শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শহীদ জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে বিএনপির উদ্বেগ

আ’লীগের সংকীর্ণতা নোংরা বড় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত -মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫০ পিএম, ২৬ আগস্ট, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার করে নেয়ার মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারই ২০০৩ সালে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সন্মননা স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন। সেবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান- এই দু’জনকে স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়। এটা ছিলো বাংলাদেশের রাজনীতির পরম ঔদার্য্যরে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তিনি বলেন, যিনি পদক প্রবর্তন করলেন (জিয়াউর রহমান), তিনি বাদ। কিন্তু পদক থাকবে, তার কীর্তিও থাকবে। এটা যে কত বড় সংকীর্ণতা, আত্মঘাতী ও নোংরা কাজ, সেটা আওয়ামী লীগ যেদিন বুঝবে, সেদিন আর শোধরাবারও সুযোগ হয়ত থাকবে না বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সম্পূর্ণ বৈধভাবে নির্বাচিত একটি সাংবিধানিক সরকারের দেয়া এই সন্মাননা বর্তমান বিতর্কিত আওয়ামী লীগ সরকার যাদের নির্বাচন নিয়ে শুধু প্রশ্ন নয়, জনগণ সবাই জানে ওই নির্বাচন ছিলো জনগণের একেবারে কোনো রকম অংশগ্রহণ ছাড়াই। সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। তারা এরকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এই সংবাদে আমরা এবং গোটাজাতি বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন হয়েছি। এই বিষয়টি শুক্রবার প্রকাশিত দুইটি জাতীয় দৈনিকের সংবাদ উদ্ধৃতি হিসেবে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
চার দলীয় জোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০০৩ সালের বৈধভাবে নির্বাচিত সরকারের একটি মন্ত্রিসভা কমিটি যেটা পদক বিতরণ করার জন্য সুপারিশ করে থাকেন, সেই কমিটি এবং একই সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামে, স্বাধীনতা যুদ্ধে ও বাংলাদেশের জাতি নির্মাণে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে এই মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেয়ার সুপারিশ করেছিল এবং পরে সেটা মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছিল, তাদেরকে পদক প্রদান করা হয়েছিলো। ওই পদক ও তার নথি জাদুঘরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিলো, সেটা জাদুঘরে এখনো রাখা আছে।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে হতাশার সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করছি যে, তারা (ক্ষমতাসীন) ঐক্যের রাজনীতিকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দিয়ে গোটা জাতিকে বিভাজনের নিয়ে এসে বিভক্ত করে ফেলেছে। তারা সচেতনভাবে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই জাতিকে বিভাজনের রাজনীতিতে পুরোপুরি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সামরিক ক্ষেত্রের শৌর্য-বীর্য ছাড়া আর কোনো ক্ষেত্রে মেধা-মনিষা-যোগ্যতা-কৃতিত্ব-নেতৃত্বে স্বীকৃতি হিসেবে দেশী-বিদেশী কাউকেই রাষ্ট্রীয় কোনো খেতাব, পদক বা ভুষণে বিভুষিত করাকে ’৭২ সালে স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। একাডেমী অনার ছাড়া বিদেশ থেকে কোনো সন্মাননা অর্জন প্রেসিডেন্ট প্রাক অনুমোদনের শর্ত যুক্ত করেছিলো তারা। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় সন্মানার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে দেশে প্রথম স্বাধীনতার পদক ও একুশের পদক প্রর্বতন করেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি, দেশের বিভিন্ন বরণ্যে ব্যক্তিবর্গ যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান রেখেছেন, তাদেরকে স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে।
২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে মরণোত্তর স্বাধীনতার পদক প্রদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারই ২০০৩ সালে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সন্মননা স্বাধীনতা পদকে ভুষিত করেন। সেবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান- এই দু’জনকে স্বাধীনতা পদক দেয়া হয়। এটা ছিলো বাংলাদেশের রাজনীতির পরম ঔদার্য্যরে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, যিনি পদক প্রবর্তন করলেন, তিনি বাদ। কিন্তু পদক থাকবে, তার কীর্তিও থাকবে। এটা যে কত বড় সংকীর্ণতা, আত্মঘাতী ও নোংরা কাজ, সেটা আওয়ামী লীগ যেদিন বুঝবে, সেদিন আর শোধরাবারও সুযোগ হয়ত থাকবে না।
জিয়াউর রহমানের পদক বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমান ইতিহাসে শুধু নয়, বহু মানুষের হৃদয়ে আছেন পরম শ্রদ্ধায়। কাজেই তিনি স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে মর্যাদার আসনের ফিরবেন অবশ্যই।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা গায়ের জোরে নোংরাভাবে জিয়াউর রহমানকে মুছতে চাইছে, তাতে তিনি ফিরলে হয়ত একইভাবে তারাও মুছে যেতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধ, বহুদলীয় গণতন্ত্র, আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে জিয়াউর রহমানের বহুমুখী অবদানের কথাও তুলে ধরেন রাজনীতিতে সজ্জ্বন হিসেবে পরিচিত বিএনপির এই মহাসচিব।
তিনি বলেন, একটি কথা বলতে চাই, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যে রাজনীতি করছে, বাংলাদেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আজে গণতন্ত্রকে ধবংস করে দিয়ে মানুষের বাক স্বাধীনতা, সংগঠন করার স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা সব কিছুই হরণ করে নেয়া হয়েছে। সেই অবস্থার মধ্যে আওয়ামী লীগ দেশকে চরম সংকট, চরম বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। আমরা সবসময় ঐক্যে রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আজকে যেসমস্ত সংকট বাংলাদেশে চেপে বসেছে, একদিকে গণতন্ত্রহীনতার সংকট, অন্যদিকে জঙ্গিবাদের সংকট। এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি মাত্র পথ গণতন্ত্র আরো গণতন্ত্র। গণতন্ত্র কেড়ে নেয়া নয়, অধিকার কেড়ে নেয়া নয়।
এ অবস্থা থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আবারো বলতে চাই, এই ভয়াবহ পথ থেকে সরে এসে আপনারা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করার জন্য, মানুষের হৃদয়কে ভালোবাসার জন্য, আপনারা অবশ্যই গণতন্ত্র পথে ফিরে আসুন। স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিন, অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে দিন এবং ঔদার্য্য পথে ফিরে এসে আরো বেশি করে গণতন্ত্র দিয়ে বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে এই সংকটগুলো মোকাবিলা করে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করার সুযোগ করে দিন। অন্যথায় কোনোদিন জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না। জাতির কাছে আপনাদের একদিন জবাবদিহি পড়তে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এ সময়ে সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করীম শাহিন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
আল আমিন ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১:৩০ পিএম says : 1
যারা গায়ের জোরে নোংরাভাবে জিয়াউর রহমানকে মুছতে চাইছে, তাতে তিনি ফিরলে হয়ত একইভাবে তারাও মুছে যেতে পারেন।
Total Reply(0)
Millat ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১:৩১ পিএম says : 0
it is not a good decision
Total Reply(0)
Tania ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ১:৩২ পিএম says : 0
ai sob buddi je ke dey seta e amar buje ase na
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন