বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অবৈধ সংযোগের হোতা আফ্রাদ ও সাদ্দাম

জুরাইন ডিপিডিসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দম্ভোক্তি কমেনি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ডিপিডিসির জুরাইন অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দম্ভোক্তি কমেনি। দুর্নীতির খোলস উন্মোচনের পরেও দুর্নীতিবাজরা বলে বেড়াচ্ছেন, তাদের নাকি কিছুই হবে না। আর নির্বাহী প্রকৌশলী মেজবা উদ্দিন সিকদার কথায় কথায় গ্রাহকদের উপর চড়াও হওয়া অব্যাহত রেখেছেন। ভুক্তভোগি গ্রাহকরা তার কাছে গেলেই তিনি ক্ষীপ্ত হচ্ছেন। বলছেন, পত্রিকায় রিপোর্ট করান। কি হবে রিপোর্ট করলে?
এদিকে, অনুসন্ধানে জুরাইন অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির আরও ভয়াবহ তথ্য-প্রমান পাওয়া গেছে। ডিপিডিসি জুরাইন অফিসের আওতাভুক্ত শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলসহ পুরো এলাকা বেশ কিছু অবৈধ বাইপাস সংযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব বাইপাস সংযোগের হোতা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল ফারুক আফ্রাদ এবং সুপারভাইজার সাদ্দাম হোসেন। এরা লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলসহ বড় বড় দালানে মিটার ছাড়া অবৈধ বাইপাস সংযোগ দিয়ে রেখেছে।

সরেজমিনে ডিপিডিসি জুরাইন এলাকায় ঘুরে ভুক্তভোগিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মিটার রিডাররা মিটার না দেখে বিল তৈরী করায় কারও বিল বাড়ে, আবার কারও বিল জমা হয়। গ্রাহক বিষয়টি টের পেলে ডিপিডিসি জুরাইন অফিসে গিয়ে হাজির হন। অভিযোগ নিয়ে গেলেই সেখানে দালালরা ওঁত পেতে থাকে। দালালরা ঘুষের বিনিময়ে বিল ঠিক করে নিতে বলে। আর কেউ দালালদের উপেক্ষা করে নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে গেলেই কপালে জোটে দুর্ব্যবহার। যাচ্ছেতাই গালিগালাজে পারদর্শী নির্বাহী প্রকৌশলী মেজবা উদ্দিন সিকদার। ১৪৫২ নং পাটেরবাগের বাসিন্দা আমেনা বেগম ইনকিলাবকে বলেন, আমার বিল নিয়ে আমি নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে চার বার গিয়েছি। উনি আমাদের কথা শুনতেই চান না। উনি চান আমরা দালালের মাধ্যমে ফয়সালা করি। আমরা গ্রাহক, আমাদের কথা শুনেই উনি তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। যা একজন মহিলার সামনে উচ্চারণ করা যায় না তাই বলেন। আমেনা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, কোর্ট-প্যান্ট পড়লেই যে মানুষ ভদ্র হয় না তার প্রমান উনি নিজেই। একজন কর্মকর্তা হয়ে উনি এভাবে বিশ্রি ভাষা কিভাবে ব্যবহার করেন? এমন অভিযোগ ডিপিডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরও। একজন কর্মকর্তা উপহাস করে বলেন, সমস্যাটা হলো ওনার যোগ্যতায়। ‘ডিপ্লোমা’ বলেই ওনার ব্যবহার এরকম। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হলে আচরণ এরকম হতো না। মাজহারুল ইসলাম সাধু নামে এক গ্রাহক গত কয়েকদিন ধরেই ডিপিডিসি কার্যালয়ে ঘুরছেন। সুপাইভাইজার সাদ্দাম ৬৫ হাজার টাকা নিয়ে তার ভাড়াটিয়া আলীম মৃধার মিটারে আলী হোসেনের মিটার লাগিয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে তিনজনই বিপাকে আছেন। ওদিকে সাদ্দাম জরিমানা করার হুমকী দিয়ে রেখেছেন। সে কারণে আলীম মৃধা ও সাধু দুজনেই আছেন টেনশনে। মুরাদপুরের বাসিন্দা আমীর হোসেনের ভাড়াটিয়া আব্দুল জব্বার। উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল ফারুক আফ্রাদ বিল বকেয়া থাকায় গ্রাহককে বাদ দিয়ে বাড়িওয়ালা আলীম মৃধার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। জরিমানা করেছেন ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। সেই মামলা নিয়ে আলীম মৃধা এখন ঘুরছেন। গত রোববার নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে গিয়েছিলেন জামাল হোসেন। এর আগে জামালের বক্তব্য ইনকিলাবে প্রকাশিত হওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী জামালের কথা না শুনেই চড়াও হন। তার সাথে চরম দুর্ব্যবহার করে ক্ষীপ্ত হয়ে বলেন, লেখান, লেখান, সাংবাদিক দিয়ে লেখান। লিখলে কি হবে? উল্লেখ্য, এর আগের বার জামালকে তওই সম্মোধন করে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছিলেন, তুইও মরতে পারিস না? শফিউদ্দিন বাবু নামে এক গ্রাহক বলেন, আমি গিয়েছিলাম বিল কিস্তি করার জন্য। নির্বাহী প্রকৌশলী কিস্তি দিতে চান না। মামলা করার ভয় দেখান। কুদরত আলী বাজারের কাওছার নামে এক গ্রাহক জানান, তার বিল কিস্তি করার পর তিনি এক লাখ টাকা জমাও দিয়েছেন। এরপর সুপারভাইজার সাদ্দাম এসে আবার ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করে। টাকা না দেয়ায় সাদ্দাম সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এরপর ৮ লাখ টাকা পেনাল্টি বিল করে। কাওছারের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। থানায় জিডিও করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এভাবে কমপক্ষে ১২ জন গ্রাহকের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে পেনাল্টি মামলা দেয়া হয়েছে। এসব মামলার পেছনেও রয়েছে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল।

এদিকে, সুপারভাইজার সাদ্দাম শ্যামপুর শিল্পাঞ্চল ও পাটেরবাগ এলাকায় কয়েকটি বাইপাস সংযোগ দিয়ে রেখেছে। দনিয়া এলাকার পাটেরবাগের পাটোয়ারির বাড়িতে এরকম অবৈধ সংযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। নতুন এ কে স্কুলের পাশে বিশাল এক ভবনে মেইন লাইন থেকে একেবারে খোলা সংযোগ দিয়ে রেখেছেন সাদ্দাম। এজন্য তিনি ঘুষ হিসাবে নিয়েছেন ২ লাখ টাকা। একইভাবে কদমতলী স্টিল মিলস নামক কারখানায় অবৈধ সংযোগ দিয়েছেন সাদ্দাম। এজন্য কারখানার মালিকের কাছে থেকে নিয়েছেন ৮ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, হাইভোল্টেজের লাইন দিতে হলে নিচে রেলিং থাকতে হয়। সাপোর্ট থাকতে হয়। মেইন লাইন থেকে একেবারে খোলা সংযোগ দেয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু অবৈধ সংযোগের নিয়ম বলে কিছু নেই। যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাহী প্রকৌশলী এসব সংযোগের খবর জানলেও না জানার ভান করে থাকেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন