শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

না’গঞ্জে তামিমের সঙ্গে নিহত যশোরের ফজলে রাব্বী ও ধানমন্ডির তৌসিফ

প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

‘গুলশান-শোলাকিয়ায় জড়িত আরো ৭-৮ জন শনাক্ত : এদের গ্রেফতার সময়ের ব্যাপার মাত্র’
স্টাফ রিপোর্টার : তামিম চৌধুরীর সাথে নিহত অপর দুই সহযোগী জঙ্গির পরিচয় পাওয়া গেছে। এছাড়া আরো ৭/৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে, যারা গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলার সাথে জড়িত। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদের গ্রেফতার এখন সময়ের ব্যাপার। তামিম গুলশান হামলারও মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তিনি নিহত হওয়ায় নব্য জেএমবি’র নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ছে।
গতকাল (রবিবার) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব গঞ্জের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে তামিম চৌধুরীর সঙ্গে নিহত দুই জঙ্গিরও পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। এদের একজন যশোরের ফজলে রাব্বী, অন্যজন ঢাকার ধানমন্ডির বাসিন্দা তৌসিফ হোসেন। রাব্বী যশোর এমএম কলেজের এবং তৌসিফ মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিল।
তিনি বলেন, রাব্বীর পকেটে একটি জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। পরিচয়পত্র দেখে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। অপর জঙ্গি তৌসিফের বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফজলে রাব্বীর গ্রামের বাড়ি যশোরের নওয়াপাড়ায়। সে যশোর এমএম কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। গত ৫ এপ্রিল থেকে সে নিখোঁজ ছিল। থানায় জিডিও করেছিল তার পরিবার। তার বাবার নাম হাবিবুল্লাহ।
তিনি বলেন, গুলশান হামলাকারী আরো ৭/৮ শনাক্ত হওয়াদের সন্ধানে কাজ করা হচ্ছে। এদের খুঁজে বের করতে পারলে বেশ বড় ধরনের সফলতা আসবে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, শনিবার নারায়ণগঞ্জে দুই সহযোগীসহ তামিম নিহত হয়েছে। এখনও আরও ৭-৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। যারা মাস্টারমাইন্ড না হলেও বিভিন্ন ঘটনায় নানাভাবে ভূমিকা পালন করেছে। তাদের খুঁজে বের করা গেলে অন্যান্য ঘটনার তদন্তেও সাফল্য আসবে। বিশেষ করে কল্যাণপুর, গুলশানের ঘটনায় জড়িত আটককৃতদের দেয়া তথ্য থেকে অনেকের পরিচয় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নূরুল ইসলাম মারজান একজন। সে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। আরবি ও ইংরেজিতে সমান পারদর্শী সে। অল্প বয়সে সে এলাকার মসজিদে ইমামতিও করেছে। নিজের মধ্যে বিশেষ পারদর্শিতা থাকায় অল্প বয়সেই নেতৃত্ব পেয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, তামিম চৌধুরী মারা গেলেও তার সঙ্গে জড়িত ও সহযোগীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আমরা আশাবাদী দেশের মানুষ জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামছে, রুখে দাঁড়িয়েছে। নব্য জেএমবি যেভাবে গড়ে উঠেছে সেভাবেই শেষ হয়ে যাবে। তামিম নব্য জেএমবির সমন্বয়ক ছিলেন। নব্য জেএমবি’র কমপক্ষে চারজন সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ে নিহত হয়। এ ঘটনায় নব্য জেএমবি একেবারে স্তিমিত না হলেও দুর্বল হয়ে পড়বে।
অপর জঙ্গির নাম তৌসিফ হোসেন। সে ঢাকার ধানমন্ডির ১৫ নম্বর সড়কের বাসিন্দা। তার বাবার নাম ডা. আজমল হোসেন। র‌্যাবের দেয়া সর্বশেষ নিখোঁজ তালিকায় তৌসিফের নাম ৭ নম্বরে ছিল। গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে সে নিখোঁজ ছিল। এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানায় ওই দিনই একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি নম্বর ১৪৩) করা হয়েছিলো। ম্যাপললিফ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল করা তৌসিফ মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলো।
উল্লেখ্য, ‘অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭’ নাম দিয়ে গত শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ার কবরস্থান এলাকার একটি বাড়ির তিনতলার ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট। এই অভিযানে নিহত হয়েছেন তিনজন। তাঁদের একজন কানাডাপ্রবাসী তামিম চৌধুরী (৩০)। অপর দু’জনকে মানিক ও ইকবাল বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছিল পুলিশ।
সাম্প্রতিক হামলায় জড়িত অন্য জঙ্গিদের ধরতে কী করা হচ্ছে, জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়া হামলায় জড়িত মেজর (অব.) জিয়া ও মারজানসহ আরও সাত-আটজন জড়িত বলে তথ্য পাওয়া গেছে। তারা আরও জঙ্গি তৎপরতা চালানোর ষড়যন্ত্র করছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
নিহত জঙ্গিদের মাথায় বুলেটের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে
নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, পাইকপাড়ায় অপারেশন হিট স্ট্রং টোয়েন্টি সেভেনে তিন জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। রোববার দুপুরে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছাদুজ্জামান এ তথ্য জানান। আছাদুজ্জামান বলেন, মামলায় নিহত জঙ্গি তামিম ও তার অপর দুই সহযোগীকে আসামি করে এ মামলা করা হয়। মামলা নম্বর ৫২। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পক্ষে তিনি এই মামলা দায়ের করেন।
তিন জঙ্গির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন
পাইকপাড়ায় অপারেশন হিট স্ট্রং টোয়েন্টি সেভেনে নিহত হওয়া তিন জঙ্গির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়।
ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়নাতদন্ত শুরু করে ১টা ০৫ মিনিটে শেষ করা হয়। ময়নাতদন্তে নিহত জঙ্গিদের মাথায় বুলেটের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। নিহত জঙ্গি তামিম ছাড়া তার অপর দুই সহযোগীর শরীরে বোমা ব্রাস্টের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তিন জঙ্গির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের জন্য থাই মাসল ও চুল সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি তারা শক্তিবর্ধক ওষুধ বা মাদক সেবন করেছিলেন কিনা তা জানার জন্য ভিসেরা, রক্ত ও ইউরিন সংগ্রহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
৩ জঙ্গি নিহত নিহত বাকি দুই জঙ্গিও শনাক্ত
নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ায় পুলিশের অভিযানে নিহত অপর দুই জঙ্গিকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- যশোরের ফজলে রাব্বী ও রাজধানী ঢাকার ধানম-ির বাসিন্দা তাওসিফ হোসেন। শনিবার সকালে অপারেশন হিট স্ট্রং-২৭ নামের অভিযানে এই দু’জনসহ ৩ জঙ্গি নিহত হন। অভিযানের পরপরই পুলিশ গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার মূলহোতা তামিম আহমেদ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত করে।
তামিম চৌধুরীর বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নে। তার বাবার নাম শফি আহমদ। তিনি জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পর শফি আহমদ সপরিবারে কানাডায় চলে যান। তার পরিবারের সদস্যরা কানাডাতে বসবাস করেন। ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর তামিম দেশে এসে নিউ জেএমবির নেতৃত্ব নেন।
অভিযানের পর ব্রিফিংয়ে আইজিপি একেএম শহীদুল হক জানান, অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজনের সঙ্গে নিউ জেএমবির সামরিক কমান্ডার তামিম আহমেদ চৌধুরীর চেহারার মিল রয়েছে। তাকে ধরতে পুলিশ ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল।
পরে তাৎক্ষণিকভাবে নিহত বাকি দু’জনের নাম বলা হয়েছিল- মানিক (৩৫) ও ইকবাল (২৫)। এদের মধ্যে ইকবাল রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানের সময় পালিয়ে যায়। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মো. ইউসুফ আলী সে সময় আরো জানান, ডিএনএ পরীক্ষা, আঙুলের ছাপ ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে তাদের পরিচয় পুরোপুরি নিশ্চিত করা হবে।
এই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের (সিটি) প্রধান মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একজনের পকেটে থাকা পরিচয়পত্র দেখে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি যশোরের কিসমত নওয়াপাড়ার ফজলে রাব্বী। তিনি যশোর এমএম কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
গত ৫ এপ্রিল থেকে ফজলে রাব্বী নিখোঁজ। ৭ এপ্রিল পরিবারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে থানায় জিডি করা হয়। রাব্বীর বাবা হাবিবুল্লাহ স্থানীয় একটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। মনিরুল ইসলাম বলেন, অপর জঙ্গি তাওসিফ হোসেনের বিষয়ে এখনও শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গোয়েন্দা সূত্রের খবর, তৌসিফ ঢাকার ধানম-ির ১৫ নম্বর (নতুন) সড়কের বাসিন্দা ডা. আজমল হোসেনের ছেলে। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুরে।
র‌্যাবের সর্বশেষ নিখোঁজ তালিকায় তাওসিফের নাম ৭ নম্বরে ছিল। তিনি গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ ছিলেন। এ বিষয়ে ধানম-ি থানায় ওই দিনই একটি জিডিও (নং ১৪৩) দায়ের করা হয়েছিল। ম্যাপললিফ নামে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল শেষ করে তাওসিফ মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের একাধিক সাংগঠনিক নাম রয়েছে। মানিক ও ইকবাল এদের সাংগঠনিক নাম ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন