শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভারতীয় গরুর প্রভাব পড়বে না দক্ষিণাঞ্চলে

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আগামী সপ্তাহেই জমে উঠছে কোরবানীর পশুর হাট
নাছিম উল আলম : পবিত্র ঈদুল আজহা ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গরুর হাট নিয়ে নানামুখী তৎপরতাও শুরু হয়েছে। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোরবানীর পশুর হাট জমে না উঠলেও বেপারীগণ বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে মজুদ শুরু করেছেন। এমনকি গত বছর ভারতীয় গরুবিহীন কোরবানী পার করার অভিজ্ঞতার আলোকেই এবারো আসন্ন ঈদুল আজহাতে দক্ষিণাঞ্চলে পশু বেচাকেনা করতে প্রস্তুত ব্যবসায়ীরা। এ বছরও ভারত থেকে কোন গরু না আসার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই সে আলোকে পশু সংগ্রহ করছেন ব্যবসায়ীগণ। ভারতীয় গরুর বৈধÑঅবৈধ আমদানি বন্ধের ফলে দক্ষিণাঞ্চলে গত দু’বছরে গবাদিপশুর লালন ও বেচাকেনা কিছুটা বেড়েছে বলে দাবি পশুসম্পদ অধিদফতরের।
তবে গত বছর এর আগের বছরের চেয়ে ২৫%-৪০% পর্যন্ত কোরবানীর গরুর দাম বাড়লেও এবার পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যেই দক্ষিণাঞ্চলে কোরবানীর পশুর হাটগুলো জমতে শুরু করবে। তখন মূল্য পরিস্থিতিও বাস্তব রূপ লাভ করবে বলে মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকগণ। তবে ঐ মহলটির মতে এবারো কোরবানীর পশুর দাম কমার কোন সম্ভাবনা নেই। উপরন্তু গত বছরের চেয়ে প্রকার ভেদে ১৫Ñ২৫ ভাগ পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে আগাম বার্তা দিয়ে রেখেছেন অনেক পশু ব্যবসায়ী।
বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে ইতোমধ্যে গড়ে ওঠা ৫ সহস্রাধিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার থেকে এবার অন্তত এক লাখ গরু স্থানীয় হাটÑবাজারে আসতে পারে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীগণ। পাশাপাশি কুষ্টিয়াসহ উত্তরাঞ্চল থেকেও দেশী ভাল মানের গরু বাজারে আসবে আগামী সপ্তাহেই। এ জন্য স্থানীয় পাইকারদের সব তৎপরতা শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই। ঐসব এলাকার খামারী ও পাইকারদের আগাম অর্থসহ দাদন দিয়ে রেখেছে দক্ষিণাঞ্চলের গরু ব্যবসায়ীরা।
অপরদিকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে বছর জুড়েই বকনা বাছুর কিনে নিয়ে যায় উত্তরাঞ্চলের খামারীরা। এসব গরু বছরখানেক লালন পালনের মাধ্যমে মোটা তাজা করে তারা বিক্রি করেন। যার একটি অংশ আবার দক্ষিণাঞ্চলেই ফিরে আসছে। তবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের খামার থেকেও ভাল মানের গরু বাজারে আসবে এবারের কোরবানীর বাজারে ।
গত বছর ঈদুল আজহায় ভারতীয় গরু নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা ছিল। ভারতের বিজেপি সরকার গত বছরের মতো এ বছরও ইতোমধ্যে বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে গরু রফতানি বন্ধে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানা গেছে। তবে ভারত সরকারের এ নীতির কারণে সারাদেশের মতো দক্ষিণাঞ্চলের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকসহ গরুর খামারীরা যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন। এতে দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কিছুটা বেড়ে গেলেও এখন তা সবাই মেনেও নিয়েছেন।
অতীতের মতো বিজেপির ভারত সরকারও বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে ‘যথেষ্ট বন্ধুপ্রতিম’ বলে অভিহিত করে ‘দু’দেশের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থে সব কিছু করা’র কথা বললেও গরু রফতানির ক্ষেত্রে তাদের সাম্প্রদায়িক ও সংরক্ষিত মনোভাব থেকে বের হতে পারেনি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল। এমন কি গত বছর কোরবানীর আগে বরিশালে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের তৎকালীন হাইকমিশনার পংকজ শরণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, ‘ঈদুল আজহার প্রাক্কালে ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু রফতানি কার্যক্রম শুরু হবে কি হবে না তা নির্ভর করে দু’দেশের বাণিজ্যিক রীতি-নীতির ওপর’। তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনারের কৌশলী ঐ মন্তব্য ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু রফতানির বিষয়ে তাদের নেতিবাচক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ছিল বলেও সে সময় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ মন্তব্য করেছিলেন। পঙ্কজ শরণের স্থলে ঢাকায় নতুন ভারতীয় হাইকমিশনার আসলেও তাদের নীতির কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং অতি সম্প্রতি ভারেতর কেন্দ্রীয় সরকার আসন্ন ঈদুল আজহাতে সেদেশে পশু জবাইসহ এর চালাচলেও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর ফলে বাংলাদেশে গরুর রফতানি বন্ধের বিষয়টি বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে আর কোন পরিবর্তন ঘটবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল।
তবে দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষ ভারতীয় গরুর আশা বাদ দিয়েই গত বছর থেকে কোরবানীর যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন এবারো তার ব্যত্যয় ঘটছে না। উপরন্তু ভারতীয় গরুর অবাধ আমদানিকালেও দক্ষিণাঞ্চলে পশু কোরবানীতে সে দেশের গরুর খুব একটা প্রভাব ছিল না। কারণ দক্ষিণাঞ্চলের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারতীয় গরুর কখনোই গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। কৃষি-নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে অনাদিকাল থেকেই পশু পালন একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয় হয়ে আছে। কোরবানীর ক্ষেত্রেও তাই ভারতীয় গরু নির্ভরতা দক্ষিণাঞ্চলে এবারো থাকছে না। ফলে আসন্ন ঈদুল আজহায় পশু কোরবানীতে কোন দেশের গরু আসা না আসায় দক্ষিণাঞ্চলে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছেন পশু ব্যবসায়ীগণ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন