খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মহামনি এলাকায় ফেনী নদীতে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর নির্মাণ কাজ চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে দুই বাংলার মানুষ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন করবেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ মেঘালয়, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলসহ এ সাতটি রাজ্যের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষে দুই বাংলার সরকার প্রধান এ উদ্যোগ গ্রহণ করে। স্থলবন্দরকে ঘিরে বন্দর টার্মিনাল, সড়কপথ, গুডামঘরসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। রামগড়-হেঁয়াকো-বারৈয়ারহাট প্রধান সড়ক প্রশস্তকরণসহ ৭ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেট)। এসব ৭ প্রকল্প একনেকের চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুমোদন দেয়া হয়। সাতটি প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪৬১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। তার মধ্যে ২ হাজার ৬১৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা সরকার দেবে, বাকি ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা বিদেশি ঋণ এবং ২৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা বিশ্ব ব্যাংকের অনুদান।
এদিকে স্থলবন্দর নির্মাণের ছোঁয়ায় দুই বাংলার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ আর্থিক উন্নতির দ্বার খুলে যাবে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময়ে পরির্দশনকালে সাংবাদিকদের বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ অতুলনীয়ভাবে এগিয়েছে। ফেনী নদীর ওপর নির্মিত এ সেতু বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ, ব্যবসা, সাংস্কৃতিক, উচ্চশিক্ষা, পর্যটনসহ সুসম্পর্ক আরো বৃদ্ধি করবে।
২৭ অক্টোবর ২০১৭ সালে দেশটির ন্যাশনাল হাইওয়েস এন্ড ইনফাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) তানিশ চন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেড-এর তত্ববধানে ৮২.৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮৬ একর জমির ওপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮০ মিটার প্রস্তের মূল সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার মূলে কাজ শুরু করে। সেতুটিতে মোট পিলার রয়েছে ১২টি, বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে ৮টি ও ভারতের অংশে ৪টি। স্প্যান রয়েছে ১১টি। এর মধ্যে বাংলাদেশ অংশে ৩৩.৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দু’টি, ২৭.৫ মিটারের ৪টি ও ৫০ মিটারের একটি। নদীর ওপর ৮০ মিটারের একটি, ভারতের অংশে ৫০ মিটারের একটি ও ২৭.৫ মিটার দৈর্ঘ্যের দু’টি স্প্যান রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানের সেতুটি যুক্ত হয়ে রামগড়-বারৈইয়ারহাট-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে অপরদিকে ভারত অংশে নবীনপাড়া ঠাকুরপল্লী হয়ে সাব্রুম আগরতলা জাতীয় সড়কসহ রেলপথ যুক্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মু, মাহমুদ উল্লাহ মারুফ বলেন, স্থলবন্দরটি চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দুই বাংলার মানুষ উপকৃত হবে। রামগড় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কার্বারী এ প্রতিনিধিকে বলেন, বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হওয়ায় পার্বত্যবাসী আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। স্থলবন্দর পুরোদমে চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনীতিতে অবদান রাখাসহ আর্থিক উন্নতির দ্বার খুলে যাবে বলে মনে করেন।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সাথে বৈঠকে রামগড়-সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ২০১৫ সালের ৬ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেনী নদীর ওপর নির্মাণাধীন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন