রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

কুরআন ও হাদীসের আলোকে নিয়তের গুরুত্ব

মু. সায়েম আহমাদ | প্রকাশের সময় : ২২ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০৭ এএম

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যা কিছু করি না কেন সকল কিছুই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। হোক সেটা ছোট কিংবা বড় কোন কাজ। প্রত্যেক কাজে নিয়ত বিশুদ্ধ হতে হবে। নিয়ত আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ইচ্ছা, স্পৃহা, মনের দৃঢ় সংকল্প। শরীয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের জন্য কোন কাজ বা আমলের দিকে মনোনিবেশ করাকে নিয়ত বলে। মূলত আমাদের প্রতিটি কাজের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির অর্জনে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা কি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিয়ত করি? প্রশ্ন থেকে যায়। আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজে বিশুদ্ধ নিয়ত থাকা জরুরি বা কাম্য। নামাজ, রোজা থেকে শুরু করে সকল কিছুতেই নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া জরুরি। যদি নিয়ত বিশুদ্ধ না থাকে তাহলে কাজটি যতই সুন্দর হোক না কেন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহর কাছে সেই কাজ গ্রহণযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয় না। নিয়ত সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, বলে দাও যেন প্রত্যেকেই নিজ নিজ নিয়ত অনুযায়ী কাজ করে। (বনী ইসরাইল-৮৪)
আমরা সাধারণত দুনিয়া লাভের আশায় নিয়ত করে থাকি কিন্তু পরকালে শান্তি লাভের আশায় নিয়ত করি না। এ ব্যাপারে পবিত্র আল কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, যে কেউ পরকালীন ফসল চায়, তার ফসল বৃদ্ধি করি। আর যে লোক দুনিয়ার ফসল চায় তাকে দুনিয়ায় হতে দান করি। কিন্তু পরকালের তার কিছুই প্রাপ্য হবে না। (সূরা আশ শুরা-২০)
অন্যত্র আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন বলেন, যে ব্যক্তি দুনিয়ার নিয়ত রাখবে, আমি তাকে ইহজগতে যতটুকু ইচ্ছা প্রদান করব। অতঃপর তার জন্য দোযখ নির্ধারণ করব। সে এতে দুর্দশাগ্রস্ত বিতাড়িত অবস্থায় প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আখেরাতের নিয়ত রাখবে এবং তার জন্য যেমন চেষ্টার প্রয়োজন তেমন চেষ্টাও করবে। যদি সে প্রকৃত মুমিন হয় এরূপ লোকদের চেষ্টা কবুল হবে। (সূরা বনী ইসরাইল-১৮-১৯)
পবিত্র আল কুরআন ছাড়াও হাদীস শরীফে নিয়তের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে। হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তোমাদের সৌন্দর্য ও সম্পদের দিকে দেখেন না; বরং তোমাদের অন্তকরণ ও কাজের দিকে লক্ষ্য করেন। (সহীহ মুসলিম)
অন্যত্র হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলেন, আমার বান্দা কোন গুনাহের কাজ করার নিয়ত করলে তা না করা পর্যন্ত তার জন্য কোন গুনাহ লিপিবদ্ধ করো না। তবে সে যদি গুনাহের কাজটি করে ফেলে, তাহলে কাজটির অনুপাতে তার গুনাহ লিখ। আর যদি আমার কারণে তা পরিত্যাগ করে তাহলে তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো। সে যদি কোন নেকীর কাজ করার জন্য ইচ্ছা বা নিয়ত করে কিন্তু এখনও তা করেনি তাহলে তার জন্য একটি নেকী লিপিবদ্ধ করো।আর যদি কাজটি সে করে তাহলে তার জন্য দশগুণ থেকে (আন্তরিকতা অনুপাতে) সাতশ গুণ পর্যন্ত নেকী লিপিবদ্ধ করো। (সহীহ বুখারী)
সুতরাং, উপরোক্ত কুরআন ও হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, নিয়তের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। নিয়ত ছাড়া কোন আমল গ্রহণযোগ্যতা পাবে না মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে। আমরা প্রতিটি কাজ নিয়তের উপর অবিচল থাকব এবং নিয়ত অনুসারে প্রত্যেকটি কাজ সম্পাদনা করব। আর এই জন্যই জীবনের প্রতিটি কাজে নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়াটা জরুরী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জুনাইদুল ইসলাম ১৩ মার্চ, ২০২২, ৯:১০ পিএম says : 0
নিয়ত কাকে বলে তা যদি আরবিতে দিতেন তা হলে খুব বেশি ভারো হতো আশাকরি আরবিতে নিয়তের সংজ্ঞাটা দিবেন
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন