের চক্রান্তের হাত থেকে দেশের সম্পদ রক্ষায় পঙ্গুত্ববরণ করেও তার কোনো দুঃখ নেই। তার দুঃখ এত কিছুর পরেও ফুলবাড়ীর আপামর জনতার সাথে তৎকালীন সরকারের সেই চুক্তি আজও বাস্তবায়ন হয়নি। সে সময় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের প্রতিবাদে গণবিদ্রোহে ফুলবাড়ীতে বিপ্লব সাধিত হলেও আজও থামেনি উদ্বেগ, উৎকন্ঠা আর স্বজন হারানোর কান্না, এখনও বইছে সে শোকের আবহ। এরই ধারাবাহিকতায় সেই দিবসটি স্মরণে প্রতি বছর ফুলবাড়ীর মানুষ ব্যাপকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।
ফুলবাড়ীর মানুষ মনে করেন, সেদিন যে গণ বিজয় অর্জিত হয়েছিল তা শুধু ফুলবাড়ীবাসীর নয়, সে বিজয় ফুলবাড়ীসহ সারা দেশবাসীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। অত্র এলাকায় স্থায়ী সম্পদ ধ্বংস এবং লাখো মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন করে কয়লাখনি প্রকল্প চালু হলে পথে বসতে হতে হাজার হাজার পরিবারকে।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের আহ্বায়ক ও পৌর মেয়র মুর্তুজা সরকার মানিক বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৬ সালে বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালীন ফুলবাড়ীতে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি যদি ক্ষমতায় যান তাহলে ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়ন করবেন। এজন্য তিনি ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান।
এদিকে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ২০০৬ সালে ফুলবাড়ীতে এসে ফুলবাড়ীর বীর জনতাকে স্যালুট জানিয়ে, ক্ষমতায় গিয়ে ফুলবাড়ীবাসীর সঙ্গে সম্পাদিত ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার মসনদে বসে আজও সেই প্রতিশ্রুতির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করেননি। যে কারণে আবারও এশিয়া এনার্জির কমিশনভোগী দালালরা নানাভাবে ফুলবাড়ীবাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্ঠা করছেন। এজন্য তিনি আইন করে ফুলবাড়ীবাসীর ৬ দফা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এশিয়া এনার্জির দালালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। একই দাবি জানান, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবলু।


 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন