বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ইসলাম অনুসৃত না হওয়ায় ইনসাফ সুবিচার সুশাসন কায়েম হচ্ছে না

ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও ডিজি ইসলাম ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট -বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইশা ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই
স্টাফ রিপোর্টার : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেছেন, আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম হল ইসলাম। আজকে রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলাম অনুসৃত না হওয়ার কারণেই দেশে ইনসাফ, সুবিচার ও সুশাসন কায়েম হচ্ছে না। সমাজ আজকে নীতি-নৈতিকতাহীন, বস্তুতান্ত্রিক সফলতার চিন্তায় বিভোর। মানুষ বল্গাহীন দুর্নীতি, হত্যা, পাপাচার এবং দুুরাচারে লিপ্ত হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাকে লুণ্ঠনের অধিকার মনে করছে। রাজনীতিকে সেবা নয়; বরং শোষণের হাতিয়ার বানিয়েছে। জাতি ভয়াবহ ধ্বংসের দিকে ছুটে চলছে। এই ধরনের সংকট মোকাবেলার জন্যই বাংলার মুজাদ্দিদ, আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক রাহবার মাওলানা সৈয়দ ফজলুল করীম (রহ.) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, দেশে বৃটিশ প্রবর্তিত শিক্ষার কারণে লাখো তরুণ ও যুব সমাজের ঈমান-আকিদা ধ্বংস হয়ে ভ্রান্ত মতবাদ ও নাস্তিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। ছাত্র-রাজনীতি রাজনৈতিক দলসমূহের লেজুড়ভিত্তিতে পরিণত হয়েছে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতিতে তাদের ঈমান-আকিদা রক্ষার জিম্মাদারী ইশা ছাত্র আন্দোলনের সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীলদেরকে নিতে হবে। জাতির হাজার বছরের মুক্তির স্বপ্ন আপনাদের কাঁধে অর্পিত হয়েছে। তাই তরুণ ও যুব সমাজকে রক্ষাসহ ইসলামী শিক্ষার জ্ঞানে শিক্ষিত করার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ইশা ছাত্র আন্দোলনের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীদের মহামিলনের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি সাবেক ও বর্তমান দায়িত্বশীলদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। ২৫ বছর পূর্তি মহামিলনের আজকের সমাবেশে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত হাজার হাজার দায়িত্বশীল অংশ নেন। সকাল ৯টা থেকে সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ফজরের পর থেকেই দায়িত্বশীল এবং বর্তমান নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। পীর সাহেব চরমোনাইর বক্তব্যকালে মুহুর্মুহু শ্লোগানে প্রকম্পিত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবেশ।
কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল ইসলাম আল-আমীন-এর সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল শেখ ফজলুল করীম মারুফ-এর সঞ্চালনায় পুনর্মিলনী সমাবেশে বিশেষ মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ (ভারত)-এর কার্যকরি কমিটির সভাপতি ও দারুল উলুম দেওবন্দ-এর সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা সালমান বিজনুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন-এর আমীর ড. ঈশা শাহেদী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন-এর আমীর ড. ঈশা শাহেদী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল-ফরিদি, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইসলামী ঐক্য জোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ খলিলুর রহমান, মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইয়ুম, মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, কে.এম আতিকুর রহমান প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন হাবিবুর রহমান কাসেমী, ড. আফম খালিদ হোসেন, মিযানুর রহমান সাঈদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক মুফতি এছহাক মুহাম্মদ আবুল খায়ের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক হাফেজ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যপক আশরাফ আলী আকন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আল্লামা খালেদ সাইফুল্লাহ, রহমতে আলম কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক, এবং সর্বদলীয় ইসলামী ছাত্র ঐক্যের নেতৃবৃন্দ।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রোধে অবিলম্বে ধর্মহীন শিক্ষানীতি, ভিন্ন ধর্মতত্ত্বের পাঠ্যসূচি ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬ অবিলম্বে বাতিল করে ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামিক স্কলারদের সাথে নিয়ে এগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে। জঙ্গিবাদ বন্ধে, জঙ্গি কার্যক্রমের উস্কানিদাতা এবং অর্থদাতাদের চিহ্নিত করে ওদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী কওমি শিক্ষার স্বকীয়তা রক্ষা করতে হবে। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, এদেশের মুসলিম সন্তানেরা জ্ঞানের অভাবে এবং পশ্চিমা অপপ্রচারের কারণে ইসলামকে বাদ দিয়ে একদিকে কুফরী গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছে। অপরদিকে ভ্রান্ত মতবাদে আকৃষ্ট হয়ে জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হচ্ছে জান্নাত পাওয়ার মিথ্যা আশায়। এ পথ থেকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ইসলামের নামে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকা- দ্বারা মানুষ হত্যা করে ইসলামকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে। এসব অপকর্মের স্থান ইসলামে নেই। এগুলো প্রতিহত করে ইসলামের সঠিক রূপ তুলে ধরার জিম্মাদারি গ্রহণ করতে হবে দায়িত্বশীলদের।
পীর সাহেব চরমোনাই তার ভাষণে বলেন, ভারতীয় পানি আগ্রাসনের শিকার হয়ে এদেশের মানুষ বন্যায় ও খরায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে। দেশের বনসম্পদ ধ্বংস করে ভিনদেশী প্রভুর চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা হচ্ছে। দেশের বুক চিড়ে ট্রানজিটের নতজানু চুক্তিতে আবদ্ধ হতে হয় দেশ ও জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আজও এদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে ভিনদেশি প্রভুরা। দেশে এখন বাকস্বাধীনতা নেই। ভোটের অধিকার নেই। এ অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্যেই ১৯৭১ সালে এ জাতি চূড়ান্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তাই দেশের এহেন কঠিন পরিস্থিতিতে নীরবে বসে থাকার কোন সুযোগ নেই। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ইসলাম-দেশ-জাতি ও মানবতার কল্যাণে সকলকে এগিয়ে এসে কার্যকর অবদান রাখতে হবে।
বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, পীর সাহেব চরমোনাইর নেতৃত্বে দেশে কিছু করা সম্ভব। যতদিন এদেশে ইসলাম থাকবে ততদিন দেশে মুসলমান থাকবে। খুতবা নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইসলাম ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। ইফার ডিজির মত খারাপ লোক ইতিহাসের নমরুদ-ফেরাউনও ছিল।
ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এর প্রেসিডেন্ট শেখ শওকত হোসেন নিলু বলেন, বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধকে ধ্বংস করার অপপ্রচার চলছে। তিনি বলেন তার দল নিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সাথে একসাথে থাকার ঘোষণা করেন। তিনি পীর সাহেব চরমোনাইকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি আপনার কর্মী হিসেবে কাজ করব। আমার নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই। তিনি ইসলামী আন্দোলনকে আগামী দিনে তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনা বলে মন্তব্য করেন।
সমাবেশের ১০ দফা ঘোষণা হচ্ছে : বিতর্কিত শিক্ষানীতি ২০১০, প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬ এবং সর্বস্তরের বাংলা পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম, দেশ ও স্বাধীনতার চেতনা বিরোধী সকল বিষয়বস্তু প্রত্যাহার ও করে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর বোধ-বিশ্বাসের আলোকে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস, সকল উচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে সেশনজট, আবাসন সংকট এবং সহিংস রাজনীতি উৎখাত করা। উগ্রবাদ ও চরমপন্থা থেকে ছাত্র-সমাজকে রক্ষা কল্পে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনতিবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু সকল জেলায় একটি করে আলিয়া মাদরাসা সরকারিকরণসহ মাদরাসার ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগে ভর্তির সমান সুযোগ দেয়া। দেশের সকল কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র ও স্বকীয়তা বজায় রেখে সনদের সরকারি স্বীকৃতি দেয়া। পাশাপাশি দেশের সর্বত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক কোরআনী শিক্ষা চালু করা। নারীর মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে অশ্লীল উপস্থাপন বন্ধসহ সকল প্রকার অশ্লীল কৃষ্টি কালচার বন্ধ করা। সহিংস রাজনীতি পরিহার করে শান্তির পথে, জনগণের কল্যাণে অবদান রাখার ব্যবস্থা করা। সকল সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের কর্মতৎপরতার উৎস খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা। জুমার নামাযের পর মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। সংগীত পরিবেশন করেন স্বপ্লসিঁড়ি সাংস্কৃতিক ফোরাম, জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন কলরব, আহ্বান, শিহরণসহ বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীবৃন্দ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Shahjahan Gazi ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১১:২৭ এএম says : 0
100%Right
Total Reply(0)
Hafizur Rahman Shakil ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:২৫ পিএম says : 0
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার রোধে অবিলম্বে ধর্মহীন শিক্ষানীতি, ভিন্ন ধর্মতত্ত্বের পাঠ্যসূচি ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬ অবিলম্বে বাতিল করে ওলামায়ে কেরাম ও ইসলামিক স্কলারদের সাথে নিয়ে এগুলো সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
Total Reply(0)
জাহিদ ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৫৫ পিএম says : 0
সময় এসেছে সকল ইসলামী দল ও সাধারণ মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার
Total Reply(0)
তারেক মাহমুদ ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ৫:৩১ পিএম says : 0
চরমোনাইর পীর সাহেবকে অসংখ্য মোবারকবাদ।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন