স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা শহরে জীবনযাপনের জন্য সর্বনি¤œ ভাতাটুকু না পেলেও বছরের পর বছর গাধার খাটুনি খেটে যাচ্ছেন একশ্রেণীর ব্যাংকার। দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করলেও মাস শেষে বেতন মেলে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মী নিয়োগ বিধিমালায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করার নির্দেশনা থাকলেও এখনো তা চলছে দেদার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি বিধিমালা না মেনে বেসরকারি ব্যাংকগুলো এসব নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছে। আবার যে কোনো মুহূর্তে চাকরি থেকে বাদ দিয়েও দিচ্ছে তাদের। এ বিষয়ে দেখার যেন কেউ নেই। ব্যাংকে কর্মী নিয়োগসংক্রান্ত সর্বশেষ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা বিধিমালা অনুসারে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া গেলেও তাদের যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া অব্যাহতি দেওয়া যাবে না। স্বল্প বেতনে তৃতীয় পক্ষীয় কর্মীও রাখা যাবে না বলে উল্লেখ আছে উক্ত প্রজ্ঞাপনে।
এরপরই বিদেশী মালিকানাধীন স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক তাদের সকল কর্মীকে তৃতীয় পক্ষীয় থেকে নিজস্ব কর্মীতে পরিণত করে। তবে এইচএসবিসি বা কর্মাসিয়াল ব্যাংক অব সিলন আগের চেয়েও কঠোর করে তৃতীয় পক্ষীয় কর্মী নিয়োগ দেয়।
উক্ত প্রজ্ঞাপনের পরে দেশীয় ডাচ-বাংলা ব্যাংক চুক্তিভিত্তিক নিজস্ব ৫২০০ কর্মীকে তৃতীয় পক্ষের হাতে ছেড়ে দেয়। সিটি ব্যাংক কার্ড ডিভিশনের ২৫০০ কর্মীর বেতন বাড়ালেও পারসোনাল লোন ও হাউজ বিল্ডিং লোনের কর্মীদের বেতন কমিয়ে দেয়। সাউথ-ইস্ট ব্যাংক কর্মী ছাঁটাই করে অর্ধেকে নামিয়ে আনে, ইউসিবি ব্যাংক কিছুটা বেতন বাড়ালেও ইস্টার্ন ব্যাংক বেতন কমিয়ে দেয় চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের। আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক নিজস্ব কর্মী টার্গেট বাড়িয়ে আস্তে আস্তে ছাঁটাই করতে থাকে। অন্যদিকে ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক কার্ড ডিভিশন গুটিয়ে ফেলে প্রায় ২০০ চুক্তিভিত্তিক ব্যাংকারকে বেকার করে ফেলে। বেসরকারি খাতের প্রাইম ও প্রিমিয়ার ব্যাংকার চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ যেন অবজ্ঞাই করছে।
চুক্তিভিত্তিক ব্যাংকারদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদাসীনতা থাকায় হুমকির মুখে পড়ছে সারা দেশের প্রায় ২ লাখ শিক্ষিত যুবকের জীবন। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের ব্যাংকের নিযোগ পত্রে পারফর্মনেন্সের ভিত্তিতে স্থায়ীকরণের কথা উল্লেখ থাকলেও সিটি ব্যাংক সর্বশেষ ১০ জনকে স্থায়ী করেছিল ২০০৮ সালে। প্রতিবছর সিটি ব্যাংক সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার চুক্তিবিত্তিক ব্যাংকার নিয়োগ দেয়। ইস্টার্ন ব্যাংক চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের মাঝে থেকে ২০১১ সালে প্রায় ৪০ জনকে স্থায়ী করলেও এরপর কোনো কর্মী স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পায়নি। অথচ তাদের কর্মী সংখ্যা ১৫-২০ হাজার, যাদের সর্বোচ্চ বেতন ১০ হাজার টাকা। দেশীয় ব্যাংকগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি চুক্তিভিত্তিক ব্যাংকার নিয়োগ দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। বছরে তারা প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষিত বেকারের কর্মসংস্থান দিলেও বছর শেষে স্থায়ীকরণ করে সর্বোচ্চ ১০০ জনকে।
ব্র্যাংক ব্যাংকের কর্মী আশীষ কুমার সরকার ২০০৭ সালে হিসাব বিজ্ঞানে ঢাকা কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে ওই বছরের নভেম্বরে চাকরিতে যোগদান করেন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত ছয় বছর ব্যাংকটির পার্সোনাল লোন, ক্রেডিট কার্ড, হাউজ বিল্ডিং লোনের প্রায় ৫০০০ গ্রাহক এনে দিয়েছেন। চাকরির শর্ত ছিল ২ বছর স্থায়ী করে নেবে, কিন্তু ছয় বছরেও স্থায়ী হতে পারেননি ওই গ্রুপ লিডার। হঠাৎ অসুস্থতায় পাঁচ দিন বিছানায় থাকার ফলে খালি হাতেই অপমানিত হয়ে বিদায় হতে হয়েছে এই ব্যাংকারকে। এরপর এইচবিসি ব্যাংকে একবছর, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকে এক বছর চাকরি করে সরকারি চাকরির বয়স হারিয়ে এই শিক্ষিত বেকার আজ পথে পথে ঘোরে।
এনসিসি ব্যাংকের কর্মী শাফিকুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে ব্যাংকিং পেশার স্বপ্ন নিয়ে যোগ দেন প্রাইম ব্যাংকে। ছয় মাস টার্গেট ফিল-আপ করতে না পরায় চাকরি চলে যায় তার। এরপর ইস্টার্ন ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ঘুরে ২০১১ সালে ঠাঁই হয় এনসিসি ব্যাংকে। ২০১৬ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর কোনো মাসে তার টার্গেট অপূর্ণ ছিল না। পাঁচ বছর পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার অনুসারে তিনি চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য আবেদন করলে তাকেও বের করে দেওয়া হয় শূন্য হাতে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, ব্যাংকিং চাকরির জন্য আমাদের একটি নীতিমালা আছে। যেমন ছয়টার পর কর্মী রাখা যাবে না, সর্বনি¤œ ২০ হাজার টাকার নিচে বেতন রাখা যাবে না। বার্ষিক বিনোদন ছুটি সাপ্তাহিক ছুটি সব কর্মীই কাটাতে পারবে। তবে চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাও এই নীতিমালার আওতার মাঝেই থাকবেন। সুতারাং কোনো ব্যাংক না মেনে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন