সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গতকাল রোববার অনলাইনে সেচ মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেচ মৌসুমে সারাদেশ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও জ্বালানি বিভাগ নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করে গ্যাস ও জ্বালানি তেলের জোগান অব্যাহত রাখবে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেচ মৌসুমে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চাহিদামতো প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে সেচ মৌসুম শুরু হয়ে ৩১ মে পর্যন্ত চালু থাকে। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। গত সেচ মৌসুমে মে মাসে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৯৭৭ মেগাওয়াট। চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ১৪ হাজার মেগাওয়াট। গ্যাসের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা দৈনিক এক হাজার ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট, ফার্নেস অয়েলের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা ২২ হাজার মেট্রিন টন ও ডিজেলের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা হবে ৬ হাজার ১০০ টন।
সভায় জানানো হয়- চলতি সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গ্যাস, ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল সরবরাহ বৃদ্ধি করা। যেসব গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্বিঘ্নে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম, সেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস সরবরাহ করা। চলতি সেচ মৌসুমে জ্বালানি পরিবহনের ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রকার সমস্যা না হয় সে বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ ও বিপিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যোগাযোগ করে জ্বালানি পরিবহন নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (আরইবি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি), পেট্রোবাংলা ও বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসমূহে জ্বালানি তেল, গ্যাস এবং কয়লার সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা। সেচে পানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের লক্ষ্যে অলটারনেট ওয়েট অ্যান্ড ড্রাই পদ্ধতি জনপ্রিয় করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া সেচ পাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গ্রিড উপকেন্দ্র, সঞ্চালন লাইন, বিতরণ লাইন ও উপকেন্দ্রগুলোর সংরক্ষণ ও মেরামত কাজ জরুরি ভিত্তিতে সম্পন্ন করা। ওভারলোডেড সাবস্টেশন ও সঞ্চালন লাইন আপগ্রেডেশনের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে ন্যূনতম দুই মাসের উৎপাদন সক্ষমতা রাখার জন্য জ্বালানি তেলের মজুদ নিশ্চিত করা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এছাড়া রংপুর অঞ্চলের বিশেষ করে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলায় লোভোল্টেজ সমস্যা মোকাবিলার জন্য নেসকো ও পিজিসিবি প্রয়োজনে অন্যস্থান থেকে ক্যাপাসিটর ব্যাংক এনে এই জেলাগুলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার লোভোল্টেজ সমস্যা দূর করা। সেচ পাম্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ তদারকির জন্য মনিটরিং কমিটি গঠন এবং গঠিত মনিটরিং কমিটির কার্যক্রম জোরদার করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করা হয়।
ভার্চুয়াল এই আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সভায় বিদ্যুৎ সচিব মো. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এবিএম আব্দুল ফাত্তাহ ও পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন সংযুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন