অর্থনৈতিক রিপোর্টার : কোরবানির ঈদের আগে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াবে না বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কোম্পানিগুলো প্রতিশ্রুতি দিলেও গত সপ্তাহে ভোজ্যতেলের দাম লিটারে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। এর আগে চলতি মাসের শুরুতেও ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে ছিলো কোম্পানিগুলো। লবণ ও মসলার বাজারেও দাম বাড়ার বেশ প্রভাব রয়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সবজি কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১২ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ এডিবল অয়েল তাদের ব্র্যান্ডের সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বাড়িয়েছে। আগের চেয়ে লিটারে ২ থেকে ৪ টাকা বাড়িয়ে প্রতিলিটার বোতলজাত রূপচাঁদা সয়াবিন তেলের দাম ৯৯ টাকা ও ভিওলা ব্যান্ডের দর ৯৫ টাকা নির্ধারণ নির্ধারণ করা হয়েছে। রূপচাঁদা ৫ লিটারের দাম ধরা হয়েছে ৪৮৫ টাকা। বাজারে বিক্রি হওয়া বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে রূপচাঁদার দর সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া মিজান ব্র্যান্ডের প্রতি লিটার পাম অয়েল ৮৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও বর্তমানে খোলা বাজারে পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়।
ভালো মানের খাবার লবণের দাম ৪০ টাকা আর খোলা লবণের দাম ১৮ টাকা কেজি। লবণের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে ৪ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম তাই এই সংকট। ব্যবসায়ীরা বলছেন চলতি বছর লবণ উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে মজুদ করে দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অপরিশোধিত লবণ আমদানির অনুমতি মিলেছে দেরি করে। ফলে ঈদের সময়ের চাহিদা মেটানো প্রায় অসম্ভব।
গত সপ্তাহের মসলার মধ্যে এলাচের দামটাই মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়েছে। কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। ঈদের আগে আরও কয়েক দফা এলাচের দাম বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তারা আরো জানিয়েছে, তবে অন্যকিছুর দাম আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই। যা বাড়ার ইতোমধ্যে তা বেড়ে গেছে। কেন দাম বেড়েছে, এ ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দিতে পরেন নি তারা।
মসলার মধ্যে আমেরিকান গুয়াতেমালা এলাচ (ছোট) প্রতি কেজির বর্তমান দাম ১০৪০ টাকা, পূর্বের মূল্য ছিলো (সপ্তাহ খানেক আগে) ৮৮০ টাকা। বড় এলাচ কেজি প্রতি ২৬০ টাকা বেড়ে দাম ১৪৮০ টাকা, পূর্বের মূল্য ছিলো ১২২০ টাকা। এছাড়া ভারতীয় এলাচের দামও বেড়ে গেছে বহুগুণ। সপ্তাহ খানেক আগে কেজি প্রতি ভারতীয় এলাচের দাম ছিলো ৯৮০ থেকে ১০০০ টাকা, যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০০ টাকা।
থেমে নেই জিরার দামও। বেড়েছে কেজিপ্রতি প্রায় ৫০ টাকা করে। ভারতীয় জিরা কেজি প্রতি ৬০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪০ টাকা। সিরিয়ান জিরার দাম ছিলো ৩২৫ টাকা, বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪৫ টাকা। টার্কিশ জিরার দাম ১০ টাকা বেড়ে ৩৫০ টাকা। এছাড়া আফগান জিরা এবং ইরানি জিরার সরবরাহ নেই বাজারে। মসলা-পেস্তা ১৬৮০ টাকা থেকে বেড়ে ২০৫০ টাকা, লবঙ্গ ১২০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা, বাদাম কেজি প্রতি ১০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকা, কালো গোল মরিচ ৮৮০ টাকা থেকে ৯২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
অপরিবর্তিত রয়েছে বেশ কিছু মসলার দাম। সরিষা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, প্রতিকেজি, পাঁচ ফোঁড়ন ১২০ টাকা, জায়ফল ৬৮০ টাকা, দারুচিনি ২৬০ টাকা ও তেজপাতা ১৬০ টাকা। কমেছে হাতেগোনা দু’একটি মশলার দাম। ধনিয়া ২৮০ টাকা থেকে কমতে কমতে ৯৫ টাকা, কিসমিস ৩২০ থেকে ২৫০ টাকা, কালোজিরা ২৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।
শুক্রবার রাজধানীর পলাশী ও নিউমার্কেটসহ বেশ কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় সব ধরনের সবজিতেই দম বেড়েছে। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে সব ধরনের সবজির সরবরাহ রয়েছে। তারপরও পাইকারি দাম বেশি ধরায় কেজিপ্রতি ৫ থেকে ১২ টাকা বেশি নিতে হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ টাকা, বেগুন ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৫ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, পেঁপে ২৫ টাকা, ঢেড়স ৪৫ টাকা, কচুর লতি ৪০ টাকা, ঝিঙা ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০, মিষ্টি কুমড়া প্রতি ফালি ২০ টাকা, পটল ৪০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি পিস লাউ ৪৫ টাকা, চালকুমড়া ২৫ টাকা, বাধাকপি ২৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা আঁটি, কলমি শাক ৫ টাকা আঁটি এবং কাঁচকলা ২০ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া শাপলা প্রতি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা, কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ৩৫, দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিম ৪৫ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন