সময়ের সাথে সাথে এখন সবকিছুতেই লেগেছে প্রযুক্তির ছোয়া। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, অফিসের কার্যক্রমসহ সবই চলছে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে। ব্যতিক্রম নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। ব্যস্ততম নগরীর জীবনকে প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে কাজ করছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে করোনাকালে লকডাউনের সময়ে ঘরবন্দি মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবার, ওষুধ, খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়ে আস্থা অর্জন করেছে এই খাত। বিগত অর্ধযুগ ধরে ই-কমার্স যতটা প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিল, করোনায় ছাড়িয়ে গেছে সেটিকেও। এছাড়া মানুষকে অভ্যস্ত করে তুলেছে অনলাইন কেনাকাটায়। এর সুফল পাচ্ছে ই-কমার্স খাত। গ্রাহক বৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানও যুক্ত হচ্ছে অনলাইন ব্যবসায়।
ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স মার্কেটের আকার ছিল ৫৬০ কোটি টাকা, পরের বছর সেটি দাঁড়ায় ৮ হাজার ৬৩২ কোটি, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ৫০৪ কোটি, ২০১৯ সালের ১৩ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। আর করোনাকালে গত বছরে এটি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা।
শুধু পণ্য কেনাকাটায় নয়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই এখন চলছে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছেন অনলাইনে, পরীক্ষাও চলছে ডিজিটাল মাধ্যমে। স্বাস্থ্যসেবায়ও ব্যবহার হচ্ছে টেলিমেডিসিন। ফলে প্রত্যন্ত গ্রামের রোগীরা এখন রাজধানীসহ বড় বড় হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে অনলাইনেই যোগাযোগ করছেন, নিজের সমস্যা তুলে ধরছেন, সমাধান নিচ্ছেন ভার্চুয়াল মাধ্যমেই। মন্ত্রী সভার বৈঠক থেকে শুরু করে বড় থেকে ছোট প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সভাগুলো হচ্ছে অনলাইনে। একইভাবে কেনাকাটার ক্ষেত্রে অনলাইন পেমেন্ট, চলাচলের ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং সবগুলোরই ব্যবহার বেড়েছে।
ধীরে ধীরে ব্যাংকিং, লজিস্টিক কমিউনিকেশন এবং পেমেন্ট মেথডের উন্নতির হাত ধরে ই-বিজনেস সেক্টরটির উন্নয়নের অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষ করে ব্যাংকিং ক্ষেত্রটি ইন্টারনেট পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করছে। গ্রাহকদের কাছে এখন ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড সেবা এবং ডিজিটাল ওয়ালেট আরও বেশি সহজলভ্য হওয়ায় ক্যাশ অন ডেলিভারির (সিওডি) পরিসরও বাড়ছে।
ই-কমার্সের গ্রোথ সম্পর্কে চালডালের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) জিয়া আশরাফ বলেন, গত কয়েক মাসে ই-কমার্সে প্রায় শতভাগ গ্রোথ হয়েছে। এটা এই শিল্পের জন্য ইতিবাচক। আশাকরি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও এই গ্রোথটা থাকবে। কারণ, মানুষের এখন অভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। ঘরে বসেই সব পাচ্ছেন। তাহলে কষ্ট করে কেন আর বাইরে যাবেন।
জানা যায়, মহামারী করোনায় ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের পরিসর কমিয়েছে, ছাঁটাই হয়েছে কর্মী, কমানো হয়েছে বেতন। আর্থিক সঙ্কটের কারণে হাহাকার করেছে প্রতিষ্ঠিত অনেক প্রতিষ্ঠানই। তবে এই করোনায় বিপরীত চিত্র দেখেছে ই-কমার্স খাত। করোনাকালে একদিকে যেমন এই ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বেড়েছে অন্যদিকে সংক্রমণের মধ্যেই যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন ই-কর্মাস কোম্পানি। এর মধ্যে রয়েছে- সেরাবাংলা ৬৪ ডট কম, সেলেক্সট্রা ডট কম ডট বিডি, বি৭১বিডি ডট কম, ধামাকা শপিং, আলিশামার্ট ডট কম ইত্যাদি। এখনো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইন মার্কেটে যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলেও জানা গেছে।
ই-কমার্সে আগমন প্রসঙ্গে বি৭১বিডি ডট কমের প্রধান নির্বাহী মো. মনিরুজ্জামান মৃধা বলেন, ই-কমার্স নিয়ে এখন মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় ই-কমার্স সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এছাড়া অনলাইন শপে ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে কোনও মধ্যস্বত্বভোগী নেই।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, করোনাকালে ই-কমার্সে দ্বিগুণ গ্রোথ হয়েছে। যারা আগে কখনো ভাবেনি ই-কমার্স ব্যবসা করছে ট্রেন্ডের কারণে তারাও এখন এই দিকে ঝুঁকছে। লাখ লাখ উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে এই খাতে। মার্কেট অনেক পরিবর্তন হচ্ছে, মার্কেটের আকার বড় হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন ই-কমার্সে অর্ডার পড়ছে এক লাখ ২০ হাজার থেকে এক লাখ ৫০ হাজারের মতো। তবে এটি এখনো বড় শহরগুলোতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। গ্রাম পর্যায়ে এটি পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
নতুন নতুন কোম্পানি ই-কমার্সে আসাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, এটা ভালো দিক। ঢাকার বাইরেও ই-কমার্স তৈরি হচ্ছে। সবাই প্রতিষ্ঠা পাক, দাঁড়িয়ে যাক এটাই চাই। তবে ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে সবাইকে নিয়ম মানার আহ্বান জানান তিনি। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন