শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জেএমআই থেকে ১০ কোটি ৪০ লাখ পিস সিরিঞ্জ কিনছে স্বাস্থ্য অধিদফতর

প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইপিএস বেড়েছে ২ টাকা ০৮ পয়সা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২১, ৮:১১ পিএম

করোনার টিকা দেয়ার জন্য ব্যবহৃত অটো ডিজেবল সিরিঞ্জ এক ধরণের বিশেষায়িত পণ্য, যা বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার পিকিউএস সনদ নিয়ে বিশ্বের অল্প সংখ্যক কোম্পানি উৎপাদন করে থাকে। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপি এ পণ্যটির সরবরাহ সংকট চলছে। দেশের একমাত্র অটো ডিজেবল (এডি) সিরিঞ্জ তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেড।

রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে কোভিড-১৯ প্রতিরোধক ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতর তিন কোটি ৩০ লাখ পিস অটো ডিজেবল সিরিঞ্জের ক্রয়াদেশ দিয়েছে জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেডকে। পাশাপাশি সরকারের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) জন্য সাত কোটি ১০ লাখ পিস সিরিঞ্জের ক্রয়াদেশ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির ২২০তম পরিচালনা পরিষদের সভায় এ বিষয়টি জানানো হয়।

এ সময় আরও জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের দুইটি প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে ২৩ কোটি ও ৩০ কোটি পিস বিভিন্ন ধরণের সিরিঞ্জ কেনার আগ্রহপত্র দিয়েছে। এছাড়াও, বিভিন্ন আকারের এডি সিরিঞ্জ ২০২০ এবং ২০২১ সালে কোন মাসে কি পরিমাণ সরবরাহ করা সম্ভব তা জানতে চেয়ে জেএমআইকে চিঠি দিয়েছে শিশুদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা জাতিসংঘের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ইউনিসেফ।

সভায় জানানো হয়, ২০১২ সাল থেকে জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস-এর রয়েছে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার সনদ; যার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পণ্য রফতানি করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। আর এ বছরই করোনার টিকা কার্যক্রমে ব্যবহৃত এডি সিরিঞ্জ, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাজারজাতের অনুমতির পূর্বশর্ত (সিই০০৬৮ সনদ) নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে দিনে ১২ লাখ সিরিঞ্জ বানাতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। সে হিসাবে মাসে তিন কোটি ৬০ লাখ পিস।

সভায় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক সিআইপি জানান, বিগত বছরগুলোতে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হয়েছে। করোনার এই দুঃসময়ে একদিনের জন্যও আমরা কারখানা বন্ধ করিনি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম মেনে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, গুণগত মানের পণ্য উৎপাদনের স্বীকৃতি আমরা এরইমধ্যে পাচ্ছি। ২০০৭ সাল থেকে সরকারের টিকাদান কর্মসূচিতে আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে সিরিঞ্জ সরবরাহ করে আসছি। যার ধারাবাহিকতায় সরকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কর্মসূচিতে আমাদের ওপর আস্থা রেখেছে। এরইমধ্যে আমাদেরকে ৩ কোটি ৩০ লাখ সিরিঞ্জ সরবরাহের আদেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনার টিকা কার্যক্রম হাতে নেয়ায়, নানা দেশ থেকে সিরিঞ্জ কেনার আগ্রহপত্র পাচ্ছি আমরা। এরইমধ্যে ইন্দোনেশিয়াতে দেড় কোটি সিরিঞ্জ রফতানি করেছি আমরা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও ইউনিসেফও আমাদের কাছ থেকে সিরিঞ্জ নিতে চাচ্ছে। তাছাড়া আমরা নেপালসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করছি। তবে, একটি বিষয় আমি আপনাদের বলতে চাই, আমরা রফতানির বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দিবো। তবে, দেশের চাহিদা পূরণের বিষয়টি সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে।

সভায় প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাবেদ ইকবাল পাঠান বলেন, দেশে শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের স্বীকৃতি হিসেবে গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশান এন্ড ইমুনাইজেশান (জিএভিআই) প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করেছে। আমরা সরকারের এই সফলতার অংশীদার হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিগত ১৩ বছর ধরে দেশে আমদানি বিকল্প অটো ডিজেবল (এডি) সিরিঞ্জ উৎপাদন করে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করে আসছি। করোনা ভাইরাসপ্রতিরোধী টিকাদানের ক্ষেত্রেও আমরা দেশের স্বার্থে কাজ করে যেতে চাই।

এ সময় বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া কার্যাদেশ অনুযায়ী পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে প্রতিষ্ঠানের সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বানও জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান।

সভায় জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেডের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ তারেক হোসেন খান জানান, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) শেষে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাড়িয়েছে ২ টাকা ৮৮ পয়সা; যা গেল অর্থবছরে একই সময় ছিলো ২ টাকা ৫৯ পয়সা। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় ছিলো শূণ্য দশমিক ৮০ পয়সা; যার ফলে তিন মাসের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বেড়েছে ২ টাকা ০৮ পয়সা।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক আব্দুল হক, এটিএম সেরাজুল সালেকিন চৌধুরী এবং মুস্তাফিজুর রহমান, জেএমআই গ্রæপের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম এবং জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা রনজিৎ চক্রবর্তী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন