স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ দুঃশাসনের প্রতিচ্ছবি। এদেশ পুলিশ স্টেট। সাম্প্রতিককালে চায়ের দোকানদার বাবুল মিয়া যেভাবে নিহত হয়েছেন এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কোথায় দেশের সেই সুশীল সমাজ। তাদের কোনো প্রতিবাদ দেখিনা। গতকাল শনিবার দুপুরে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমরা যদি প্রতিবেশী দেশের পকেটে চলে যাই, এদেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার যদি ক্রমাগত বঞ্চিত হয়, তাহলে আমাদের অবস্থা একদিন ইরাক অথবা সিরায়ার মতো হতে পারে। যেখানে গণতন্ত্র নেই, সেখানে আফগানিস্তান ও কাশ্মিরের মতো অবস্থা হতে বাধ্য।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘অল কমিউনিটি ফোরাম’ নামক সংগঠনের উদ্যোগে ‘কাশ্মিরে জাতিসংঘের ভূমিকা ও দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির বাধাসমূহ’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গবেষক জ. মামুন।
মেজর হাফিজ বলেন, পুলিশ বাহিনী যে বেপরোয়ায় অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যেহেতু তারা একটি দলের পুলিশ বাহিনী। তাদেরকে রাজনৈতিক কাজে নিয়োগ করা হচ্ছে। অথচ আমাদের পুলিশ বাহিনী এরকম ছিল না। তাদের ভালো কাজ করার ঐহিত্য রয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন পুলিশ সব সময় ভালো কাজ করে। এই ধরনের ঢালাও লাইসেন্স দেয়ার ফলেই তারা (পুলিশ) সীমা অতিক্রম করেছে।
বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার সমালোচনা করে তিনি বলেন, কীসের দেশদ্রোহিতা ? ৭ মাস তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বন্দি ছিলেন। তিনি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কখনো মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থাকতে পারেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় গঠন করেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করেছেন।
আজকে একধরনের গৃহ পালিত মিডিয়ার ষড়যন্ত্রের কারণে তাকে স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা হতে পারে যদি বল প্রয়োগের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে উৎখাত করার চেষ্টা হয়ে থাকে। খালেদা জিয়া তো সেই ধরনের কোনো চেষ্টা করেননি।
তিনি অভিযোগ করেন, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা যদি ৩০ লাখের থেকে কমও হয়, তাতে করে পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা আমাদের কমবে না। যদি বেশি হয় সেটা ইতিহাসবিদরা বের করে নেবেন। সেজন্য দেশনেত্রীকে কেন মিথ্যা মামলার সম্মুখীন হতে হবে? অথচ তারা (ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত সংগঠন) দেশনেত্রীর বাড়ি ঘেরাও করতে গেছে।
বাংলাদেশ গৌরব অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশংসা করে তিনি বলেন, যিনি দেশের গৌরব। বিশ্ব যাকে সম্মান দেয়, নিজ দেশে তার সম্মান নেই। কালকে (শুক্রবার) তিনি একটি অনুষ্ঠানে (দ্য ডেইলি স্টার) অংশ গ্রহণ করতে গিয়েছেন দাওয়াত পেয়ে। সরকারের মন্ত্রীরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছেন। কী জন্যে ? তাদের নেতাকে খুশি করার জন্যে। সারা বিশ্বে যিনি নন্দিত, এক শ্রেণীর মানুষ তাকে নিন্দিত করার চেষ্টা করছে। এতে করে অধ্যাপক ইউনূসের সম্মান কমবে না। নৌ বাহিনীর সাবেক প্রধান রিয়ার এডমিরাল এমএ খানের স্ত্রী ইকবালবান্দ বানু’র বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সমালোচনা করে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাফিজউদ্দিন বলেন, রিয়ার এডমিরাল এমএ খান প্রেসিডেন্ট গোল্ডকাপ আয়োজন করতেন। সেই সুবাদে তাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। অত্যন্ত খ্যাতনামা একটি পরিবারের তিনি সন্তান, দেশপ্রেমিক একজন ব্যক্তি। তার স্ত্রী ইকবালবান্দ বানু তার সকল সম্পত্তি শিক্ষার জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছেন। সৌরভীসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন নিজদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি দান করে দিয়ে। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা।
মেজর হাফিজ বলেন, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হওয়া উচিত, যাদের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের কারণে মামলা হওয়া উচিত তারা সব স্কট ফ্রি। যারা দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা ধ্বংস করল, সোনালী ও বেসিক ব্যাংক থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করল, তাদেরকে তো গ্রেফতার করা হয় না। গ্রেফতারের হুমকি শুধু বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতাদের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, আজ দেশ অশান্ত কেন? দেশে গণতন্ত্র নেই। পুলিশ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে। জনগণকে ভোট কেন্দ্রে বাঁধা দিয়েছে।
সরকারকে বলব, দেশকে আর ধ্বংস করবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা অনেকদিন ক্ষমতায় থেকেছেন এবার গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে দিন। যদি গণতন্ত্র না থাকে প্রতিটি রাজনৈতিক দল ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবে। সেখানে জঙ্গিবাদ আস্তে আস্তে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। নইলে বাংলাদেশ কাশ্মিরের অবস্থা হবে।
আশঙ্কা প্রকাশ করে হাফিজ বলেন, অতীতে শেষ হয়ে যাওয়ার কোল্ড ওয়ার বিটুইন ইউএস অ্যান্ড রাশিয়া আবার শুরু হওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে। বৃহৎ প্রতিবেশী এবং আরেকটি উদীয়মান শক্তি চীন ধীরে ধীরে বিশ্ব বিভাজিত হতে যাচ্ছে। এ সময়ে বাংলাদেশে এমনটি পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা যা দেশকে আরো সুরক্ষিত করবে।
সংগঠনের উপদেষ্টা আশরাফ উদ্দিন বকুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আহমেদ আজম খান, সহতথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, তাঁতী দলের সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রধান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন