সৃষ্টিকুলের সেরা জীব হিসেবে মানুষের রয়েছে বিশেষ খ্যাতি। কিন্তু মানুষ অন্যায়,অনাচার-পাপাচার দ্বারা নিজের সাদা জীবনটাকে কয়লার মতো কালো বানিয়ে ফেলেছে। পাপের পথে দিবানিশি চলতে চলতে জাহান্নামের পথে এক পা অগ্রিম বরাদ্দ রেখে দিয়েছে। শ্রেষ্ঠ জীব থেকে অতি নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হয়েছে সে। এতদ্বসত্তে¡ও মহান আল্লাহ মানুষকে সুযোগ দিলেন কয়লা ধুয়ে পরিষ্কার করার, জাহান্নামে বরাদ্দ রাখা আসন বাতিল করার। পাঠিয়েছেন তিনি নবী-রাসূল। মনোনীত ধর্ম হিসেবে নির্বাচন করেছেন ইসলামকে । ইসলাম সর্বদা মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির পথ দেখায়। আর ইসলামে রয়েছে এমন কিছু আমল,যা মানুষকে খুব সহজে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়।
১. গীবতমুক্ত জীবন-যাপন করা : প্রিয়নবী সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার (মুসলিম)ভাইয়ের সমভ্রম রক্ষা করে, কিয়ামতের দিবসে আল্লাহ তায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। ( তিরমিজি:১৯৩১)
২. দৈনিক ৩৬০বার তাসবীহ-তাহলীল,তাকবীর আদায় করা:রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক আদম সন্তানকেই ৩৬০ টি গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করেছেন।(আর প্রতিটি গ্রন্থির কিছু সদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ওই সংখ্যা পরিমাণ ‘আল্লহু আকবার’ বললো, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললো, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বললো, ‘সুবহানাল্লাহ’ বললো, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বললো, মানুষের চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা অথবা একটি হাড় সরালো , ভালো কাজের আদেশ করলো, কিংবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করলো, ( এবং সব মিলে ৩৬০ সখ্যক পুণ্যময় কাজ করলো),সে ওই দিন এমতাবস্থায় সন্ধ্যা যাপন করলো,যে সে নিজেকে জাহান্নাম থেকে দূরে করে নিলো।’ (সহিহ মুসলিম: ২২২০)
৩.চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার সহিত সালাত আদায় করা: রাসূলুল্লাহ সা.বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একাধারে চল্লিশ দিন তাকবীরে উলার (প্রথম তাকবীর) সাথে জামাতে নামায আদায় করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে দুটি জিনিস থেকে মুক্তি দিবেন। ১. জাহান্নাম হতে মুক্তি ২. মুনাফিকি হতে মুক্তি। (তিরমিজি:২৪১)। ৪.বেশি বেশি দান করা : আদী ইবনে হাতেম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী কারিম সা. কে বলতে শুনেছি, “তোমরা জাহান্নাম হতে বাঁচো; যদিও এক টুকরো খেজুর সদকা করে হয়”। (সহিহ বুখারি:১৪১৭)
৫.জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চেয়ে দোয়া করা: আল্লাহর রাসূল সা. বলেছেন,যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহ তায়ালার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করে, জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যে ব্যক্তি ৩ বার আল্লাহর কাছে জাহান্নাম হতে মুক্তি চায়, জাহান্নাম তখন আল্লাহ তায়ালার নিকট বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। (তিরমিজি:২৫৭২)। ৬.যোহরের ফরয নামাযের পূর্বে চার এবং পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করা: রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি যোহরের আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সালাত পড়বে , মহান আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন’।(ইবনে মাজাহ: ১১৬০)। ৭.মানুষের সাথে মধুময় আচরণ: আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেবো না কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি( জনপ্রিয়) সহজ-সরল,নম্রভাষী ও সদাচারী। (তিরমিজি:২৪৮৮)
৮.চোখকে গুনাহ থেকে হেফাজত করা: ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,আমি রাসূলুল্লাহ -কে বলতে শুনেছি, জাহান্নামের আগুন দুটি চোখকে স্পর্শ করবে না। ১.আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে। ২.আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে রাত পার করে। (তিরমিজি:১৬৩৯)। ৯.ফরজ রোজার পাশাপাশি বেশি বেশি নফল রোজা রাখা: প্রিয়নবী সা. বলেন, “রোজা (জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার জন্য) ঢালস্বরুপ”। (সহিহ বুখারি :১৮৯৪)। রাসূলুল্লাহ সা. আরো বলেন,যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন রোজা রাখবে,আল্লাহ তায়ালা ওই একদিনের বিনিময়ে তার থেকে জাহান্নামকে ৭০বছর(পরিমাণ পথ ) দূরে রাখবেন । (বুখারি :২৮৪০)
১০.কন্যাসন্তানদের ভালোভাবে লালন-পালন করা : হজরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ভিখারিণী দু’টি কন্যা সঙ্গে করে আমার নিকট এসে কিছু ভিক্ষা চাইলো। আমার নিকট একটি খেজুর ছাড়া আর কিছু ছিলো না। আমি তাকে তা দিয়ে দিলাম। খেজুরটি সে দু’ভাগ করে কন্যা দু’টিকে দিয়ে দিলো। তা থেকে সে নিজে কিছুই খেলো না। এরপর সে ওঠে বের হয়ে গেলো।
তারপর নবীজি আমাদের কাছে এলে তার নিকট ওই ঘটনা শোনালাম। ঘটনা শোনে তিনি বললেন, যে ব্যক্তি একাধিক কন্যা নিয়ে সংকটাপন্ন হবে,এবং সে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। সে কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের আগুন হতে অন্তরাল (পর্দা) হবে। (সহিহ বুখারী: ১৪১৮)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন