রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কাজী জাফর আহমদের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : আজ প্রবীণ রাজনীতিবিদ জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শনিবার সকাল ১১টায় তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের চিওড়া কাজী বাড়িতে মরহুমের কবর জেয়ারাত, দোয়া মাহফিল, আলোচনা সভা ও কোরআনখানিসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। দোয়া মাহফিলে মরহুমের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের উপস্থিত হয়ে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনার জন্য পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকালে পার্টির চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মোস্তফা দৈনিক ইনকিলাবকে এ কথা জানান।
কাজী জাফর আহমদ ১৯৩৯ সালের ১ জুলাই কুমিল্লার প্রখ্যাত চিওড়া কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার রয়েছে ৬০ বছরের এক বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যময় রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি রাজনীতির অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৫৫ সালে তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন। রাজশাহী জেলা ছাত্র ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক এবং রাজশাহী কলেজ সাহিত্য মজলিশের মুখপত্র সাহিত্যিকীর সম্পাদক হিসেবে তার কর্মময় রাজনীতিতে পদচারণা শুরু।
খুলনা জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স ও এমএ (ইতিহাস) পাস করেন।
কাজী জাফর আহমদ ১৯৫৯-১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৬২-১৯৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের (এপসু) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও শরীফ শিক্ষা কমিশনবিরোধী আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ছাত্রজীবন শেষে তিনি শ্রমিক রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭২-১৯৭৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তখন ছিলেন ন্যাপের চেয়ারম্যান। এরপর ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস্ পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয়ভাবে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব ও জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন।
তিনি ১৯৭৮ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিপরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। তিনি জাতীয় পার্টির সরকারে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বন্দর-জাহাজ ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ১৯৮৯-১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-১৯৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা ও ১৯৮৯-১৯৯০ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন। ১৯৮৬-১৯৯৬ পর্যন্ত পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯৯-২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনিতে ভিজিটিং ডিস্টিংঘুয়িস্ট প্রফেসর হিসেবে দক্ষিণ এশীয় ভূম-লীয় রাজনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সে দায়িত্ব পালন করেছেন।
আন্তর্জাতিক পরিসরেও কাজী জাফর আহমদের রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। ১৯৮৭-১৯৮৮ সালে এশীয় ৭৭ জাতি মন্ত্রিপরিষদের চেয়ারম্যান, ১৯৮৭ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত ৭ম আনকটাড সমাপ্তি অধিবেশনের সভাপতি হিসাবে তিনি যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। এছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে তার ছিল পরিচিতি, ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সুসম্পর্ক। তিনি ২০১৫ সালের ২৭ আগস্ট ৭৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
খুলনায় মৃত্যুবার্ষিকী পালিত
খুলনা ব্যুরো : সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বাদ জুম্মা খুলনা মহানগরীর ইসলামপুর জামে মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, সাবেক এমপি কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সাবেক এমপি মো. মজিবর রহমান, শেখ মোশারফ হোসেন, অ্যাড. এস আর ফারুক, অ্যাড. এমএ আজিজ, খেলাফত, জলিস নেতা মাওলানা আলী আহমেদ, বিজেপি (জাফর) নেতা গোলাম মোস্তফা, ফখরুল আলম, অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, অধ্যাপক আরিফুজ্জামান অপুসহ বিপুল সংখ্যক মুসল্লী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দোয়ায় শরীক হন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন