করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের জন্য পুনর্বিন্যস্ত নতুন পাঠ্যসূচি প্রকাশ করেছে সরকার। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে গতকাল সোমবার এই পাঠ্যসূচি প্রকাশ করে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রিন্সিপাল ও প্রধান শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত এই পাঠ্যসূচি তৈরি করেছে।
এবার বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস কমানো হয়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। সেই সিলেবাস শেষ করতে শিক্ষার্থীদের তিন-চার মাস শ্রেণিকক্ষে পড়ানো হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, এ বছর এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের জন্য তিন থেকে চার মাসে প্রস্তুতি নেয়া যাবে এমন একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। যার ভিত্তিতে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে শিক্ষার্থীরা তিন-চারমাস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পাবেন।
অটো পাসের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন কোনরকম স্বাস্থ্য বিধি না মেনে আপনারা যেভাবে আন্দোলন করছেন এইক্ষেত্রে বরং করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সব রকমের স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। সুতরাং আপনাদের এই বিষয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রী আরো বলেন, ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা দেয়ার জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল কিন্তু সে সময় সংক্রমণের হার বেশি থাকায় সরকার তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অটো পাসের চিন্তা করেছে। কিন্তু ২০২১ সালে যারা পরীক্ষার্থী তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। তারাতো তেমন প্রস্তুতি নিতে পারেনি। সুতরাং তাদের অটো পাস দেয়া সম্ভব নয়। সংক্রমণের হার ও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তৈরি করা সংক্ষিপ্ত সিলেবাস নিয়ে সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে সভা হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস চূড়ান্ত করা হয়। এরপর সেই সিলেবাস আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করার লক্ষ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক-কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) মাসব্যাপী কর্মশালা করা হয়। সেখানে দেশের নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বাছাই করা জেলা শিক্ষা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নেয়া হয়। তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় অধ্যায়গুলো রেখে একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছে। সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে গত ১৭ জানুয়ারি তুলে দেয় এনসিটিবি।
জানা গেছে, মাধ্যমিকে সব বিভাগের মোট ৩২টি বিষয়ের ওপর কর্মশালা হয়। সে বিষয়গুলো গড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। সব বিষয়ে সমান বলা যাবে না। কারণ একেক বিষয়ে একের ধরনের পাঠ কমেছে।
এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে- হিসাববিজ্ঞান, কৃষি, চারুকারু, বাংলা ১ম পত্র, বাংলা ২য় পত্র, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, জীববিজ্ঞান, বৌদ্ধধর্ম, ব্যবসা উদ্যোগ, ক্যারিয়ার এডুকেশন, রসায়ন, খ্রিষ্টান ধর্ম, অর্থনীতি, ইংরেজি ১ম পত্র, ইংরেজি ২য় পত্র, ব্যাংকিং অ্যান্ড ফিন্যান্স, ভূগোল ও পরিবেশ, উচ্চতর গণিত, হিন্দু ধর্ম, ইতিহাস, গার্হস্থ্যবিজ্ঞান, আইসিটি, ইসলাম ও আদর্শ শিক্ষা, গণিত, শারীরিক শিক্ষা, পদার্থবিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান বিষয় রয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ হয়ে আগামী জুনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন