নজরুল আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ঐক্য গড়ে তোলার প্রত্যয়
স্টাফ রিপোর্টার : নজরুলের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলার প্রত্যয়ে পালিত হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক সংগঠন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকালে কবির মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ, দোয়া অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভা। বিকালে বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন এবং বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন নজরুলের গান, আলেখ্য অনুষ্ঠান এবং নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করে।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত কবিকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিবসের কর্মসূচি। সকাল সাতটায় কবি পরিবারের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার নাতনি খিলখিল কাজী। এরপর একে একে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল, জাতীয় জাদুঘর, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ব্যক্তি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সকাল ৭টায় কলাভবন অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ জমায়েত হন। সেখান থেকে তারা সকাল সোয়া ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির মাজারে গমন, পুষ্প অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন।
পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে ভিসি প্রফেসর ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় নজরুল গবেষক ও এমিরিটাস প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
কলা অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও বাংলা বিভাগের চেয়ারপার্সন প্রফেসর বেগম আকতার কামাল অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর সৌমিত্র শেখর।
আরেফিন সিদ্দিক কবি নজরুলের আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে জাতিকে নজরুল চর্চা ও অধ্যয়নের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কবি নজরুলের মানবতাবাদী চেতনা, সাম্য ও মুক্তবুদ্ধির ধারণায় নতুন প্রজন্মকে এর তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। নজরুল মানুষে-মানুষে ধর্মাধর্মে কোনো ভেদাভেদ দেখেননি উল্লেখ করে ভিসি বলেন, আজকে ধর্মকে ব্যবহার করে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা প্ররোচনা ও প্রণোদনা দিয়ে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এতে জড়িয়ে পড়ছে। তাই আজ শুধুমাত্র পরীক্ষা পাসের জন্য নজরুল পাঠ নয়- নজরুল চর্চা করতে হবে মূল্যবোধ আর দেশপ্রেমকে উজ্জীবিত করার জন্য।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সঙ্গীত বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ নজরুল সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদুল জামিয়ায় কুরআনখানি অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপুমনি এবং সাংগঠনিক সমপাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে সংগঠনটির একটি প্রতিনিধিদল সকালে কবির মাজারে পুষ্প অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন।
১৯৭৬ সালে ২৭ আগস্ট শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কবি। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগৎকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন