শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

ইসলামে শত্রুর সাথে ভালো ব্যবহার

প্রকাশের সময় : ২৮ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফিরোজ আহমাদ
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেহ যদি তোমার সহিত অন্যায় ব্যবহার করে তুমি সদ্ব্যবহার দ্বারা তাহার প্রতিশোধ লও, তাহা হইলে যাহার সহিত তোমার শত্রুতা আছে সে তোমার পরম বন্ধু হইবে’। (সূরা মুমিনূন : ৯৬)। প্রত্যেক পেশায় ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অবস্থানের ধরন অনুযায়ী কম-বেশি প্রতিপক্ষ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে। সহজে ভাষায় প্রতিপক্ষ কিংবা প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে শত্রু মনে করা হয়। রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে ও অফিস-আদালতে শত্রু সম্পর্কে সকলকে সতর্ক থাকতে হয়। কারণ শত্রু দ্বারা যে কোনো সময় শারীরিক মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি সংঘটিত হতে পারে। শত্রুর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার লক্ষ্যে মানুষ কোর্ট-কাচারি, চেয়ারম্যান-মেম্বার, ফকির-দরবেশ ও কবিরাজের নিকট দৌড়াদৌড়ি করে। কুরআনে শত্রুর শত্রুতা হ্রাস করার জন্যে ভালো আচরণের তাগিদ প্রদান করা হয়েছে। বোখারি ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ‘কোনো মুসলমানের সহিত মনোমালিন্য হইলে তিন দিবসের বেশি এইরূপ সঙ্গ ত্যাগ করা জায়েয নাই যে দেখা হইলে একে অন্য হইতে মুখ ফিরাইয়া লয়। উভয়ের মধ্যে যে প্রথম সালাম করিবে সেই উৎকৃষ্ট’।
কেউ শত্রুকে ক্ষমা করতে চায় না। সুযোগ পেলে এক হাত দেখে নেয়ার চেষ্টা করে। সবসময় প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। প্রতিশোধ নেয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে মার্জনা করে ও সংশোধিত হয় তবে আল্লাহর উপরই তাহার প্রতিদান রয়েছে’। (সূরা শুরা : ৪০)। আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘তাহাদের প্রতি আশীর্বাদ কর, নিশ্চয় তোমার আশীর্বাদ তাহাদের জন্য শান্তিপ্রদ’। (সূরা তাওবা : ১০৩)। ‘তোমরা সৎ কার্যের দ্বারা অসদ্বিষয় দূরীভূত কর। (সূরা মুমিনূন : ৯৬)। ভালো কাজ দিয়ে সবসময় মন্দকে দূর করতে হয়।
শত্রুকে বন্ধু বানাতে হলে শত্রুর দোষ-ত্রুটি খোঁজা থেকে বিরত থাকতে হবে। শত্রুর দোষ অন্বেষণ করার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও আরো দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। পরস্পরের প্রতি ক্রোধ বৃদ্ধি পেতে থাকে। একে অপরের প্রতি দুর্নাম রটানোর ফলে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে দোষারোপ করিও না, কাহারও দোষ অন্বেষণ করিও না। তোমরা গুপ্তচর হইও না এবং একজনের অনুপস্থিতিতে অন্যজন দুর্নাম করিও না’। (সূরা হুজরাত : ১১-১২)।
শত্রুতা হ্রাস করতে হলে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে মন্দ কথা প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ পরস্পরের মন্দ কথা প্রচারের মাধ্যমে শত্রুতার ভিত্তি মজবুত হয়। তৃতীয় একটি পক্ষ এসে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে। তখন পরস্পরের শত্রুতার ডাল-পালা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শত্রুতা ব্যক্তি থেকে গোষ্ঠী পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মন্দ কথা প্রচার আল্লাহতায়ালা পছন্দ করেন না’। (সূরা নিসা : ১৪৮)। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) সর্বদা একটি পাথরের টুকরো মুখে রেখে দিতেন যাতে অনর্থক কথা বলার প্রতি সাবধান থাকতে পারেন। হযরত হাসান বসরী (র.) বলেছেন, ‘যে তাহার রসনাকে রক্ষা করে না, সে তার ধর্ম পালন করে না’।
পরস্পরের শত্রুতাকে কেন্দ্র করে সমাজে দ্বন্দ্ব-সংঘাত বিবাদ-বিচ্ছেদ বৃদ্ধি পায়। মানুষের প্রাণহানি অঙ্গহানি ঘটে। শত্রুতা উত্তরাধিকার লাভ করে। দাদার সময়কার বিবাদ নাতির সময় কালে এসে প্রতিশোধ নেয়া হয়। বাংলাদেশের কিছু কিছু অঞ্চলে দেখা যায় বংশ পরস্পর শত্রুতা চলে এসেছে। সামান্য ধান কাটাকে কেন্দ্র করে আগ্নেয় অস্ত্রের ব্যবহার হয়ে যায়। এক গ্রামের মানুষ পাশের গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলে না। চলাফেরার জন্যে পরস্পর ভিন্ন ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করেন। প্রতিপক্ষের উপর পাল্টা আঘাত হানার লক্ষ্যে রাস্তার পাশের কিনারায় দলবল নিয়ে ওৎ পেতে থাকে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘আল্লাহ ফ্যাসাদকারীকে ভালোবাসেন না’। (সূরা মায়েদা, আয়াত-৬৪)।
আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,‘ সত্য পথ প্রদর্শন, সুন্দর ব্যবহার এবং মিতাচারিতা নবুয়তের ২৫ ভাগের একভাগ’। আমাদেরকে শত্রুতামূলক মনোভাব পরিহার করতে হবে।’ কুরআনের শুরুতে বলা হয়েছে, ‘এই গ্রন্থ শুধুমাত্র বিশ্বাসীদের জন্যে’। যারা বিশ্বাসী তারা কখনো শত্রুতা সৃষ্টি করতে পারে না। এবং শত্রুতা সৃষ্টিতে সহায়তা করে না। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসূল (সা.) তোমাদিগকে যাহা দেন তাহা গ্রহণ কর এবং যাহা করিতে নিষেধ করেন তাহা হইতে বিরত থাক’। (সূরা হাশর : ৭)। সুতরাং আমাদের সকলকে প্রতিশোধ নেয়ার মনোভাব পরিহার করতে হবে। তাহলে সমাজে দ্বন্দ্ব সংঘাত হানাহানি হ্রাস পাবে। সমাজ ব্যবস্থা সুন্দর হবে।
লেখক : ধর্ম ও সূফিতাত্ত্বিক গবেষক

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন